বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সর্বোচ্চ চূড়া, সফলতার না
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সর্বোচ্চ চূড়া তবে সফলতার সর্বোচ্চ চূড়া নয়। সত্যি বলতে, আপনি জীবনে কতদূর যাবেন এবং আপনার ক্যারিয়ার কতটা সুন্দর হবে তার শতকরা ১ ভাগও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভরশীল নয় বরং তার পুরোটা আপনার কঠোর পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল।
আমার এমন মতামতের পক্ষে দুটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। আমরা অনেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ২ পয়সার মূল্যায়ণ করতেও নারাজ। আমরা ভাবি তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়নি ফলে তারা অযোগ্য ও জাতীয় অপদার্থ; তাদের দ্বারা ভবিষ্যতে ভাল ক্যারিয়ার কিংবা উচ্চপদস্থ চাকরি আশা করা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু সমাজে প্রচলিত এমন ভ্রান্ত ধারণার শিকড়কে টেনে তুলতে একজন আব্দুল আউয়ালই যথেষ্ঠ। আমি সেই আব্দুল আউয়ালের কথা বলছি, যিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ২৯ তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।
এবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু বলা যাক। আমরা মনে করি যাদের বাবার টাকা আছে তারাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। অর্থাৎ সেখানে মেধাবিরা পড়েনা বরং টাকাওয়ালা বাবার ছেলে মেয়েরাই পড়াশোনা করে। আর তারা জীবনে কোথাও মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারবেনা।
কিন্তু দুর্ভাগ্য যাদের মাঝে এমন ভিত্তিহীন চিন্তা কাজ করে তাদের এমন চিন্তাকেও মুচড়ে ভেঙে দিলেন ওয়ালিদ বিন কাশেম। যিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেও ৩৪ তম বিসিএসে প্রথম হয়ে তাক লাগিয়ে দেন। এবার ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন আউয়াল আর ওয়ালিদের এমন চমকপ্রদ সাফল্য কী প্রমান করছে? ২৯ তম এবং ৩৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় কি দেশের পাবলিক বিশ্বব্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেনি?
নিশ্চয়ই, অংশগ্রহণ করেছে কিন্তু আউয়াল এবং ওয়ালিদের পরিশ্রমের কাছে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি শিক্ষার্থীরা হার মেনেছে। আর এ থেকেই প্রমাণ হচ্ছে জীবনে নিজেকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে বিশ্ববিদ্যালয় নয় কঠোর পরিশ্রমই একমাত্র হাতিয়ার।
এবার অনেকে আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তো প্রতিবছর দলে দলে শিক্ষার্থী বিসিএসসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকে তাহলে আপনি তাদের কিভাবে মূল্যায়ণ করবেন। এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া একটি সাফল্য তবে এ সাফল্য কারো পুরো জীবনের সাফল্য নির্ণয় করতে পারেনা।
আর যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাল ভাল স্থানে নিজেকে ফুটিয়ে তোলে তারা তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জোরে করেনা বরং নিজেদের অধ্যবসায়ের জোরে করে। যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মানেই সাফল্যকে ছিনিয়ে নেওয়া হতো তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরাই বিসিএস ক্যাডার হয়ে যেত। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমি এখানে বিসিএসকে কেন বারবার টানছি। আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সকল মানুষের কাছে বিসিএস হচ্ছে মেধাবিদের বাছাই করার সর্বোচ্চ মানদণ্ড তাই আমি সর্বোচ্চ মানদণ্ড দিয়ে অধ্যবসায়ীদের বিচার করতে কার্পণ্য করিনি।
পরিশেষে, এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, আলোকিত জীবন ও স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়তে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন সেটা মূখ্য প্রভাবক নয় বরং অধ্যবসায়ই মূখ্য প্রভাবক। তাই আপনি যেখানেই থাকুন না কেন লক্ষ্যকে স্থির করে আত্মবিশ্বাসের সাথে অধ্যবসায় চালিয়ে যান এবং দিনশেষে দেখবেন আপনার জীবনে সাফল্যের শুক তারা উঁকি দিয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়