দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস আজ প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে
ক্যাম্পাসের আড্ডায় দেখিনা তোমায়, তুমি হারালে কোথায়? ভাবি তাই এখন, ফিরে আসবে কখন, ঠিক এই কবিতার মতোই যেনো আজকের দিনে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস। যে জায়গাগুলো প্রতিনিয়ত মেতে উঠতো হাজারো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সেগুলোই আজ পরিনত হয়েছে নীরব, নিস্তব্ধতায়। যেন কোথাও কেউ নেই।
দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস যেনো আজ প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে। চারদিকে সুনসান। নেই সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে যাওয়ার তাড়া, নেই কোনো অ্যাসাইনন্টমেন্ট, প্রেজেন্টেশন। নেই ক্লান্ত দুপুরে হলের ডাইনিং এ খাওয়ার সিরিয়াল ধরা। এক করোনাভাইরাসই কেমন জানি এলোমেলো করে ফেললো সবকিছুই। প্রতিটি শিক্ষার্থী অবস্থান করছে নিজ নিজ বাড়িতে। সবার মনে যেন একটাই প্রশ্ন কতদিন তো হলো! এর শেষ কোথায়?
দেড় মাস হতে চললো, বন্ধ আছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের ফলে সর্তকাতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এই মহামারী ভাইরাসের সংক্রমন থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাই শিক্ষার্থীরা এখন পালন করছে হোম কোয়ারের্ন্টাইন। বাড়িতে বসে কেমন কাটছে শিক্ষার্থীদের সময়? কিভাবে তারা পার করছেন এই অফুরন্ত অবসর? জানতে কথা বলেছিলাম কয়েকজন ক্যাম্পাসিয়ান এর সাথে।
এ বিষয়ে সরকারী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী কথা রহমান বলেন, সব ছুটিই আনন্দের হয় না। এমন ছুটি তো চাই নি আমরা। সময় একদমই কাটছে না। বাড়িতে এসেও গৃহবন্দী। কোথাও যেতে পারছি না। এমন একটা সময় যখন সোস্যাল মিডিয়াতেও আর ভালো লাগছে না। তাই পরিবারের মানুষদের সাথে গল্পগুজব করেই পার করছি এই সময়। এছাড়াও মাঝে মাঝে রান্নাবান্নার কাজেও সময় ব্যায় করছি।
হোম কোয়ারেন্টাইন জীবনের মানে শিখিয়ে দিলো উল্লেখ করে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মামুন সোহাগ বলেন, আমাদের ব্যস্ততম জীবন যে এতটুকু ছোট, সেটারই একটা বাস্তব নমুনা আজকালের হোম কোয়ারের্ন্টাইন। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে ক্লাস, বাসা করতে করতে দিন চলে যেতো। এখন গ্রামে এসেছি। অনেকদিন পর বের হলাম, তবে গ্রামেও কোনো শান্তি নেই। সবাই দূরে থাকি। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মেনে আমরা সবাই বেশ দূরে। মহামারি পার করে আমরা আবার ফিরে পাবো আগের দেশ, আগের ব্যস্ততা। এ আমার বড় আশা!
এ বিষয়ে জানতে আরো কথা বলেছিলাম হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জান্নাত আলহামরার সাথে। তিনি বলেন, কিছুই ভালো লাগছে না এভাবে। সব কিছুই কেমন একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে যাচ্ছে। বাড়িতে থেকে পরিবারের পরিজনের সাথে গল্প, টিভি দেখা ও বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় গ্রন্থ পড়েই পার করছি বেশিরভাগ সময়।ক্যাম্পাসের স্মৃতিচারণায় তিনি বলেন, মনে পড়ে ক্লাস শেষে সবার আড্ডা, গ্রুপ স্টাডি এবং স্নেহের ছোট ভাই-বোনদের কথা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেবলীনা চন্দ বলেন, একদমই ভালো কাটছে না সময়গুলো দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।গল্পের বই পড়ে, টিভি দেখেই সময় পার করছি।খুব ইচ্ছে করছে ফিরে যাই প্রাণের ক্যাম্পাসে কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে যাওয়া যাবে না।
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) আরেক শিক্ষার্থী নওশিন সরকার বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে, প্রিয় মানুষদের রক্ষা করার জন্যই সেলফ কোয়ারের্ন্টাইনে আছি। ব্যস্ততার কারণে নিজের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে এত দীর্ঘ সময় কাটানোর সুযোগ খুব একটা হয় না তাই উৎকণ্ঠা সরিয়ে রেখে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করছি। বিভিন্ন রকমের রান্না করছি, পরিবারের সবার সাথে গল্প আড্ডা। পড়াশুনা তো চলছেই। আবার শরীর ও মন সুস্থ এবং ভালো রাখার জন্য নিয়মিত মেডিটেশন-ইয়োগা করছি।করোনাভাইরাসের কারণে আমরা সৃষ্টিকর্তাকে বেশি বেশি মনে করছি।
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে আল্লাহকে স্মরণ করছি। ক্যাম্পাসের স্মৃতি চারণায় তিনি বলেন, যত শীঘ্রই সম্ভব ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাই। এত দিন ঘরবন্দী থাকতে অবশ্যই ভালো লাগছে না।ক্যাম্পাস,ক্লাস,হৈ-হুল্লোড়,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াকে সবচেয়ে বেশি মিস করছি।'
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ