১৮ জুলাই ২০২০, ১৯:০১

কাটা পা নিয়ে আনন্দ মিছিল ও এই সমাজের ডা. সাবরিনা

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার  © টিডিসি ফটো

মহামারি করোনাভাইরাসে যখন বিপর্যস্ত পৃথিবী তখন বাংলাদেশের ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার একটি সংবাদ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে স্থান পায় কিছুদিন আগে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১২ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।

সকাল থেকে দুপুর পযর্ন্ত দফায় দফায় ওই উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি গ্রামে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের একজনের পা কেটে হাতে নিয়ে আনন্দ মিছিলও করেছে আরেক পক্ষ। এটা কি ধরনের বর্বরতা হতে পারে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। মানুষ কি পরিমাণ নির্মম হতে পারে তা একটি ঘটনা দ্বারাই বোঝা যায়।

মানুষের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একজনের পা কেটে আরেক পক্ষ আনন্দ মিছিল করবে তা সভ্যসমাজে কোনক্রমেই মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনা দ্বারা বোঝা যায় মানুষ কি পরিমাণ নিষ্ঠুর। একে অপরের প্রতি যেন ভ্রাতৃত্ববোধ বিলীন হয়ে গেছে।

করোনার প্রকোপে পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেছে। এক জনের বিপদে আরেকজনের এগিয়ে আসাটা কাম্য। কিন্তু আমরা দেখেছি উল্টাে চিত্র। মানুষের নির্মম আচরণ। মৃতদেহ দাফনেও এসেছে বাধা। জঙ্গলে মাকে ফেলে গেছে তার ছেলে এবং তারই স্বামী। পঙ্গু স্বামীর স্থান হয়নি তার নিজেরই গৃহে। এসব ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন অঞ্চলে।

আর এদিকে আরেক শ্রেণির মানুষ করোনাকে কেন্দ্র করে করেছে ব্যবসা। ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। মানুষের জীবন নিয়ে করেছে খেলা। বিশ্বের কাছে দেশের মান-মর্যাদা ম্লান করে দিয়েছে। এদের অন্যতম জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক (বরখাস্ত) ও জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী এবং তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী।

ডাক্তার সাবিরনা অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে তার স্বামীকে ডিভোর্সও দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রেহাই পাননি। ডাক্তার সাবরিনা এবং তার স্বামী হাজার হাজার ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছেন। কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। মানুষের জীবন যেন তাদের কাছে তুচ্ছ। মানুষের জীবন নিয়ে এরা খেলায় মেতেছেন। বিনামূল্যের পরীক্ষায় নিয়েছেন হাজার হাজার টাকা। দিয়েছেন ভুয়া রিপোর্ট।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করলে হয়তো আরও সাবরিনা এবং আরিফের সন্দান মিলবে। প্রকাশিত হবে তাদের অপকর্ম। ডাক্তার সাবরিনার মতো অপরাধীরা এই সমাজেরই প্রতিনিধি-প্রতিচ্ছবি। খুঁজে বের করতে হবে তাদের গডফাদারদের। অপরাধীদের অন্ধকার জগৎটাকে উপড়ে ফেলতে হবে।

করোনাকালে প্রতারকদের অন্যতম আরেক হোতা রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য মামলা। মো. সাহেদ প্রতারণাকে এক প্রকার শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা করে যাচ্ছেন। তার প্রতারণার কাজের জন্য ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক পরিচয় ও মিডিয়াকে। প্রতারক শাহেদের বাণী শুনতে হয়েছে জাতিকে। শাহেদও এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে।

শাহেদের প্রতারণার শিকার হয়ে অসংখ্য মানুষ পথে বসেছে। হয়েছে হয়রানির শিকার। শাহেদ এ সমাজের মানুষ। খুঁজে বের করতে হবে সাহেদের গড ফাদারদের। সাহেদ একদিনে গড়ে উঠেনি। সাহেদদের আস্তানা গুড়িয়ে দিতে হবে।

করোনাকালে সাহেদ-সাবরিনাদের নির্মমতা আমরা যেমন দেখেছি তেমনি দেখেছি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদদের মহানুভবতা। যারা নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থেকেছেন। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ ও খোরশেদদের সংখ্যা নিতান্তই কম। তারপরও ডা. জাফরুল্লাহ ও খোরশেদরাই আমাদের নেতা। ভবিষ্যতের কান্ডারি। অন্ধকারে আলোর পথের দিশারী।

করোনার প্রকোপ একদিন হয়তো থাকবেনা। মানুষ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় জীবন-কর্ম চালাবে। করােনাকালে আমরা মানুষের ভালবাসা ও নির্মমতা দুটোই দেখেছি। আমরা ভালবাসা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। ভুলে যেতে চাই কষ্টের দিন। দূর করতে চাই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ। এক জেলার সঙ্গে যেন আরেক জেলার মানুষের শক্রমনোভাবাপন্ন না থেকে। এক অঞ্চলের ভাষা নিয়ে যেন আরেক অঞ্চলের মানুষ কোন বিদ্রুপ না করে।

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মতো ঘটনা যেন আর কোথাও না ঘটে। মানুষে মানুষে পার্থক্য যেন না থাকে। কেননা সবার শরীরের রক্তই লাল। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে। যার যার স্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।

লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশী একজন শিক্ষার্থী "স্টপ রেসিজম এন্ড হেট স্পীচ ইন বাংলাদেশ" ফেসবুক পেজ খুলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। এরকম আরও প্রচারণা চালাতে হবে আমাদেরকে। বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ভুপেন হাজারিকার গান দিয়ে সমাপ্তি টানতে চাই।

‘‘মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি
মানুষ পেতে পারে না…ও বন্ধু’’।