সৌদি আরব ও বাংলাদেশে ঈদ সংস্কৃতির ১০ পার্থক্য
এ বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা সৌদি আরবেই উদযাপন করছি। এর আগেও কিছুকাল সৌদি সংস্কৃতি কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। সে সুবাদে সৌদি আরব ও বাংলাদেশে ঈদ সংস্কৃতিতে আমার কাছে যে পার্থক্যগুলো পরিলক্ষিত হয়েছে তার ১০টি নিচে উল্লেখ করছি-
১) সৌদি আরবে ঈদের নামাজ সূর্য উদয়ের ১৫-২০ মিনিট পরেই শুরু হয়ে যায় এবং সরকারীভাবে অঞ্চল ভিত্তিক এই সময় নির্ধারণ করা থাকে। সকল মসজিদ একই সময়ে জামাত আরম্ভ হয়। বৃহত্তর মক্কা অঞ্চলের সময়ের আলোকে এবার কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে আমরা ঈদের নামাজ পড়েছি ৬:০৮ মিনিটে। বাংলাদেশে ঈদের জামাত একটু দেরীতে হয় এবং জামাতের সময়ও বিভিন্ন রকম।
২) ফজর থেকেই সকল মসজিদের মাইক থেকে তাকবীর ধ্বনি (আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু …) দিতে থাকে, যা ঈদের জামাত শুরুর আগ পর্যন্ত চলতে থাকে। এ সুন্নাহটি আমাদের দেশে দেখা যায় না।
৩) সৌদিতে ঈদের নামাজের আগে ঈমাম কিংবা বিশিষ্টজন কর্তৃক কোন ধরনের আলোচনা বা বয়ান করা হয় না, যা বলা দরকার সালাত পরবর্তী খুৎবাতে বলা হয়। অর্থাৎ সালাত ও খুৎবার বাইরে কোন বাহুল্য নেই। এখানে ঈদ জামাতে কোন প্রকার টাকা কালেকশন করারও প্রয়োজন হয় না, আর এ দুটোই বাংলাদেশে আছে।
৪) এখানে ঈদ উপলক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী সেমাই-নাস্তা জাতীয় খাবারের প্রচলন নেই। তবে রয়েছে আরবীয় ঐতিহ্যবাহী নানান খাবার। তাছাড়া ঈদের নামাজ পরবর্তী ফ্রিতে উন্নত চকলেট জাতীয় মিষ্টান্ন বিতরণ করতে দেখা যায়।
৫) ঈদ উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানাতে এখানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরিভাষা “কুল্লু আ’ম ও আনতুম বিখাইর” (كل عام وأنتم بخير) এবং “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ও মিন কুম সালিহাল আ’মাল”। বাংলাদেশে বেশি ব্যবহৃত হয় “ঈদ মোবারক”, যদিও আরবী পরিভাষাগুলো ইদানিং বাংলাদেশে জনপ্রিয় হচ্ছে।
৬) ঈদ উপলক্ষে গনপরিবহনের ভাড়া কিংবা দ্রব্যমুল্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কোন প্রবণতা এখানে লক্ষ্য করিনি। বাংলাদেশে এটি একটি বড় সমস্যা।
৭) ঈদুল আজহায় বাংলাদেশের মতো প্রত্যেক বাড়ীর সমানে কুরবানীর পশু জবেহ করা হয় না; বরং প্রত্যেক এলাকায় সরকার নির্ধারিত Slaughter House রয়েছে। সকলকে সেখানেই পশু জবেহ ও প্রসেসিং করতে হয়। এজন্য ঈদুল আজহা পরবর্তী পরিবেশ দূষণের প্রশ্ন নেই।
৮) ঈদ পুনর্মিলনী জিনিসটার কোন আলামত সৌদিতে দেখলাম না। বাংলাদেশে আমরা সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা করে থাকি। এর সাথে সুন্নাহ’র কোন যোগসূত্র নেই।
৯) রমজানে সৌদিতে ব্যাপকহারে ইফতার বিতরণ করতে দেখা যায়, তবে ইফতার প্রোগ্রাম/পার্টি নামে কোন আলোচনা/ওয়াজ অনুষ্ঠান এখানে দেখা যায় না। কখনো ইফতার উপলক্ষ্যে একত্রিত হলে ইফতার পূর্ব সময়টা সবাই ব্যক্তি পর্যায়ে জিকির ও দু’য়া কালামে ব্যস্ত থাকে, যা সুন্নাহ ভিত্তিক। বাংলাদেশের ইফতার প্রোগ্রামগুলোর সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত থাকে।
১০) বাংলাদেশে ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ নাটক সিনেমা তৈরীর হিড়িক পড়ে যায় (যার অধিকাংশ অপ-সংস্কৃতিতে ভরপুর)। অথচ এগুলোর সাথে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ঈদ সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক নেই। এখানে সোশ্যাল গেদারিং ও শিক্ষামূলক টাইপের কিছু প্রোগ্রাম কদাচিৎ দেখা যায়।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়