করোনায় অচেনা ঈদ
একমাস সিয়াম সাধনার পর বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম ঈদুল ফিতর এবার উদযাপিত হচ্ছে ভিন্ন পরিবেশে। কোভিড-১৯ ভাইরাস মহামারীতে অচল গোটা পৃথিবী। বাদ যায়নি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও। আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে আরো আগেই। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের নাম। উপরন্তু এ মহামারীর মধ্যেই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছে দেশের দক্ষিণাংশে। এ পরিস্থিতিতে ঈদুল ফিতরের আগমন হইতো সামান্য আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি করবে এদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে।
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে হবে এ ঈদে। সিয়াম পালনের মাধ্যমে আমাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ধৈর্য, সৃষ্টির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও নিয়মশৃঙ্খলাবোধের শিক্ষা। গত তিনমাস ধরে চলা লকডাউন বর্তমানে খানিকটা শীতিল। জনজীবনকে স্বাভাবিক রাখতে খোলা শুরু হয়েছে দোকানপাট, বাজার ও সীমিত পরিসরে যানবাহন। কিন্তু এ সময়েই কোভিড ১৯ তথা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের তান্ডব ভেঙেছে অতীতের সব রের্কড। হাজারের ঘরে এসে পৌঁছে প্রতিদিনের আক্রান্তের সংখ্যা। তাই প্রথমত, এ ঈদে আমাদের মাঝে সৃষ্টি হওয়া উচিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মানসিকতার ও করোনা সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতনতা। যতটুকু সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলা উচিত আমাদের সকলের।
ঈদের নামায সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনানুযায়ী ঈদগাহে পরিবর্তে মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সিয়াম সাধনার শৃঙ্খলাবোধের শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারি সরকারি নির্দেশনানুযায়ী মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে। কোলাকুলি ও হাতমোসাফা থেকে বিরত থাকতে হবে এবারের ঈদে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নির্দেশনাও পালন করা উচিত করোনা সংক্রমণ থেকে নিজে ও নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য।
বিগত তিনমাস ধরে স্থবির হয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। প্রতিদিনের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষের মাঝে ঈদ আনন্দ অনেকখানি ভাটা পড়বে। এসময়ে বিত্তশালীদের সামর্থ্যের পরিচয় দিতে গিয়ে ভোজনবিলাস ও আনন্দ উৎসবে মেতে উঠা কোনভাবেই সঠিক নয়। বিত্তশালী ও সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসতে হবে সমাজের অসহায় মানুষদের পাশে। যাকাত, ফিতরা ও দানের মাধ্যমে সাহায্যে হাতকে করতে হবে আরো প্রসারিত।
প্রিয়জনকে নিয়ে ঈদে ঘুরাঘুরি এবছরের জন্য বিরত থাকা একান্তই কাম্য। প্রতিবছরই ঈদের সময় বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে, আত্মীয় স্বজন বাসায় ও পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় আমাদের মাঝে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে পাল্টাতে হবে আমাদের সেই প্রবণতা। প্রিয়জনকে নিয়ে নিজ বাসায় ঈদ উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে।
বন্দী জীবন কারো কাছেই সুখকর নয়, হোক সে মানুষ অথবা পশুপাখি। মুক্ত জীবনের অভিলাষ জাগ্রত থাকে আমাদের সবার হৃদয়ে। কিন্তু পরিস্থিতিকেও মাথায় রাখতে হবে আমাদের। কোভিড-১৯ এর সামাজিক সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে আমাদের। সবকিছুর চিন্তা করেই এবারের ঈদ উদযাপন করতে হবে আমাদের। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক এদেশের সকল মানুষের অন্তরে।
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।