শুভ হোক ভার্চুয়াল আদালতের নবযাত্রা
করোনা ভাইরাসকালীন সংকটকে সামনে রেখে আজ থেকে দেশের বিচার বিভাগের নবযাত্রা শুরু হলো ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেম দিয়ে। রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলেন।
ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালিত হবে ওয়েভ পোর্টাল দিয়ে। আবেদন, শুনানি সবই হবে এ পোর্টালে। ইমেইলে শুনানির সময় ও ভিডিও কনফারেন্সের লিংক পাঠানো হবে আইনজীবীকে। এসএমএসে দেওয়া হবে অ্যালারট। নির্দিষ্ট সময়ে বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা যুক্ত হবে ভিডিও কনফারেন্সে। শুরুতে এ পদ্ধতিতে শুধু জামিন আবেদন দাখিল, শুনানি ও বেইল বন্ড দাখিলের সুযোগ পাবেন আইনজীবীরা। পরে যুক্ত হতে পারে অন্যান্য বিষয়ও।
বেশ কদিন ধরেই উচ্চ আদালতের একদল তরুণ মেধাবী আইনজীবীরা এনিয়ে গবেষণাধর্মী তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছে সোস্যাল মিডিয়ায়। তারা তথ্যভিত্তিক প্রচুর ডিস্কাশন করেছে, যা সত্যিই অসাধারণ। সুপ্রিম কোর্ট বারের তরুণ সম্পাদক মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে এনিয়ে কনভিন্স করতে পেরেছে। বারের সভাপতির টিমটাও ভালো ছিল।
গত ২৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট সভায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় ভার্চুয়াল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক সংস্কারসংক্রান্ত বিশেষ কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি এ সংক্রান্ত আইনি জটিলতাগুলো দূরীকরণে উদ্যোগ নেন। ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেম হাইকোর্ট রুলসে অন্তর্ভুক্ত করতে হাইকোর্ট রুলস সংশোধনে ৫ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়। আর আজ রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলেন।
ন্যায়বিচারে প্রযুক্তির ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর পেছনের সবাই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কেননা হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী মানুষ তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। মামলার জট ও দীর্ঘসূত্রিতায় নিস্পেষিত বিচারপ্রার্থীরা এর সুফল যেন পায়। গুটিকয়েক সুবিধাভোগী যাতে এই প্রযুক্তির একচ্ছত্র বেনিফিশিয়ারী না হয়। যারা প্রযুক্তি থেকে একটু দূরে আছেন, সেই সব আইনজীবীরাও যাতে এর সুফল পায়।
সেজন্যে দ্রুতগতি, সহজলভ্য, নিরবিচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী ইন্টারনেটের জোগান দিতে হবে। জুনিয়র আইনজীবীদেরকে প্রয়োজনে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার কেনার সহায়তা দিতে হবে। মামলার সিরিয়াল পেতে যাতে কোন দূর্নীতি না হয়, সেটা কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে।
যেহেতু এই ভার্চুয়াল কোর্ট অনেকটা ‘অ-উন্মু্ক্ত’, তাই সর্বাগ্রে এর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটা মামলার তথ্য জনগণের জ্ঞাতার্থে উন্মুক্ত রাখতে হবে। যাতে করে এই ‘অ-উন্মু্ক্ত’ বিচার কার্যক্রমের সুযোগে কোন দাগী, শীর্ষ সন্ত্রাসী কিংবা ক্ষমতাধর মহা-অপরাধীরা আইনের চোখে ধুলা দিয়ে বের না হয়ে যায়। আর এটা শুধু করোনাকালীন সময়েই নয়, বরং সবসময়ের জন্য প্রযুক্তির সুবিধার সংরক্ষণ করতে হবে। এই মহতি উদ্যোগ সফল হোক।