গোল্ডেন এ-প্লাসের স্বপ্ন ছিল, এখন পাস মার্কস পাব কি না?
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আসসালামু আলাইকুম। আসলে আমরা যারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তাদের পড়া তো দূরের কথা; চিন্তা এবং আতঙ্কে আমাদের প্রতিটা সময় পার করতে হচ্ছে। কোনো কোনো সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরীক্ষার বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ আমাদের জীবন্ত লাশে পরিণত করে দিচ্ছে।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আপনি পরীক্ষা নিবেন এটাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যখন এই করোনা ভাইরাসের ভেতর পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে তাতে আমাদের ঘোর আপত্তি আছে। আপনি যদি করোনার ভেতরে পরীক্ষা নেন তাহলে-
১. যেসব এলাকায় বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছে তারা কিভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবে? যেখানে তারা তিনবেলা খেতেই পারছে না?
২. আমি এমন পরীক্ষার্থীকেও দেখেছি যার বাবা দিনমজুর। যে সন্তানকে টানা দুইবছর হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ছেলে-মেয়েকে পড়িয়েছে অথচ এই করোনায় তার কাজ না থাকায় পরীক্ষার্থীও দুমুঠো খাবার জোগাড় করার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। সে এখন কি করে পরীক্ষা দিবে?
৩. যেসব মধ্যবিত্ত পরিবার ঢাকায় থাকত তারা কিন্তু গ্রামে চলে এসেছে। এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন তারা। এখন কিভাবে ঢাকায় অথবা শহুরে এলাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিবে?
৪. তেরো লাখ পরীক্ষার্থীর ভেতরে প্রতিদিন কি একজনও করোনায় আক্রান্ত হবে না? আর যদি আক্রান্ত হয় কেউ তাহলে দায়ভার কে নিবে?
৫। আক্রান্ত পরীক্ষার্থীর কি হবে? ১২ বছরের ক্যারিয়ার কি নষ্ট হয়ে যাবে?
৬. আর এই পাঁচমাসে আমরা মানসিকভাবে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। পড়াশোনা কিছুই মনে নাই। তাহলে আমরা এই করোনার ভেতর কিভাবে পরীক্ষা দিব? যেখানে আমাদের গোল্ডেন প্লাস স্বপ্ন এখন পাস মার্কস পাব কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ।
৭. আমরা ১১ লক্ষ প্রায় মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। আমরা ইচ্ছা করলেও হয়তো অতটা সতর্ক থাকতে পারি না। কারণ আমাদের খাবার জোগাড় করতে হয়। এখন এই দুঃসময়ে আমরা কি করব!
সবশেষে বলি, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আপনি পরীক্ষা নিলেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই কিন্তু উপরে বর্ণিত এই বিষয়গুলো সামনে রেখে এগোবেন বলে আশা রাখি। আর গণপাশ বা অটোপাশ কোনো শিক্ষার্থী পেতে চায় না। তবুও পরিস্থিতি মেনে নিতে আমরা বাধ্য। তবে প্লিজ আমাদের জীবন নিয়ে খেলবেন না। আমাদের জীবনই আগে।
সবশেষে বলি, ‘জীবন বাঁচাও আগে, এইচএসসি হোক পরে’।
লেখক: বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী-২০২০