০৬ জুলাই ২০২০, ০৯:৪৯

সীমান্ত হত্যায় সরকার চুপ কেন?

  © ফাইল ফটো

সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যতে আনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সম্মত হয়েছে কয়েক বছর আগে। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশ সীমান্তে বেপরোয়া গুলি করে মানুষ খুন করছে বিএসএফ। ভারতের সাথে ৬টি দেশের স্থল সীমান্ত রয়েছে। এ দেশগুলো হল পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। আর ভারতের সমুদ্র সীমান্ত রয়েছে শ্রীলঙ্কার সাথে। এই সবগুলো দেশের সীমান্তেই ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশের সীমান্তে হত্যাকান্ড শূন্য।

অথচ ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকান্ড নিয়ে সরকার বরাবরই চুপ।এর কারণ সরকারের অতি ভারত প্রেম। কিন্তু এসব সীমান্তে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ। কেবল পতাকা বৈঠক ছাড়া আর কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না সরকারের পক্ষ থেকে।

নতজানু রাষ্ট্রীয় নীতির কারণে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ রাষ্ট্র চাইলে এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যাওয়ারও সুযোগ আছে বলে মনে করেন তিনি৷

২০২০ সালের প্রথম মাসেই ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে ১২জন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে।

আর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সীমান্তে ২৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের সৈন্যদের গুলিতে।


সরকারি হিসাব মতে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৩৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। কিন্তু বিএসএফ-এর হিসেবে এই সংখ্যা আরো কম। আর সরকারি হিসেবে ২০১৮ সালে সীমান্তে তিনজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে ১৭ জন।

কিন্তু বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরো বেশি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসেবে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আর ২০১৭ সালে ২৪ জন।

সরকারি হিসাব ধরলে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে ১২ গুণ। আর বেসরকারি হিসাবে তিনগুণের বেশি। ভারতের পক্ষে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেটি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

সীমান্ত হত্যা নিয়ে দুদেশের সরকারি পর্যায়ে শীর্ষ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং বিজিবি বিএসএফ সম্মেলনে বার বার আলোচনা হলেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না।

সীমান্ত হত্যাকান্ড নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হলে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সময় এসব হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করলেও তেমন কাজে আসছে না। কারণ এক্ষেত্রে সরকার অনেকটাই চুপ।

এমন পরিস্থিতিতে আমাদের প্রতিবাদকে আরও জোড়ালো করতে হবে পাশাপাশি এসব হত্যাকান্ড বন্ধের জন্য সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
(তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা)


লেখক: যুগ্ম আহ্বায়ক বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।