করোনাকালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি: বেকারদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ
সারাবিশ্ব এখন করোনা তান্ডবে আক্রান্ত। বাঘা বাঘা দেশের অর্থনীতিও আজ নাজেহাল। এমতবস্থায়, বাংলাদেশের চিত্ৰ আরো করুণ। অধিক জনগোষ্ঠীর প্রেক্ষিতে সরকার পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে করোনা মোকাবিলার। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে অবহেলিত আছে দেশের বিপুল পরিমান বেকার জনগোষ্ঠী।
নাই টাকা, নাই চাকরির বিজ্ঞপ্তি, নাই কোন চাকরির পরীক্ষা। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এডিবির তথ্যমতে, করোনাকালীন সময়ে কর্মহীন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আরো বেড়েছে, আর চাকরির বিজ্ঞপ্তি শতকরা ৮৭ ভাগ কমেছে।
এই অবস্থায় বেকার জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। যাদের বয়স শেষের পথে অথবা যাদের অনার্স/মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষাগুলো করোনার জন্য আটকে গেছে যার ফলে রেজাল্ট হচ্ছে না। এই সকল পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আশীর্বাদ স্বরূপ কিছু নিয়োগ দাতা প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞপ্তি আসা শুরু করলো। কিন্তু আশীর্বাদ দ্রুতই অভিশাপে পরিণত হলো বটে!

উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞপ্তিগুলোর কথা লিখতে গেলে পিএসসির নন ক্যাডারের প্রতি পদে ৫০০ টাকা ফি। একজন যদি ৪/৫টি পদে আবেদন করে তাহলে তার এইখানে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা লাগবে। এরপর বিটিসিএলে ১০০০ টাকা, সেতু কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পদ প্রতি ৭১২ টাকা। এভাবে হিসেব করলে প্রায় ৫০০০ টাকার মতো লাগবে। যেখানে বিজ্ঞপ্তি ভেদে অনার্স বা মাস্টার্স শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে। আর আবেদনের সময়সীমা কম বেশি এক মাসের মধ্যে।
এই পরিস্থিতিতে একটি বেকারবান্ধব পদক্ষেপ নিলে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান গুলো আশীর্বাদ স্বরূপ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই মুহূর্তে যাদের স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ফাইনাল পরীক্ষা মার্চ/এপ্রিলে শেষ হয়ে যাদের ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট দিয়ে দেওয়ার কথা তারা কেউই বর্তমানে সার্কুলারগুলোয় এপ্লাই করতে পারছে না।
আবার বেশির ভাগের হাতে এত টাকা নেই এপ্লাই করতে যে ফি লাগবে বর্তমানে। এমতবস্থায় কর্তৃপক্ষ একটি পদক্ষেপ নিলেই সব সম্ভব। যেহেতু ডেডলাইন প্রতি বিজ্ঞপ্তির কম বেশি মাত্র এক মাস আর এই পরীক্ষা গুলো আগামী তিন মাসের মধ্যে হওয়া কোন মতেই সম্ভব নেই।
কারণ দেশের স্কুল কলেজ গুলোরই কয়েক মাস লাগবে গুছিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা-ক্লাসগুলো শেষ করতে। আবার প্রতিটি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোরও এই কয়েকমাসের অনেক দাপ্তরিক কাজই জমে গেছে। সেগুলো ক্লিয়ার না হয়ে কোন পরীক্ষা নেয়া আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব নয়।
তাই প্রতিটা প্রতিষ্ঠান যারা সার্কুলার দিয়েছেন এবং সামনে যেসব দেয়া হবে তারা যদি আবেদনের সময়সীমা ৩ মাস বা ৩মাস ১৫ দিন পর্যন্ত দেন তাহলে মোটামুটিভাবে সকল বেকারদের সুবিধা হবে। এ মুহূর্তে যাদের বয়স শেষের দিকে তারাও তাহলে সব গুলো পোস্ট এ এপ্লাই করতে পারবেন। আবার বেশির ভাগের হাতে এখন এত টাকা নেই করোনার পরিস্থিতি যদি আগামী এক মাসে অনুকূলে চলে আসে তাহলে ইনশাআল্লাহ সব কিছু স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলে যারা পার্ট টাইম কিছু করে বা টিউশনি করলে এপ্লাই করতে পারবে।
আর যাদের ফাইনাল পরীক্ষাগুলো আটকে ছিলো অনার্স বা মাস্টার্স তারা কিন্তু এই করোনার জন্যই এসবে বর্তমানে এপ্লাই করতে পারছে না। এই ধরনের সমস্যায় যারা আছে তাদের পরীক্ষাগুলো করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হবার পরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার সাথে সাথে দ্রুত শেষ হবে। এর মাধ্যমে তারাও তাহলে আবেদনের সময়সীমা বেশি থাকলে এপ্লাই করতে পারবেন।
এদের মধ্যেও অনেক চৌকশ মেধাবী আছেন যাদেরকে সুযোগটা করে দিলে দেশ তথা ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক সুফল বয়ে আনতে পারবে। তাদের জন্যও সমাজের দায় আছে। কারণ দেশ বিনির্মাণে বর্তমানে চৌকশ মেধাবী কর্মকর্তা জরুরি যেটা সেখান থেকেও বের হতে পারেন অনেকেই। তাই বর্তমানে যত গুলো সার্কুলার হয়েছে সেই সব কর্তৃপক্ষ ও ভাবতে পারেন বিষয়টা।
পাশাপাশি যারা বেকারদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ সামনেই দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছেন তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ যেন প্রতিটা সার্কুলারের সময়সীমা ১মাস থেকে বাড়িয়ে ৩ মাস বা ৩মাস ১৫দিন বা তার বেশি করে দেয়া হয়। তাহলে প্রতিটা বেকারের জন্যই সুবিধা হবে আর যেহেতু এখন আবেদনপত্র অনলাইনে নেয়া হয় তাই এত সমস্যা হবার কথা না।
এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে যেহেতু দ্রুত পরীক্ষাও সেগুলোর নেয়া সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে আবেদনের সময়সীমা ৩ মাসের উপরে করলে সবার জন্য উপকার হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, করোনায় বর্তমানে ভেঙে পড়া দেশের অর্থনীতি নতুনভাবে সচল করতে শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য রাষ্ট্র তথা সমাজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আশু পদক্ষেপ কামনা করছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়