মিল্কিওয়ে রহস্য
আমরা পৃথিবীতে বাস করি,যেটা কিনা সৌরজগতকে একটা ছোট গ্রহ, যেই পৃথিবীর আয়তন প্রায় ৫১,০১,০০,৫০০ বর্গ কিলোমিটার। কি মনে হচ্ছে? অনেক বড় তাইনা! না আসলে তেমনটা নয়! আমরা যদি মহাবিশ্বের সাপেক্ষে চিন্তা করি তাহলে আমাদের এই পৃথিবীর এই বিশাল আয়তনও একটা ধূলিকণার সমানও নয়। শুনতে হাস্যকর লাগছ হয়তো, কিন্তু অবাক হবেন জেনে এটাই সত্যি। এই লেখায় চেষ্টা করব মহাবিশ্বের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে একদম সহজ এবং প্রাঞ্জল ভাষায় কিছু তথ্য জানানোর জন্য ।
আচ্ছা এখন মনে হতে পারে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি কি? তা জানার আগে আমাদের আগে জানতে হবে গ্যালাক্সি কি! গ্যালাক্সি (বাংলায় ছায়াপথ বলে) হচ্ছে গ্যাস, ধুলা, কোটি কোটি নক্ষত্র ও তাদের অন্তর্গত গ্রহ, গ্রহাণু, অজানা বস্তু (Dark Matter) এসবের একটি সমন্বয়, যা মহাকর্ষ বলের কারণে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত কিংবা আবদ্ধ থাকে। গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সুবিশাল কোন ভরকেন্দ্রকে ঘিরে এরা প্রদক্ষিণ করতে থাকে। একটি গ্যালাক্সিতে এর আকার ও গঠন অনুযায়ী কয়েকশত কোটি থেকে কয়েক লক্ষ কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে।
গ্যালাক্সি শব্দের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ গ্যালাক্সিয়াস থেকে। বাংলায় এর অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “দুধের মতো”। গ্রিক পুরাণ (Mythology) অনুযায়ী দেবরাজ জিউস তাঁর সদ্যজাত পুত্র হেরাক্লিসকে (হারকিউলিস নামে বেশি পরিচিত। তাঁর জন্ম হয়েছিল এক মানব নারীর গর্ভে) স্বর্গে এনে তাঁর ঘুমন্ত স্ত্রী হেরার স্তন্যপান করাতে চাইছিল, কিন্তু হেরাক্লিস দুধ খেতে খেতে হেরার ঘুম ভেঙে যায় আর সে দেখে অচেনা এক ছেলে তাঁর স্তন্যপান করছে! সে তখন ছেলেটাকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দেয় আর তখন কিছু দুধ নিচে পড়ে যায়। তখন জন্ম হয় আমাদের ছায়াপথ এর, যাকে এখন আমরা “মিল্কিওয়ে” বলি। আর আকাশে একে দেখতে এজন্যেই সাদাটে লাগে! পূর্বে গ্যালাক্সি বলতে কেবল আমাদের এই মিল্কিওয়ে কেই বোঝানো হতো, কারণ তখন বাইরের কোন গ্যালাক্সির খোঁজ জানা ছিল না মানুষের। কিন্তু এখন গ্যালাক্সি হচ্ছে সাধারণ নাম, এবং আলাদা আলাদা গ্যালাক্সির আলাদা আলাদা নাম দেয়া হয়েছে। আচ্ছা এ গেলো মিল্কিওয়ে নামাকরণ এর প্রচলিত কাহিনী। তার আগে একটা কথা বলি মিল্কিওয়েকে বাংলায় বলা হয় আকাশগঙ্গা। তার মানে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এর বাংলা করলে দাড়ায় আকাশগঙ্গা ছায়াপথ।
আচ্ছা এই আকাশগঙ্গা কি খালি চোখে দেখা যায়? হ্যা অবশ্যই দেখা! শরৎের মেঘ মুক্ত আকাশে দক্ষিন পশ্চিম দিকে তাকালে দিগন্তরেখা থেকে উপরের দিকে তীর্যক ভাবে একটা বলয় দৃশ্যমান হয় এটায় আসলে আমাদের মিল্কিওয়ে যার আকৃতি সর্পিলাকার থালার ন্যায়,আপনি যদি শহরে থাকেন তাহলে খালি চোখে আপনি মিল্কিওয়ে দেখতে পারবেন না কারণ শহরে অনেক লাইট সোর্স থাকে যার কারণে দেখা যায় না! গ্রামীন নিরিবিলি অঞ্চলে আপনি খালি চোখে আকাশগঙ্গা দেখতে পারবেন। যে ছবিটি দেখছেন সেটা গত ১৭-০৭-২০২০ তারিখে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা থেকে তোলা হয়েছে। আচ্ছা এখন জানা যাক আমাদের মিল্কিওয়ে তে কি কি আছে। আর আমাদের আকাশ গঙ্গার আয়তনই বা কত?
আমরা যে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে বাস করছি তার ব্যাস ৯০০০০ আলোকবর্ষ(আলো এক বৎসরে যে পরিমান পথ চলে তাকে আলোকবর্ষ বলে)।আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৩০০০০০ কিঃ মিঃ।তাহলে বুঝতেই পারছেন কতটা বিশাল এই ছায়াপথ। আচ্ছা আলোকবর্ষ বিষয়টা একটু সোজা করে বলি, পৃথিবী থেকে এই মূহুর্তে চাদের দুরুত্ব ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ মাইল। এখন আপনাকে যদি এমন এক রকেটে চরে পাঠানো হয় চাঁদে যার গতি এক আলোকবর্ষ। তাহলে আপনি ২ সেকেন্ডে একবার চাঁদে যেতে পারবেন আবার ফিরে আসতে পারবেন এবং আবারও চাঁদে যেতে পারবেন। এবার আবার উপরের সাংখ্যিক মানের সাথে তুলনা করুন।এইসব ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে মাথা ঘুরে যাবার উপক্রম হয়। মনে হয় এই মহাবিশ্বের কত ক্ষুদ্র সত্ত্বা আমরা এই মানুষ। সে যাই হোক। আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথে আনুমানিক নক্ষত্রের সংখ্যা ১৫০ থেকে ২৫০ বিলিয়ন । সেইখানে একটি মাত্র নক্ষত্র আমাদের সূর্য। এবং সৌরজগতের একটা ছোট্ট একটা গ্রহ আমাদের পৃথিবী। এখন নিশ্চয় অনুমান করতে পারছেন আমাদের পৃথিবী কত ছোট!! লেখার শুরুতে কেন ধূলিকণার থেকেও ছোট বলেছিলাম।
আচ্ছা এবার আমাদের সূর্যকে মিল্কিওয়ের সাপেক্ষে তুলনা করি, আমাদের মিল্কিওয়েতে যে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র আছের তার তুলনায় আমাদের সূর্য অনেক ছোট! এমনি কি এমন নক্ষত্রে আমাদের এই ছায়াপথে আছে যার তুলনায় সূর্য একদম শরিষা দানার ন্যায়! যেই সূর্য কিনা আবার পৃথিবীর থেকে তের লক্ষ গুন বড়। তারমানে এখন চিন্তা করুন তো আপনি কোথায় আছেন! আপনি এই মহাবিশ্বের কতটুকু অংশ জুরে বিচরণ করছেন। তাহলে কি এই মহাবিশ্বে আমাদের মত উন্নত জীব আছে? আছে হয়তো! সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে জেনে রাখুন থাকার সম্ভবনা কিন্ত প্রবল।
লেখক: শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়