বর্বর ও বেপরোয়া রোহিঙ্গারা, মানবতার প্রতিদান লাশ
উদারতার পরিচয় দিয়ে খাল কেটে যে কুমির এনেছিল তার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে প্রতিদানস্বরুপ। সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে ভয়াবহ করোনায় সারাবিশ্বে যে আতংক তার দ্বিগুণ আতংকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার স্থানীয় মানুষ। বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর হার কমলেও ইভেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও আপনি বাঁচার একটা আশা থাকে কিন্তু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে ধরা পড়লে কি আধো বাঁচার কোন উপায় কি আছে? প্রশ্ন থেকে যায় এইখানেই।
উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে পরম আশ্রয় দিয়ে কেউ কেউ অনেক বড় বড় খেতাব ও অর্জন করলেন। মুসলিম হিসেবে না হলেও মানবতার খাতিরে বাংলাদেশ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল সর্বোচ্চোটা দিয়ে। বিভিন্ন সামাজিক ব্যক্তিবর্গ, সমাজ সেবক, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন মহলের লোক তাদের পাশে এসেছিল বিশ্বমানবতার খাতিরে।তাহলে অবশ্যই তার প্রতিদান কি?
হ্যা প্রশ্ন এখানে তাহলে প্রতিদান কি? উত্তর নিতে আর অপেক্ষা করা লাগছে না। প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের লাশ কি প্রতিদান নয়!গুম করে কারো লাশ পাওয়া যায় আর কারো লাশও পাওয়া যায় না, তা কি প্রতিদান নই! আবার মাঝে মাঝে ভাগ্যক্রমে কেউ কেউ ফিরেও আসে দশ কিংবা বিশ লাখ টাকার বিনিময়ে। জ্বী! নিশ্চয়ই প্রতিদানের খবরাখবর পত্রিকার পাতা উল্টালেই পাবেন।
নিরপরাধ এক কৃষকের লাশ ফেরত নিয়েই তাহলে তাদের মহত প্রতিদানের বিবরণ দিচ্ছি। মুক্তিপণ না পেয়ে অপহৃত কৃষককে হত্যা করলো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার ভোররাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রোহিঙ্গা ক্যাম্প (২২ নম্বর) উনছিপ্রাং পুটিবনিয়ার পশ্চিমে ছনখোলা থেকে ওই কৃষকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। (দৈনিক ইত্তেফাক, মে ১,২০২০) যাক অন্তত লাশ টা ফেরত পাওয়া গেলো।
আবার তাদের দ্বারা হয় না এমন কোন কর্মকণ্ডের ইয়াত্তা নেই তার কিছু নমুনা.. কক্সবাজারের শিবিরে সক্রিয় ১৪ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। ইয়াবা, মানব পাচার ও হাটবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে অন্তত ১৪টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। চলছে অস্ত্রের মহড়াও। গত সাড়ে চার মাসে খুন হয়েছে ৩২ রোহিঙ্গা। অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা অপরাধও বাড়ছে। (প্রথম আলো ২৭ মে ২০১৯)
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত ১৪: বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১ জন। (ভয়েস অব আমেরিকা, ৪ মে, ২০২০)
আরো বেশি হিংস্রতা দেখিয়ে প্রতিদান দিয়েছে কিভাবে জানেন? ওমর ফারুক নামে এক যুবককে হত্যা করে। মুখে খাবার তুলে দেয়া উপকারীকেই হত্যা করলো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রাণ বাঁচাতে যখন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আসে, তখন তাদের সাহায্য করার জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিলেন নিহত মোহাম্মদ ওমর ফারুক। (আগস্ট ২৩, ২০১৯, রিপোর্ট ঢাকা ট্রিবিউন)
সব চেয়ে বেশি আতংকের যে খবর তা কি জানেন? আমাদের প্রশাসন নিয়মিত হিমসিম খাচ্ছে এই সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে আর হতাহত হবার খবর তো লেগেই আছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবাবিরোধী অভিযানের সময় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। (জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোর.কম ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯)
এই সন্ত্রাসী, বর্বর রোহিঙ্গা তাদের কর্মকাণ্ড এমন সব নিখুতভাবে করছে তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে গহীন পাহাড়কে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে তৎপর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কারণে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী দুর্গম পাহাড়ে তাদের বেশ কয়েকটি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
পুলিশের তথ্য মতে, টেকনাফের শালবাগান এলাকায় আস্তানা বানিয়েছে ১৫টির বেশি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ। এসব সন্ত্রাসীরা লোকালয়ে এসে খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি এবং ডাকাতিসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করে নিরাপদে এসব পাহাড়ি আস্তানায় সটকে পড়ে।
প্রতিদানের লিষ্টটা অনেক দীর্ঘ যা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না।
তাহলে কি এই প্রতিদানের প্রতিকার নাই? প্রশ্ন এখন স্থানীয় জনগণের। তাই এখন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার মানুষ করোনা নিয়ে যতটা না সর্তক তার চাইতে হাজার গুন আতংকিত কখন যে গুম হইয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসা নিয়ে।
এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে আরেকটা হুমকি হচ্ছে, গত ২০১৮ সালের ২৫ আগষ্ট রাস্তায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা এসে রাস্তা ব্লক করে মিছিল বের করে। এতে তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন এবং তাদের উপর বর্বরতা শুধুর ১ বছর পালন করেন। ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে তারা এই কর্মসূচি পালন করে।
পরের বছর ২০১৯ ছিল আরো ভয়াবহ প্রায় ৭/৮ লাখ রোহিঙ্গা এক সাথে মিলিত হয়ে দ্বিতীয় বার্ষিকী পালন করেন যা প্রশাসন হাজার চেষ্টা করেও এই গন গণ জমায়েত থামাতে পারেনি।
এই থেকে আসলে কি বুঝলেন আপনি? তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, তারা ইচ্ছা করলে যেকোন মুহূর্তে যেকোন কিছু করতে পারে যা প্রশাসনের জন্যে মারাত্মক হুমকি। এখন ভুলের মাশুল স্থানীয় জনগণকে দিতে হচ্ছে তবে অতি শীঘ্রই যে পুরো জাতিকে দিতে হবে না তার গ্যারান্টি কি?
আসুন সময় থাকতে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আর নয় মানবতার নামে লাশের ফেরত। এইবার চাই এই আতংক থেকে মুক্তি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়