৭৪ সালের সেই বাসন্তির বাড়িতে শেখ হাসিনা
সময়টা ৯১ সালের শেষ দিকের। রংপুর সফরে গেলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নেত্রীর সাথে আমরা সবাই উঠলাম সার্কিট হাউজে। ভোরে নাস্তা সেরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বের হতেন, ফিরতেন সন্ধ্যায়। সারাদিন মংগা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতেন। মিশে যেতেন মানুষের মাঝে। রংপুরের পুত্রবধূ হিসাবে বক্তৃতা করে মানুষকে নাড়া দিতেন। দুপুরে খেতেনও না। তবে আমাদের গাড়িতে পাঠাতেন কলা, রুটি। কয়েকদিন ছিলেন তিনি রংপুরে।
একদিন সন্ধ্যার পর আ্ড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা। এই সময় মৃণাল কান্তিদা ছুটে আসলেন। বললেন, আপা ডাকছে আপনাদেরকে। আমরা গেলাম। তিনি বললেন, কাল সবাইকে নিয়ে যাব পুরাতন ইতিহাস জানাতে। সেই ইতিহাস ৭৪ সালে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের। ভোরে উঠতে হবে সবাইকে। তিনি আমাদেরকে জানালেন, বাসন্তির বাড়িতে যাবেন। তারপর হাসতে হাসতে বললেন, এক্সক্লুইসিভ আগেই ফাঁস করে দিলাম। তৈরি থেকো। তারপর অনেক বিষয় নিয়ে গল্প আড্ডা দিলেন। পরদিন সকালে নাস্তা সেরে বের হলাম সবাই কুড়িগ্রামের চিলমারির পথে।
চিলমারি সদর থেকে মাঝিপাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে বাসন্তির বাস। ১৯৭৪ সালে বাসন্তির জালপরা ছবি প্রকাশিত হয়েছিলো দৈনিক ইত্তেফাকে। পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ছবিটি। বাংলাদেশের দুভিক্ষের মূর্তপ্রতীক হিসাবে এই ছবি বঙ্গবন্ধু সরকারকে বিব্রত করে।
মাঝিপাড়া বাসন্তির বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি যায় না। কিছুদূর হাঁটতে হবে। শেখ হাসিনা গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। আমরা পেছনে পেছনে। বাসন্তির ভাঙ্গা বাড়িতে পৌঁছলাম।
৭৪ সালে বাসন্তির ভাঙ্গা ঘর আগের মতোই আছে। তার পরনের শাড়িটি ছেড়া। কোনো পরিবর্তন নেই। শেখ হাসিনা বললেন, দেখ সবাই বাসন্তিকে নিয়ে বক্তৃতাই দিয়ে গেল। রাজনীতি করলো। কিন্তুু তার ভাগ্যর পরিবর্তন কেউ করলো না। তিনি নগদ ৩০ হাজার টাকা বাসন্তিকে দেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আনসার সাহেব,তিনি সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন,দলীয় সভানেত্রীকে জানালেন,সেই সময় তিনি এলাকায় লংগরখানা খুলেছিলেন। এই সময় দুইজন সাংবাদিক আসলেন ঢাকা থেকে। তারা বললেন, বন্যার খবর সংগ্রহ করছেন। তারাই বাসন্তিকে টাকা দিয়ে জাল পরা ছবিটি তোলেন পাটখেতে শাক তোলার সময়।
বাসন্তিকে কাছ থেকে দেখলাম। কথা বলতে এগিয়ে গেলাম আমি। পাশে থাকা মোনাজাত উদ্দিন বললেন, ও কথা বলতে পারে না। প্রতিবন্ধি। ৭৪ সালে ইত্তেফাকের রিপোর্টার শফিকুল কবীর ও ফটোগ্রাফার আফতার আহমেদ যান চিলমারিতে। আফতাব আহমেদের ছবি আর শফিকুল কবীরের লেখা প্রকাশিত হয়েছিলো ইত্তেফাকে।
চিলমারির নেতারা শেখ হাসিনাকে বলেন, তখন একটি সাধারণ কাপড়ের চেয়ে জালের দাম বেশি ছিলো। ছবিটি তোলা হয় পরিকল্পিতভাবে। শেখ হাসিনা আমাদেরকে বললেন, বাসন্তি ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের ভাবর্মর্তি ক্ষুন্নের অংশ ছিলো। আর কিছু না। বিশ্ববাসীর কাছে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তোলা ছবি নিয়েই হয়েছে সব রাজনীতি। এই কারনে পরের কোন সরকার বাসন্তির জন্য কিছু করেনি। আমাকেই করতে হচ্ছে। চিলামারী থেকে রংপুর ফিরে খবরটি ঢাকা পাঠাই। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা ঘর করে দিয়েছিলেন বাসন্তিকে।