০৬ মে ২০২০, ১৭:২৮

পশ্চিমারা চাঁদ-তারা দেখতে লকডাউন মানে না, আমরা ক্ষুধার জ্বালায়

  © টিডিসি ফটো

বিশ্বের সবকটি দেশ এখন করোনা নামক এক অদৃশ্য ভাইরাসে আক্রান্ত। চীনের উহান থেকে করোনা এখন আমাদের বাংলাদেশেও ভয়ংকর রূপ ধারন করতে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে লকডাউন। গোটা বিশ্ব আজ লকডাউন। চীন, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানির মত উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে করোনার কারনে এবং তারা লকডাউন কার্যকরের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে।

চীনের উহান নগরীর হুবেই প্রদেশ থেকে নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। অতপর লকডাউন প্রক্রিয়া চালু হল এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাত। আমাদের প্রিয় স্বদেশও আজ এ লকডাউন নামক সিস্টেম মানতে বাধ্য। আমরাও চেষ্টা করছি লকডাউন মানতে কিন্তু যদিও আমাদের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মত করে আমাদের দেশে লকডাউন ঘোষণা করার সাথে সাথেই তা শতভাগ কার্যকর হলো না। কেন হলো না?

প্রথমেই আসি, পরিবহন শ্রমিকদের ব্যাপারে। আমাদের ৭০ লাখ পরিবহন শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন, অথচ ‘পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল’ নামক তহবিলে যে গত এক বছরে (দৈনিক ৭০ টাকা করে) দুই হাজার কোটি টাকা চাঁদা উঠানো হল, আজ সে টাকা কোথায়? (তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১ মে,২০২০) আমাদের পরিবহন শ্রমিকদের তাদের ন্যায্য টাকার জন্য লকডাউনের মাঝেও আন্দোলন করতে হয়।

গার্মেন্টস শিল্প থেকে একটু ঘুরে আসা যাক। প্রতিদিনই নিউজে আসছে গাজীপুরে অথবা অন্য কোন স্থানে শ্রমিক বিক্ষোভ হচ্ছে তাদের বেতন-ভাতার দাবিতে। করোনার মাঝেও হঠাৎ করে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হল! ময়মনসিংহ থেকে শ্রমিকরা পায়ে হেটে দলবেঁধে ঢাকা যাচ্ছেন। কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার! সরকারের তরফ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পরও এখনও অনেক গার্মেন্টস মালিকগণ বেতন পরিশোধ করেননি। অনেকটা মুলা ঝুলানোর মত করেই, গার্মেন্টস মালিকদের ডাকে লকডাউন উপেক্ষা করে সারাদেশ থেকে শ্রমিকরা ছুটে আসতে বাধ্য হন। এত কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে আসার পরও বেতন পেতে ব্যর্থ হন অসহায় শ্রমিকরা।

শ্রমজীবী, ফেরিওয়ালা, রিকশাচালক, দিনমজুররা কেমন আছে? তাদের বক্তব্য অনেকটা এরকম- আমরা করোনাই মরব না, আমরা ক্ষুধায় মরব। আসলে তাদের ক্ষেত্রে অনেকটা এমন, ‘প্রয়োজন যেন আইন মানে না।’

আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খবর কে রাখে? যারা টিউশনি করে নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও সহযোগিতা করতেন। তারা না পারছেন কাউকে কিছু বলতে। তার উপর মেস ভাড়া দেওয়ার জন্য মেস মালিকের চাপ। একজন বিশ্ববিদ্যালয় (জাতীয়/পাবলিক) শিক্ষার্থীকে সমাজে সম্মানের চোখে দেখা হয়, তাই সে ছাত্রও তার আত্মসম্মানকে বিকিয়ে দিয়ে সহজেই কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারেন না।

ইউরোপের দেশগুলোর মানুষ যেখানে নীল আকাশ, চাঁদ, তারা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে ঘর থেকে বের হতে চায়। লকডাউন মানতে চায় না। আর আমরা সেখানে মানতে চাই না, ক্ষুধার জ্বালায়। এই হচ্ছে মৌলিক পার্থক্য।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমাদেরকে বাঁচতে হবে, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে লকডাউনও মানতে হবে। সেজন্য এ ধরনের জাতীয় দুর্যোগে সরকারকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে, সরকারী ত্রাণের সুষম বণ্টন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার জন্য উদ্ধুদ্ধ করা যেতে পারে। অন্যথায়, করোনা মহামারীকে জয় করা কঠিন হবে।

আমরা যেন ভুলে না যাই, একজন ভিআইপি, কিংবা আমার আপনার যেমন এ দেশে বেঁচে থাকার অধিকার, একজন দিনমজুর, শ্রমজীবীর ও ঠিক সমান অধিকারে অধিকারী। কারণ, রাষ্ট্র আমার, আপনার সবার। মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে কাউকে খাঁটো করে দেখার সুযোগ নেই।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়