করোনাকালে আত্ম উপলব্ধি
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসের প্রথম প্রকোপ শুরু হয়। এরপর উহান থেকে চীনের অন্যান্য প্রদেশ গুলোতেও এটি ছড়াতে থাকে এবং মার্চের ৮ তারিখে বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর তথ্য জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
ধীরে ধীরে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস বিশ্বকে করেছে স্থবির, জীবনযাত্রাকে করেছে দুর্বিষহ। প্রত্যেকটি মুহূর্তই সবার জন্য হয়ে উঠেছে আতঙ্কের। মানুষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। দুশ্চিন্তায় প্রতিটা মুহূর্ত মানুষকে আরো বিষিয়ে তুলেছে। বিষণ্নতার ছাপ প্রতি ঘরে ঘরে। কোথাও কেউ নেই, এরকম একটি শূন্যতার হাহাকার বিরাজ করছে প্রত্যেকটি কমিউনিটি এরিয়া গুলোতে। মানুষ চাইলেই এখন জমিয়ে আড্ডা দিতে পারেনা, পারেনা তার সুখ-দুঃখ গুলো ভাগাভাগি করতে সবার সাথে। এ কেমন স্থবিরতা?
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনার হাতগুলো চেয়ে আছে প্রতিটা মুহূর্তেই, একটি স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশায়, সহজ সরল জীবনের প্রতিচ্ছবি ফিরে পেতে চাই সবাই। সবাই চাই পৃথিবীটা আবার সুস্থ হয়ে উঠুক, বুক ভরে যেন নিঃশ্বাস নিতে পারে এই অঙ্গীকার সবার মধ্যেই এখন বিরাজমান কিন্তু করোনা ভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাব যেন কোনোভাবেই থামছে না।
বর্তমান কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী এই করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থার সম্মুখীন করেছে। এ ভাইরাসটি খুবই রহস্যজনক। এটি সবার মধ্যে একই ধরনের উপসর্গ প্রকাশ করে না। বিভিন্ন রকম উপসর্গ বিভিন্ন সময় ব্যক্তিভেদে দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গই প্রকাশ করে না। এটি এমনই এক মহামারী যা গোটা বিশ্বকে আজ হুমকির সম্মুখীন করেছে। জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। আর্থসামাজিক অবস্থান প্রতিটা মুহূর্তেই নড়বড়ে হওয়ার পথে। ধনী-গরীবের ব্যবধান, অজস্র বৈষম্যে পৃথিবীটাকে নতুনভাবে শেখানো হয়েছে বৈষম্য নয়, জীবনকে করতে হবে সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং গতিশীল! যেখানে থাকবে না কোন হতাশা, কষ্ট এবং বিষণ্নতা। প্রতিটি ঘরে থাকবে সুখের ছোঁয়া এবং পারিবারিক শক্ত বন্ধন।
আমরা সবাই চাই, আরো একবার ভালোবেসে এই পৃথিবীটা কে প্রকৃতির নতুন রূপে , নতুন ভাবে সাজাতে যেখানে থাকবে আর্থসামাজিক ভারসাম্যতা, শক্ত অবকাঠামো। সৃষ্টির শুরু থেকে আজকের মানব সভ্যতার যেই অবস্থান, সেটা কে আবার নতুন ভাবে দেখতে চাই পুরা বিশ্ব। থমকে যাওয়া এই পৃথিবী কে আরো একবার সুস্থভাবে আলিঙ্গন করতে চাই। ভালো থাকুক সৃষ্টির প্রতিটি মানুষ আর জীববৈচিত্র্য।
বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের কোনো ধরণের অসুস্থতা রয়েছে (অ্যাজমা, ডায়বেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ) তাদের মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে হবে সঠিক দূরত্ব বজায় রেখে।
বিষণ্ন এবং এই হতাশা মুক্ত জীবন পেতে আমাদেরকে সুদূরপ্রসারী চিন্তা করতে হবে, প্রতিটা সময় পারিবারিক, অফিশিয়াল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম সর্বোপরি জনসচেতনতা সবার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। বাইরে যাওয়া থেকে শুরু করে ঘরে ফেরা পর্যন্ত প্রত্যেকটি মুহূর্তে নিজ নিজ দায়িত্বে হতে হবে সবাইকে সচেতন।
করোনাকালীন এই সময়ে ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে আরো কিভাবে সচল রাখা যায়, বড় বড় বিশ্লেষকদের মাধ্যমে এবং তাদের সুস্পষ্ট মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, তা না হলে দিনে দিনেই বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে, যেখান থেকে বাড়তে পারে চুরি , ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি এবং খুনের মতোও ন্যক্কারজনক ঘটনা। সমাজব্যবস্থাকে নতুনভাবে উত্তরণের জন্য হাতে হাত রেখে সবাইকে কাজ করতে হবে একই সুরে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশগুলোকে একটি কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। বিধিনিষেধগুলো প্রত্যাহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার উপায় খুঁজতে হবে।
একথা ঠিক যে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। এসব বিধিনিষেধ তুলে দিলে সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
লেখক: চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।