তুমি রেজাল্ট খারাপ করেছ? তাহলে শুন...
গত ৩১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবারের পাশের হার ৮২.৮৭%। প্রত্যাশিত ফলাফলে একদল শিক্ষার্থী আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে। কিন্তু আয়নার অপর পাশের দৃশ্যটা আমাদের ভিন্ন কোনো সংবাদ দিচ্ছে। সেটা হলো, এবারের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে ১৩.১৭% শিক্ষার্থী। তাছাড়া ফল প্রকাশের সাথে সাথে কিছু দুঃসংবাদ আমাদের চোখে পড়ে। এই দুঃসংবাদের চিত্রগুলো আমরা প্রতি পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পরেই দেখতে পাই।
পরদিন দুপুরের অলস সময়টাতে নিউজ ফিড দেখছিলাম। একটা পোস্ট দেখে চোখ আটকে গেলো। শরীয়তপুরের এক শিক্ষার্থী জিপিএ ৪.৫০ পেয়েও আত্নহত্যা করেছে। একটু অবাক হলাম। আমার দৃষ্টিতে জিপিএ ৪.৫০ মোটেও খারাপ রেজাল্ট না। কিন্তু এই মেয়ে কী মনে করে গলায় ফাঁস দিতে গেলো জানি না। সে চাইলে আরো অনেকদূর যেতে পারতো। কিন্তু সেটা না করে সে নিজেই তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই আত্মহত্যার মতো এমন ঘৃণ্য কাজটি করতে দ্বিধাবোধ করেনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, তাদের মধ্যে অনেক প্রতিভাবান শিক্ষার্থীও আছে। যারা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন দাপিয়ে বেড়িয়েছে। একটি দুর্ঘটনা তাদের সবকিছু শেষ করে দিলো।
তোমরা যারা এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছো তাদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। নিজ নিজ রেজাল্ট নিয়ে সন্তুষ্ট থেকো। আর যারা কৃতকার্য হতে পারোনি তাদের জন্য একটা ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলছি। গল্পটা সত্যি—
‘আমার এক পরিচিত ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এইসএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। সে এতোটা খারাপ ছাত্র ছিলো এমনটা কিন্তু নয়। কলেজের কোনো শিক্ষক তার রেজাল্ট মেনে নিতে পারছিলেন না। সবাই অবাক হচ্ছিলেন এবং বলছিলেন এটা হতেই পারে না। কঠিন সময়ে সে শুধু নিজেকে শক্তভাবে ধরে রেখেছিলো। ফ্যানের সাথে ঝুলে নিজের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়নি। এক বছরের নিরবচ্ছিন্ন সাধনার পর পরবর্তী বছর আবার পরীক্ষা দেয়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। ভালো রেজাল্টের খবর শুনে সে নিজেই কেঁদেছিল। এই একবছরে তার অনেক বন্ধু তাকে ছেড়ে চলে যায়। তাতে কি? সে এসবে পাত্তা দেয়নি। একাই লড়েছে।
এমনকি রাতের অন্ধকারে রের হয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম পূরণ করেছিলো। যাতে কেউ তাকে না দেখে। এখানেই শেষ নয়, ভর্তি পরীক্ষায় ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় চান্স পেয়ে সে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিলো আমার সেই পরিচিত মানুষটি। ইচ্ছে ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করবে। সেই স্বপ্ন পূরণ না হলেও বর্তমানে সে আমার সাথেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এতেও সে সন্তুষ্ট।’
এরকম অসংখ্য শিক্ষনীয় গল্প আছে। আছে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। আমি বিশ্বাস করি, একজন মানুষ ব্যর্থতাকে পুঁজি করে এগিয়ে যায় সফলতার দিকে। একজন ব্যর্থ মানুষ তার চলার পথের বাধাগুলো সম্পর্কে অবগত থাকে। যার ফলে সে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে সে-ই জয়ের দেখা পায়।
এখানে আমরা কয়েকজন বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিদের কথা স্মরণ করতে পারি। তাদের কারোরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না। কিন্তু নিজ নিজ ক্ষেত্রে তারা এতোটাই দক্ষ যে উনাদের কাজগুলো নিয়ে আজকাল গবেষণা হচ্ছে।
বাংলা সাহিত্যের দুজন কীর্তিমান নক্ষত্রের কথাই আগে শোনো। রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল। দুজনের কারোরই প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা ছিলো না কিন্তু তাদের সৃষ্টিকর্ম দেখে কি একবারও সেটা মনে হয়? অসাধারণ নৈপুণ্যে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন দিকে তারা ছড়িয়ে গিয়েছেন নতুন আলোকরশ্মি।
এবার সাহিত্যের জগৎ থেকে প্রযুক্তির জগতে আসা যাক। শুরুতে বিজ্ঞানী এডিসনের কথা শোনো। বিজ্ঞানী এডিসন ব্যর্থতার গল্পের জাল বুনতে বুনতে একসময় এগিয়ে গেলেন সফলতার দিকে। আবিষ্কার করে ফেললেন বৈদ্যুতিক বাতি। এনে দিলেন এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এবার স্টিভ জবসের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যিনি অ্যাপল কর্পোরেশনের কর্ণধার। তার সফলতার গল্প সবারই জানা আছে। এখন যার কথা বলবো উনি হলেন বিল গেটস। উনার নাম তো সবাই শুনেছো! যিনি হার্ভার্ডে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে মাইক্রোসফট এর মতো প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। বর্তমানে তার অবস্থান তোমাদের সবার জানা।
এতো কিছু জানার পরেও কেনো তোমরা নিজেকে নিয়ে হতাশ থাকো সেটা আমি বুঝি না। তাই দেরি না করে নিজের ভেতরে আলো জ্বালাও এবং সেই আলো দিয়ে পুরো পৃথিবী আলোকিত করো। অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থী বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আমার একটা বার্তা, ‘তোমরা সামনের একটা বছর সবকিছু ছেড়ে চেষ্টা করে দেখো। ইনশা আল্লাহ জয়ের দেখা পাবেই।’
মনে রাখবে,‘ব্যর্থতা কিছুদিনের কিন্তু সফলতা সারাজীবনের।’ আমি তোমাদের সবার সফলতার গল্প শোনার অপেক্ষায় আছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, সম্মান ৩য় বর্ষ, ইতিহাস বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়