আমাদের সমাজব্যবস্থা কি দুর্নীতিবাজ তৈরি করে?
বাবা-মা অসৎ হলে সন্তান অসৎ হওয়া স্বাভাবিক । তদ্রূপ অসৎ পথে ক্ষমতায় যাওয়া সরকারের কর্মকর্তা - কর্মচারীদের অসৎ হওয়াও স্বাভাবিক। সেখানে দুর্নীতি হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষায় ব্যবহারিক খাতা স্বাক্ষর করার জন্য দিতে হয় ২০০-৫০০ টাকা। শ্রেণী শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে নাম্বার কম দেয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। এমন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কখনোই ভালো মানুষ তৈরি করেনি, করবে না। বরং পরিবার, সমাজ আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলে চৌকশ দুর্নীতিবাজ তৈরি করছে।।
এখানে বিসিএস দিয়ে চাকরি নিয়ে বড় বড় দুর্নীতিবাজ তৈরি হয় (সবাই না)। যেখানে নীতি নৈতিকতার বালাই নেই সেখানে এমন অসাধু কর্মকর্তাদের রয়েছে শুধু অর্থের লোভ।
সমাজের প্রতিটি স্তরে নীতিহীনতার এমন নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাওয়া খুবই হতাশাজনক। খাদ্য আর ওষুধে ভেজাল থেকে শুরু করে পাসপোর্ট অফিস আর বিআরটিএতে এককালে থাকা দালালের দৌরাত্ম্য, তোষামোদি করে বৈধ-অবৈধ সুবিধা আদায়, টাকার বিনিময়ে টক শোতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাজা থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার, হলমার্ক, রিজেন্ট, জেকেজি, পর্দা, বালিশ, জুম, বঁটি কেলেঙ্কারি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, নীতিহীনতার আসলে কোনো বর্ণ, গোত্র, ধর্ম, শ্রেণি, পেশা নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি একটি সর্বজনীন ধারণা।
আমরা যাদের জাতির বিবেক মনে করি সেই শিক্ষক কিংবা বুদ্ধিজীবি, তারা যখন জাতির সামনে বড় গলায় মিথ্যাচার করে তখনই বুঝা যায় আমাদের সমাজের কতটুকু অধঃপতন হয়েছে। প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে। কিন্তু কত সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়? এটা বড় প্রশ্ন।
আমাদের সমাজে শিক্ষাকে মূল্যায়ন করা হয় জিপিএ ৫ আর বিসিএস ক্যাডার দ্বারা। এরা এক সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অফিস গুলোতে দায়িত্ব পালন করে। আর সেখানে দেখা যায় দুর্নীতির মহামারি। তাহলে কি তাদের নৈতিক শিক্ষার অভাব রয়েছে?
সরকার কখনো কখনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও তা আশার মুখ দেখে না।ফলে আড়ালেই থেকে যায় এর গডফাদাররা। তাহলে সরকারের শক্তি কি তাদের থেকে কম নাকি সরকার কোন কারণে তাদের কাছে জিম্মি?
লেখক: যুগ্ম আহ্বায়ক, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।