পৃথিবীর সব মা সেরা, আমার মা-ও: আসিফ নজরুলের আবেগি স্ট্যাটাস
আমাদের ছিল অভাবের সংসার। অভাবী সংসারে কিছু কঠিন নিয়ম থাকে। আমাদেরও ছিল। যেমন- অতিরিক্ত মেধাবী হওয়ার কারণে ডিম পুরোটা পেত শুধু আমাদের বড় ভাই। আমাদের বাকী ভাই বোনের জন্য ডিম রান্না করা হতো ফেটে তরকারীর মতো করে। কর্ণ্ স্যুপের মতো দেখতে লাল রঙ্গের সেই তরকারী খুব প্রিয় ছিল আমাদের।
দুধের বেলায় নিয়ম ছিল আরো কড়া। দুধ পেতো শুধু অসুস্থরা। অসুস্থ মানে মা আর আমার সবচেয়ে ছোট বোন। ছোট বাসা। গোপন বলে কিছু থাকে না। প্রায়ই শুনতাম আম্মার সাথে আব্বার রাগারাগি। যে দুধ বরাদ্ধ থাকতো তার জন্য তা তিনি দিয়ে দিতেন পাড়ার এক হতদরিদ্র মহিলাকে।
আমার মা-র আরো নানা বৈশিষ্ট ছিল। যেমন- কারো উপার্জন নিয়ে সন্দেহ থাকলে তিনি তার থেকে কিছু খেতেন না। অসুখ বিসুখে আমার এক মামাতো ভাই ফলমূল নিয়ে এলে তিনি তা কখনো স্পর্শ করতেন না। আমার সেই মা-য়ের চতুর্থ মৃত্যুবাষিকী আজ। পৃথিবীতে সবার মা সেরা। আমার মা’ও। পৃথিবীতে সব সন্তান অপদার্থ, আমি আরো বেশী। আজ ভোরে যখন আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এসেছিল মনে হলো শেষ দিনগুলোতেও মা-র কাছে অল্প সময় থেকে চলে আসতাম। তিনি বলতেন- বাবারে আর তো পাবি না বেশীদিন।
মনে পরে আমার মা-র রগ বের হওয়া শীর্ণ হাত, ঘষাকাচের কালো চশমা, সামনে ধরা পত্রিকা পড়ছেন খুটিয়ে খুটিয়ে। কিংবা চিরতরে চলে যাওয়ার পর তার চুপসে যাওয়া দেহ, আর সেই স্মিতহাস্য মুখ।
যাদের মা আছে, দিনরাত লেপ্টে থাকেন। প্রাণ ভরে সেবা করেন। মা চলে যাওয়ার পর তীব্র দুঃখ কিছুটা হয়তো কমবে তাতে। আমার মা-র জন্য দোয়া করবেন।