করোনাকালে শিশুদের হাসিখুশি রাখার চ্যালেঞ্জ

জুবায়ের আহমেদ
জুবায়ের আহমেদ  © ফাইল ফটো

শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য তাদেরকে হাসি খুশিতে রাখা, অন্য শিশুদের সাথে মিশতে দেয়া এবং খেলাধূলা করতে দেয়ার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবায় শিশুদের নিয়ে কঠিন সময় পাড় করছে শহরে বসবাস করা পরিবারগুলো। এক রুমের বাসা বা তিন চার রুমের ফ্লাটের মধ্যে কাটছে শিশুদের জীবন।

মোবাইল ও টিভিতে কার্টুন দেখা, গেম খেলা, পরিবারের সদস্যদের সাথে থাকা ও খেলনা সামগ্রী দিয়ে ছোট্ট বাসায় খেলা করা ছাড়া বাহিরের সুন্দর পৃথিবী দেখা, অন্য বাসার শিশুদের সাথে খেলাধূলা করা, সব বন্ধ হয়ে গেছে করোনার কারনে।

শহুরে শিশুদের ছোট্ট বাসায় অধিকাংশ সময় কাটলেও অন্য শিশুদের সাথে খেলা করার সুযোগ হয় তাদের। সেই সাথে বাবা মায়ের সাথে মাঝে মধ্যে বাহিরে ঘুরতে যাওয়াও হতো। কোভিড ১৯ এর কারনে লকডাউনের ফলে গৃহবন্দী জীবন যাপনে হাপিয়ে উঠছে শিশুরা, যা তাদের কান্নাকাটি ও অস্থির আচরণেই বুঝা যাচ্ছে। করোনা কালে শিশুদের মধ্যে যারা ৩য় শ্রেণী থেকে ওপরের ক্লাসে পড়ছে তাদের অনেকেই হয়তো ই-লার্নিং এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও সময় কাজে লাগাতে পারছে।

কিন্তু এর চেয়ে ছোট শিশুদের পড়াশোনায় তেমন মনযোগী করা সম্ভব হয় না। বন্দী জীবনের ফলে অন্য শিশুদের সাথে খেলাধূলা করতে না পারায় এবং বাসার বাহিরে হাঁটাচলা করা এবং তাদের নিয়ে বের হতে না পারায় শিশুদের মধ্যে চরম মানসিক অস্থিরতা বিরাজ করছে।

শিশুরা চায় মুক্ত পরিবেশ। হামাগুড়ি দিতে শেখা শিশুরা ওদের মতো করে দূরে যেতে চায়। হাঁটাচলা করা শিশুরা আরো বেশি চঞ্চলতা দেখায় বাহিরে যাওয়ার জন্য। তাদের নিয়ে বাসার বাহিরে বের হওয়া বলে শুধুমাত্র ছাদে যাওয়া। সেখানে অন্য পরিবারের শিশুরা থাকলেও তাদের সাথে মিশতে দেওয়া সম্ভব হয় না করোনা কালের বাস্তবতার কারনে।

ফলে শিশুরা তাদের মনোভাসনা পূরণ করতে না পারায় মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরে, যার প্রভাব পরে তাদের স্বাস্থ্যে। শহুরে শিশুদের চেয়ে কিছুটা ভালো আছে গ্রামের শিশুরা। সেখানে তাদেরকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে না পারলেও নিজ বাড়ী সহ আশেপাশের বাড়ীতে নিয়ে ঘুরা যায়। নিজ বাড়ীর ঘরে বাহিরে খেলাধূলা করতে দেয়া যায়।

শিশুদের হাসিখুশি রাখতে তাদের সাথে খেলা ও গল্পের ছলে তাদের শেখানো যেতে পারে অ আ ক খ সহ বাংলা ইংরেজী সংখ্যা, নৈতিক শিক্ষা সহ প্রয়োজনীয় সব। এতে করে শিশুরা খেলাধূলার আনন্দ পাওয়ার পাশাপাশি শিখতে পারবে অনেক কিছু। সেই সাথে নামাজ সহ ধর্মীয় কার্যাদির সময় শিশুদের নিরুৎসাহিত না করে তাদেরকে কাছাকাছি রাখা যায় শেখার জন্য।

বড়রা যা করে শিশুরা তা দেখে দেখে সহজেই রপ্ত করতে পারে। সেই সাথে ছবি আঁকতে দেয়া, গান শোনানো ও ওদের ভালোলাগার কাজগুলোতেও অভিভাবকটা দৃষ্টি দিয়ে তাদের সময় দিতে পারে। বাসা ও ছাদ মিলিয়ে যতটুকু সম্ভব করতে হবে।

লকডাউনের সময়ে সামর্থবান পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের পুষ্টিকর সকল খাবার নিশ্চিত করতে পারলেও যাদের কাজকর্ম বন্ধ আছে, যারা কোনমতে জীবন যাপন করছে। সেসব পরিবারের শিশুদের পুষ্টিকর সকল খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বন্দীজীবনে মানসিক অবসাদও তৈরী হচ্ছে।

কোভিড ১৯ এ বিপর্যস্ত পৃথিবী। বহু দেশে ভাইরাসটি তান্ডবলীলা চালাচ্ছে। বহু দেশে দিনদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলেও গত মার্চের ৮ তারিখে বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার পর বর্তমানে মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন দুই হাজারের মতো রোগী সনাক্ত হচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। ফলে শহরে বসবাস করা মানুষদের বন্দীদশা সহজেই শেষ হচ্ছে না।

এই অবস্থায় শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের পথে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, করোনা কালে এর থেকে পুরোপুরি উত্তোরনের কোন উপায় না থাকলেও শিশুদেরকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে করোনাকালীন সময়ে হাসিখুশি ও প্রাণচঞ্চল রাখার চেষ্টার কোন বিকল্প নেই। করোনা কালে বন্দী জীবনে হতাশার মাঝেও শিশুদের হাসিখুশি রাখার চ্যালেঞ্জটা অভিভাবকদের নিতেই হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম,  বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)


সর্বশেষ সংবাদ