বিজিএমইএ’র কাছে ব্যবসাটা মূখ্য, মানুষ নয়
জুন থেকেই শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হবে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। করোনা দূর্যোগের সময় এরকমের একটি সংবেদনশীল বক্তব্য সর্বসমক্ষে বলাটা কতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয়, তা নিশ্চয়ই বিজিএমইএ’র জানা থাকার কথা।
অথচ কদিন আগেই এই বিজিএমইএ লকডাউনের কঠিনতম সময়ে ফোন করে করে শ্রমিকদের ডেকে আনলেন। চাকরী বাঁচাতে শ্রমিকরা মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হলো। আর আজকে বিজিএমইএ বলছে, জুন থেকে সেই শ্রমিকদের চাকরী নাই! কেউ কি দয়া করে জানাবেন, জুন থেকে এই শ্রমিকরা কোথায় যাবে?
বিজিএমইএ আজ বলেছে, ‘করোনার এই সময়ে প্রায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানির ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে।’ আসলে বৈশ্বিক মহামারী ও মন্দার সময় এটা অস্বাভাবিক নয়। কারন বছরে আমাদের মোট পোশাক রপ্তানি হয় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের। তারমানে ৯০% অর্ডার এখনও বহাল আছে। যা থেকে নিশ্চিতভাবে মুনাফাও থাকবে। আর আজকের কনফারেন্সে বিজিএমইএ কিন্তু সেটা স্বীকারও করে নিয়েছে। দেখুন আজকে বিজিএমইএ বলেছে, ‘তবে যাই ঘটুক, চলতি অর্থবছরে পোশাক খাতে রফতানি আয় ২৩ বিলিয়ন ডলার হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।’
আসলে বৈশ্বিক এই সংকটের সময় আমাদের তৈরি পোষাক শিল্পের সম্ভাবনাও রয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী। ক্রেতারা এসময় ব্র্যান্ডের সব দামি পোশাক নয় বরং কম দামি পোশাকের পেছনেই ছুঁটবে। আর বাংলাদেশের জন্য এটাই হলো সম্ভাবনা ও সুযোগ। এদিকে বছরের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উৎপাদন মৌসুমের একটি চলে গেছে এপ্রিল-মে মাসে। পরবর্তী উৎপাদন মৌসুম শুরু হবে জুলাই-অগাস্ট মাসে। এরই মধ্যে ইউরোপসহ পাশ্চাত্যের অনেক দেশে লকডাউন শিথিল ও তুলে নেয়া হয়েছে। সামনে ক্রিসমাসের বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকবে। তাই আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলো এই উৎপাদন মৌসুম ধরতে না পারার কোন কারন নাই।
আজকের বিজিএমইএ’র কনফারেন্সে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী মহোদয়গন, সিটি করপোরেশনের মেয়র, সরকারী দলের সাংসদরা। এরা সবাই গার্মেন্টস ব্যবসার রাঘববোয়াল। অন্যদিকে এরা আবার জনপ্রতিনিধি। জনগণের নেতা। দেশের মানুষের কল্যাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী-উপদেষ্টা। অথচ যে সময়টায় এই গার্মেন্টস নেতাদের উচিত আমদানিকারক রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক ধরে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। নতুন নতুন অর্ডারের জন্য চেষ্টা চালানো। অথচ সেই সময়টা তারা মন্ত্রনালয়ে, সংসদে, নগর ভবনে ও নিজ দলে নিজেদের চেয়ার দখল রাখাতে ব্যাস্ত।
আর অন্যদিকে ব্যাস্ত, সরকারের পরবর্তী প্রনোদনা অন্বেষণে। যেমনটা আজকে বিজিএমইএ’র কনফারেন্সে বলা হলো, ‘শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে বড় একটা সহায়তা পেয়েছিলেন মালিকেরা। সেটি জুন মাসে শেষ হবে।’ তার মানে জুন মাস শেষ হলে জুলাই থেকে তাদের আবারো প্রনোদনার অর্থ দিতে হবে। নইলে শ্রমিক ছাঁটাই!
আসলে যে শ্রমিকদের শ্রমের কল্যাণেই পোশাক শিল্প এখন দেশের প্রধান রপ্তানী খাত। যে শ্রমিকদের কাঁধে ভর করেই মালিকরা আজ অঢেল বিত্ত-বৈভবের অধিকারী। অথচ এই শ্রমিকদের মানবিক দিকটি কারো ভাবনায় নেই। ভাবনায় আছে শুধুই ব্যবসা।
লেখক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ