২২ জুলাই ২০২০, ১৬:৫৭

কেমন আছে প্রাণের ক্যাম্পাস

  © টিডিসি ফটো

‘আমার ধুলাবালি জমা বই আমার বন্ধুরা সব কই, আমার ভাল্লাগেনা এই মিথ্যা শহরে রাতের আড়ালে রই’। সত্যি আজ বইগুলোতে ধুলাবালির স্তুপ জমেছে, ঢাকা কলেজ.. প্রিয় ক্যাম্পাস, আত্মার আত্মীয় বন্ধু-বান্ধব, অভিভাবকতুল্য শিক্ষক-শিক্ষিকা।

একটি ক্যাম্পাস প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছেই একটা আবেগ আর অনুভূতির জায়গা। পড়াশোনা, খেলাধুলা, আড্ডা, গানবাজনা, হৈ-হুল্লোড় কী না হয় একটা ক্যাম্পাসে। মানুষ তার সমগ্র জীবনে সবচেয়ে বেশি আনন্দ আড্ডার মুহূর্তের দেখা পায় ক্যাম্পাস জীবনে।

কিন্তু হঠাৎ করোনা নামক অদৃশ্য এক শক্তি আমাদের সবার জীবনের হিসাবনিকাশ পাল্টে দিয়েছে, পুরো পৃথিবী আজ থমকে আছে, দিন যত বাড়ছে মনের মধ্যে ক্যাম্পাসের মায়া আর ভালোবাসার টান যেন ক্রমেই বেড়েই চলেছে। আক্রান্ত পৃথিবী, আক্রান্ত সময়, তার চেয়েও বেশি আক্রান্ত আমার এই মনটা।

কয়েদির মত চারদেয়ালে বন্দী আমার দেহটা, কিন্তু মনের আকাশে ঠিকই ঘুরপাক খায় আমার ছোট্ট ক্যাম্পাসটা। স্মৃতিকাতর হয়ে কখনো কখনো মনের অজান্তেই হারিয়ে যাই আমার '১৮ একরে' টেনিস গ্রাউন্ড, বীজয়চত্বর, কলেজ মাঠ কিংবা শহীদমিনার...।

ক্যাম্পাসের এই আনন্দমুখর স্থানগুলোতে এখন আর কেউ ভীড় জমায় না। পুকুর পাড়ে বসে রফিক মামার 'মুড়ি মাখা' খেতে খেতে বন্ধুদের কাঁধে হাত রেখে আড্ডা দেওয়া হয়না অনেকদিন। কখনওবা আড্ডার ফাঁকেই বন্ধুদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপেক্ষারত 'কল্যাণীর' হাতটা ধরে দৌঁড়ে ছুটে যেতাম রবীন্দ্রসরোবরে। কিন্তু আজ সবকিছুই স্মৃতি।

রাজ্জাক মামা কেমন আছে?
রাজ্জা মামার টং দোকানের চা ডিসিয়ানদের ক্যাম্পাস জীবনের একটা অংশ।

"এসো মিলি হৃদয়ের টানে প্রাণের ক্যাম্পাসে পুরনো স্বপ্ন আঁকি হৃদয়ের ক্যানভাসে,
যেথায় বসে শিক্ষা বিতরণের অবারিত মেলা আর তোরা করিসনা দেরি বয়ে যায় যে বেলা"

কলেজের প্রতিটি আবাসিক হল আজ ভূতূড়ে আড্ডাখানা, এক অদ্ভুত নিরবতা আর সবকিছুই যেন অচেনা। দিনের অর্ধেকের বেশি সময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত থাকত পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। বীজয়চত্বর কিংবা টেনিস গ্রাউন্ড জিয়ে থাকতো রাজনৈতিক আড্ডায়।

কিন্তু করোনার প্রকোপে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস, কোথাও কেউ নেই, চারপাশে কেমন সুনশান নিরবতা। রৌদ্রতপ্ত ক্লান্ত দুপুরে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে শঙ্খচিলের (বাসের নাম) পিঠে চড়ে বাসায় ফিরে আসতে হয়না এখন আর।

"আবার এসেছে সময় ডাকছে
প্রিয় ক্যাম্পাস বইখাতা নয় শুধু চায় উপস্থিতির আশ্বাস,
ভালোলাগা, ভালোবাসার স্বপ্নঘেরা আঙিনায় এসো বন্ধু এসো ভাই স্বপ্ন আঁকি আরেকবার"

হ্যাঁ, আবার স্বপ্ন আঁকার আশা নিয়ে প্রতিদিন ঘুমোতে যাই। হঠাৎ কোন একদিন সকালে মোবাইলের এলার্ম বেজে উঠবে আচমকা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ না হয়েই কলেজ বাস ধরার জন্য দৌঁড়ে ছুটে যাবো, সেদিন রাস্তায় তীব্র যানজটের মাঝেও আমাদের 'শঙ্খচিল' রকেট গতিতে ছুটবে। বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে মুক্তবাতাসে সুস্থ শহরের নিশ্বাস নিতে নিতে নিউমার্কেটের বুকে আমাদের ছোট্ট ক্যাম্পাসে পৌঁছে যাবো ইনশাল্লাহ।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ