স্যার সম্বোধনে বিভ্রাট
সম্প্রতি বাংলাদেশে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ‘স্যার’ সম্বোধন না করায় সাধারণ নাগরিক ও সাংবাদিক হেনস্তার শিকার হন। উপরোক্ত বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত সাথে লজ্জাজনকও বটে। কারণ স্বাধীনতার প্রায় ৪৯ বছরেও সোনার বাংলায় বৃটিশ মনোভাবের চর্চা চলছে।
প্রায় সতেরশো শতকের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে স্যার শব্দের প্রচলন হয়। তৎকালীন সময় বৃটিশরা এই শব্দটি ব্যবহার বেশি করতো। ইংরেজি শব্দ স্যার (sir) এর উৎপত্তি ফ্রেঞ্চ শব্দ স্যায়ার (sire) থেকে। বৃটিশরা উপমহাদেশ থেকে চলে গেছে প্রায় ৭০ বছর পূর্বে, কিন্তু আমাদের দেশে এখনো তাদের অত্যাচারী বৈশিষ্ট্য (যা তারা উপমহাদেশের সাধারণ মানুষদের উপর চালাতো) বা ঔপনিবেশিক মনোভাব পরিলক্ষিত হয় কিছু উর্ধতন কর্মকর্তার মাঝে।
মজার বিষয় হচ্ছে, তারা যে শব্দটা উপমহাদেশে প্রচলন করেছিলো সেটা তারা নিজেরাও ব্যবহার করে অনেক স্বল্প পরিসরে। বৃটিশরা কথা বলার সময় অপরিচিত কাউকে শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে স্যার বলে সম্বোধন করে থাকে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও মি. প্রেসিডেন্ট সম্বোধন করা হয়। আমাদের দেশে শিক্ষকদের সম্মানসূচক স্যার/ম্যাম বলে সম্বোধন করা হয়। কিন্তু যদি কেউ না করে তাতে নিশ্চয়ই উক্ত শিক্ষকের মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার কথা না।
কথা বলার সময় ‘স্যার’ বলে সম্বোধন না করায় পুলিশ, ইউএনও কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চ বর্ণের লোকের দ্বারা প্রতিনিয়ত সাধারণ নাগরিক হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এই ধরনের ঘটনা বর্তমানে নিত্যদিনের সঙ্গী।
কোন ব্যক্তি অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদে যোগদানের সুযোগ পান তাদের স্যার বলে সম্বোধন করাটা রুচিসম্মত। তবে এর মানে এই নয় যে, কথা বলার সময় অবশ্যই স্যার সম্বোধন করতে হবে। সাধারণ নাগরিক, সংবাদকর্মীরা বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন স্যার সম্বোধন না করায়।
বলা হয় সরকারি আমলারা জনগনের সেবক। কিন্তু এ ধরনের কর্মকান্ড রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা করেন তবে তারা জনগণের সেবক হন কিভাবে? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বক্তৃতায় সাধারণ নাগরিকদের সন্মান করতে বলেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এর উল্টোটা হচ্ছে।
জনগণ হয়ে যাচ্ছে দাস আর উচ্চ বর্ণের ব্যক্তিরা প্রভূ রুপে আবির্ভূত হচ্ছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। কিন্তু সেই সেবা সাধারণ জনগণ কতটুকু পাচ্ছে তা আমাদের অজানা। এখনই সময় পরিবর্তনের নচেৎ ‘স্যার’ শব্দটির অতিমাত্রায় ভক্তি সমাজে সৃষ্টি করতে পারে নানা সমস্যা। প্রত্যাশা একটাই চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হোক।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।