অনলাইন গেমসের বিষবাষ্পে জর্জরিত তরুণরা
- মোঃ রাইয়ান জিহাদ
- প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২০, ০১:৪১ PM , আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:০২ PM
‘ফ্রি ফায়ার এবং পাবজি’ বর্তমানে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন গেম। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়েছে এই গেমের জনপ্রিয়তা। মোবাইল এবং কম্পিউটার দুটোতেই খেলা যায় এই গেম। তবে উপমহাদেশে এই গেমের কম্পিউটার ভার্সনের থেকে মোবাইল ভার্সনটিই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা এবং হাতের নাগালে মধ্যে থাকা ইন্টারনেটের কারণে এই গেমটির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। বর্তমানে এই গেমে অত্যাধিক আসক্ত হয়ে পড়েছে শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণিরাও।
২০১৬ সালের মার্চে গেমটি স্টিমের আগাম অ্যাক্সেস বিটা প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাইক্রোসফট উইন্ডোজের জন্য রিলিজ করা হয়। আর ডিসেম্বর ২০ তারিখ সম্পূর্ণ রিলিজ হয়। সেই একই মাসে, গেমটি মাইক্রোসফট স্টুডিওস কর্তৃক এক্সবক্স ওয়ানের জন্য রিলিজ হয় এর এক্সবক্স গেম প্রিভিউ কার্যক্রমের অধীনে।
কয়েক মাস পরে, চীনে টেনসেন্ট গেমস কর্তৃক স্থানীয়ভাবে রিলিজ করা হয়, যেখান অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএসের জন্য গেমটির উপর ভিত্তি করে দুটি মোবাইল সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সমস্ত প্ল্যাটফর্মে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বিক্রির মাধ্যমে এটি সর্বকালের সেরা বিক্রিত গেমগুলোর অন্যতম। এছাড়াও উইন্ডোজ সংস্করণটি স্টিমের একই সময়ে খেলা গেইমের খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনুযায়ী শীর্ষস্থানে রয়েছে, যা এই প্ল্যাটফর্মের সর্বকালের সর্বোচ্চ।
ফ্রি ফায়ার একটি মোবাইল যুদ্ধের গেম, ভিয়েতনাম ১১১ডট স্টুডিও দ্বারা বিকাশিত এবং প্রকাশিত। গেমটি বেটা ২০ নভেম্বর ২০১৭ এ প্রকাশিত হয়েছিল এবং ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএসের জন্য পুরোপুরি প্রকাশ হয়েছিল। ফ্রিফায়ার অক্টোবর২০১৮এ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ৭.৫ মিলিয়ন ডাউনলোড পৌঁছেছে।
যা ২০১৮ সালের সর্বাধিক ডাউনলোড হওয়া অ্যান্ড্রয়েড গেমগুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে জনপ্রিয়তার কারণে। গেমটি ‘সেরা জনপ্রিয় ভোট গেম’র জন্য পুরস্কার পেয়েছে ২০১৮ এ গুগল প্লে স্টোর দ্বারা, পেশাদার প্রতিযোগিতা তৈরি ছাড়াও। এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত, ফ্রি ফায়ারের ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে।
এ ধরনের আসক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব গেমে আসক্তির কারণে কিশোররা পারিবারিক, সামাজিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। খেলার এক পর্যায়ে এসে তারা ভায়োলেন্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি এটি আলোচিত আরেক ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
কেবল শারীরিক ক্ষতির কারণই নয় এই দুটি গেম। সেই সাথে মানসিক রোগের কারণও হতে পারে এই গেমটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এক গবেষণার পর জানিয়েছে ভিডিও গেমে আসক্তি এক ধরণের মানসিক রোগ। ভিডিও গেমগুলো একজন খেলোয়াড়ের ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শারীরিক মানসিক রোগের সাথে সাথে পাবজি গেমটি একজন শিশু কিংবা কিশোরে-কিশোরীর উপর সামাজিক মূল্যবোধের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গেমটি যেহেতু একটি জায়গাতেই আটকে থেকে খেলতে হয় সেহেতু এই গেম খেলা মানুষটি সামাজিকভাবে খুব বেশি সংযুক্ত থাকতে পারে না। আর এই কারণে সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সমাজের আচার ব্যবহার থেকেও ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে হয় সেই মানুষটিকে। সর্বোপরি একটা সময় একাকীত্ব বরণ করতে হয় তাদেরকে।
এই দুটি গেম খেলার জন্য তাদের পরিবারের আনেক সমেস্যা পরতে হয়। কারণ তারা এই দুটি গেমের সরঞ্জাম কেণার জন্য কয়েক দিন পর পর তারা পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়। তাদের পরিবার তাদেরকে টাকা দিতে না চাইলে বিভিন্ন ছলছাতরি করে তারা টাকা নিয়ে থাকে। এদুটি গেম যেন নেশার মতো।
এই গেমটি অতিরিক্ত খেলার কারণে চোখের সমস্যাও হতে পারে। আর সেই সাথে দেখা দেয় ঘুমের ঘাটতিও। কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ক্ষতি হতে পারে। আর চোখের সমস্যার সাথে সাথে ঘুমেরও ঘাটতিতে পড়ে এই গেম খেলা মানুষরা। তাই গেমের আসক্তি থেকে বের হয়ে সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করার চেষ্টা করতে হবে, না হয় গেমের নেশার বিষবাষ্প জীবনকে বিষাক্ত করে দিবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, মোল্লাকান্দি লালমিয়া পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা