করোনায় অনলাইনে পাঠদান ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের ভাবনা
করোনাভাইরাস মহামারির চরম বিপর্যয়কর সময়টি এখনো আসেনি বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্বাস করুন। চরম বিপর্যয় আসা এখনো বাকি।’
করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগ কোভিড-১৯ বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় আজ গোটা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। এই মহামারির উচ্চ ঝুঁকির তালিকার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ২৫ নম্বরে। ইতিমধ্যেই আক্রান্ত সংখ্যা ৪০০০ ছুঁই ছুঁই। আর প্রতিদিনই মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নাম।
করোনার ধাক্কায় মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যেই দাবানলের মত ছাড়িয়েছে। পৃথিবীর প্রায় ২১০ দেশের কেউই ছাড় পায়নি এই সংক্রমণের হাত থেকে। এখন পর্যন্ত ২৬ লক্ষেরও বেশী মানুষ আক্রান্ত।
রোজগার বন্ধ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে লকডাউন ছলছে। যার জেরে প্রবল সমস্যার মুখোমুখি পাড়ছেন প্রায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। তাদের মধ্যে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও ‘দিন আনা দিন খওয়া’ মানুষেরা। অতি দরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র এবং দরিদ্র সীমার ওপরে ছিল কিন্তু করোনার প্রভাবে তারাও দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে এসেছে। তাদের জমানো টাকায়ও ছোবল মেরেছে এই মহামারি।
রোজগার বন্ধ হওয়ার প্রতিদিনের দু’মুঠো অন্নের সন্ধান করা তাঁদের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মধ্যবিত্ত ও দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী এই সমস্ত মানষদের পাশে দাঁড়ানোর মত চোখে পড়ছে না তেমন কাউকে। যদিও সরকার কিছু ত্রাণ দিচ্ছেন। কিন্তু সেগুলো যথেষ্ট নয়।
এমতাবস্থায় কেউই ঠিক বলে উঠতে পারছে না যে ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে। তবে অবশ্যই কল্পনা করা যাচ্ছে যে, বেশিদিন সময় নিবে না শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সেই বিখ্যাত তৈলচিত্রের ‘দুর্ভিক্ষ’র রূপরেখা ফুটে উঠতে। গল্প উপন্যাস ইতিহাস জ্বলন্ত সাক্ষী যে আমাদের অঞ্চলের লোকেরা ক্ষুধার কষ্ট কি করে সয়ে এসেছে। এই কষ্ট হাজার বছরের পুরানো। তাই বুঝি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২৪ মার্চের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল যে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তা সাময়িকভাবে পূরণের লক্ষ্যে সম্মানিত শিক্ষকগণকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়।
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভে পুরো দেশ আজ ভয়াবহ নড়বড়ে অবস্থায়। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম একটি ভয়ানক চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ঢাকা শহরের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশও বেশি শিক্ষার্থী হলেন ঢাকা শহরের বাইরের।
প্রথমত, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা আসেন একদম মফস্বল শহর ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। আর দেশের এমন একটি মহামারি অবস্থায় মধ্যবিত্ত অনেকেরই আয়ের পথ খোলা নেই। এই যে মধ্যবিত্ত সমাজের যে ধাক্কা। এতে অনেকেই সামর্থ্যের দিক থেকে বড় ধরনের ধাক্কা সামলাচ্ছেল।
দ্বিতীয়ত, ঢাকা শহরের বাইরে যারা বর্তমানে অবস্থান করছেন তারা অনেকেই ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। হয়তো যারা জেলা সদরগুলোতে অবস্থান করছেন তারা কিছুটা পাচ্ছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেকেই বঞ্চিত।
তৃতীয়ত, অনেকেই হয়তো ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে অনলাইনে বিদ্যমান পাঠ্যক্রমের উপস্থিত হচ্ছে না। কারণ আর্থিক আয়ের পথ যেখানে বন্ধ। সেক্ষেত্রে খাওয়ার উপযুক্ত চাল বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৩৮ থেকে ৫০ টাকা, যা গত মাসে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকার মধ্যে ছিল। এটি একটি নতুন চ্যালেঞ্জ।
চতুর্থত, যারা হয়তো ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে পারছেন। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও সময় উপযোগী ইন্টারনেট পরিসেবা সমস্যার কারণে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছেন না।
এমন আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের। এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান স্যারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁর মূল্যবান মতামত প্রদান করেন।
তিনি বলেন, ‘‘অনলাইন পাঠদান’ কার্যক্রম ঠিক তখনই গ্রহণযোগ্যতা পাবে যখন প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবে। যদি একজন শিক্ষার্থীও এই পাঠদান থেকে বঞ্চিত হয়। তবে এটি চরম বৈষম্যমূলক একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যেটা কখনো একটি গনতন্ত্র রাষ্ট্রে বা কোন সভ্য সমাজে গ্রহীত হতে পারে না। কারণ প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর রয়েছে সমান সুযোগ, সেই সমান সুযোগের স্থানটি যদি নষ্ট হয় তবে সেই ধরনের কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত বলে অন্ততপক্ষে আমার কাছে মনে হয় না। যারা দরিদ্র, মধ্যবিত্ত যাদের ল্যাপটপ বা ব্যবহার উপযোগী ডিভাইস নেই, ইন্টারনেট নেই, গ্রামে বসে যারা ইন্টারনেটে এক্সেস করতে পারছে না। তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র যাদের এ সমস্ত সুবিধা আছে তাদেরকে নিয়ে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করা, তারা যদি ৫০ শতাংশের বেশিও হয় এমনকি ৭০ শতাংশের বেশি বা ৮০ শতাংশও হয়। বাকি যে ২০ শতাংশ বঞ্চিত রাষ্ট্র কখনই তাদের উপেক্ষা করতে পারে না, শিক্ষাব্যবস্থা তাদের উপেক্ষা করতে পারে না। উদাহরণ আমাদের জাতির পিতার, ‘তেশরা মার্চে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন জাতীয় সংসদের অধিবেশন বন্ধ ঘোষণা করলেন ভুট্টোর অনুরোধে- উনি বঙ্গবন্ধুর কথা রাখলেন না। যিনি মেজরিটি লিডার তার কথা রাখলেন না। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, আপনারা যারা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আপনারা যারা মাইনরিটি, আপনারা যদি আসেন অধিবেশনে এবং কথা বলেন। আমি আপনাদের বলছি, আপনারা যদি একজনও হয়ে থাকেন। আর এই একজনই যদি ন্যায্য কথা বলেন। সেই ন্যায্য কথাটি আমরা গ্রহণ করবো সেখানে মেজরিটি মাইনরিটির কোন প্রশ্ন নেই’। That is the spirit of Human Rights, this is the spirit of Democracy. সেই চেতনা আমাদের ধারন করতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এটা ঠিক। পরবর্তীতে রাষ্ট্র চিন্তা-ভাবনা করে এই ক্ষতি যে পুষিয়ে নিতে পারবে না, তা নয়। কারণ, যখন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলে। সেই পুরো শিক্ষাবছরটা কিন্তু আমরা নষ্ট করেছি। পরে রাষ্ট্র বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে পুষিয়ে নিয়েছেন। সুতরাং, এখন মূখ্য বিষয় হলো টিকে থাকা, বেঁচে থাকা, করোনাকে বিতাড়িত করা ও জয়ী হওয়া। একাত্তরের যেমন বেঁচে থেকে লড়াই করা ছিল মূখ্য বর্তমান পরিস্থিতিতেও বেঁচে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করাটাই অতীব জরুরী। তবে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এর যিনি বর্তমান চেয়ারম্যান তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সারাটা জীবন কাটিয়েছেন। উনি অন্ততপক্ষে বুঝবেন যে শিক্ষা ব্যবস্থার ভিতরে এই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ তিনি করতে পারেন না। তাঁর হাত দিয়ে এমন বৈষম্যমূলক আচরণ হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে’’।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কথা বিবেচনা করে দেশের যে অবস্থার অনুমান করা যাচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু না হলেও খাদ্যের অভাবে মৃত্যু নিশ্চিত অনেকেরই।
এমন একটা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পাঠদান সফলতার মুখ দেখবে কিনা বলা খুবই মুশকিল। তবে হ্যাঁ যদি কিছু চ্যালেঞ্জ যথাযথ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেন এবং সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তাহলে অবশ্যই আশা করা যায় যে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম সফলতার মুখ দেখবে। যথা: ফাইনান্সিয়াল ও টেকনলজিক্যাল চ্যালেঞ্জ।
যেহেতু অনলাইন কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে পরিচালনা করতে পুরোপুরি প্রস্তুত নয় কেউই। এক্ষেত্রে অনন্ত ১/২ মাস অপেক্ষা করা যেতে পারে। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় এবং সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যদি এই মহামারি ৬মাস/ ১বছর পর্যন্ত বর্ধিত হয়।
তখন ইউজিসির পরামর্শক্রমে একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর গভীরভাবে পর্যালোচনা করে একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু ‘অনলাইন পাঠদান’র মূখ্য উদ্দেশ্য যেনো কোনভাবেই অর্থ লাভের পন্থায় না রূপান্তর হয়। সেই দিকেও প্রখর দৃষ্টি রাখতে হবে।
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যে ধাক্কা সামলাচ্ছেন অর্থনৈতিক ভাবে এই মহামারি করোনায়; সেই মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন দিয়ে, সঙ্গে পরিবার পরিচালনা করা যে কতটা কষ্ট সাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে; এটা খাতা-কলমে হিসাব করে দেখানো অসম্ভব ব্যাপার।
সুতরাং, কতৃপক্ষের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, মধ্যবিত্তদের মধ্যে দুই শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। মহামারির জন্য অনেক পরিবারেরই আয়ের পথটি বন্ধ, অনেকেই নিজে টিউশনি করে বা বৃত্তির টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়ন করতেন, তাও বন্ধ। সেক্ষেত্রে তাদেরকে ভিন্নভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রয়োজনবোধে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে অনলাইন ক্লাস করার সুযোগ বা সুবিধা অনেকেরই নেই। তার যেমন একদিকে অর্থ সংকট, অপরদিকে তেমনি ইন্টারনেট সংযোগের বা সার্ভিসের বিরাট সমস্যা। এইসব প্রেক্ষাপট গভীর ভাবে বিবেচনার মত বিষয়। দূর গ্রামের যারা অনলাইন ক্লাসে আসতে পারছে না তাদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ বা সংযোগ স্থাপন করা যায়; আর একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর কোন দেশই কিন্তু এমন সামগ্রিক ভাবে অনলাইন পাঠদানে হুট করেই যায়নি। তারা ব্যপকভাবে প্রস্ততি নিয়েই গেছেন।
তাই যারা আজ উন্নত দেশের তুলনা দিচ্ছেন যে, বিদেশের ভালো বিশ্ববিদ্যলয় গুলোতে অনলাইন শিক্ষাকাকার্যক্রম চালানো হয়। এটা ভবের ঘরে চুরি করার মত! কারণ বিদেশে তাঁরা কখনো ভাবেনি যে বাসায় বসে ফোনে কথা স্পট বুঝা যাবে না। যেটা আমদের মফস্বল শহরে হরহামেশার ঘটনা।
অনলাইনে পাঠদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মূখ্য সমস্যা হলো নেটওয়ার্ক সার্ভিস যুগোপযোগী নয়। তারপর অনেকের ল্যাপটপ নেই, ফোন আছে কিন্তু ফোনে জুম অ্যাপ বা যে সকল অ্যাপ ব্যবহার করছে সবাই, সেটি হয়তো সার্পোট করছে না। যিনি এগুলো ব্যবহার করছেন, সে শিক্ষার্থী হোক বা শিক্ষক। তারা এগুলো সাথে পরিচিত নয়। হয়তো পরিচিত হওয়া যাবে। কিন্তু যদি নেটওয়ার্কই না থাকে বা দুর্বল হয় নেটওয়ার্ক সার্ভিস, তবে কি করে সম্ভব পরিচিত হওয়া তা আমার বোধগম্য নয়।
পরিশেষে বলা যায় ‘ইউজিসি’ ও ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ কর্তৃপক্ষ সত্যি যদি চান যে সকল শিক্ষার্থীরা সফলভাবে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুক। তবে অবশ্যই অতিদ্রুত দেশের প্রান্তিক গ্রামে ও মফস্বল শহরে নেটওয়ার্ক সার্ভিস যুগোপযোগী করতে হবে। প্রয়োজন বোধে কতৃপক্ষ মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানির সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতে জরুরি পরিষেবা চালু করতে পারে। কারণ এখন একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হলো ফোন নেটওয়ার্ক। কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিকার পক্ষে উদ্যোগী হন তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই উন্নতি ঘটাতে পারে। সাথে ইন্টারনেট প্যাকেজ গুলোর দামও সকলের সাধ্যের মধ্যে আনতে পারে। যাদের যুগোপযোগী ডিভাইস নেই সেটাও বিতাড়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন।
অবশ্যই এতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থে যোগান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষর তেমন কোন আসবাবপত্র ব্যবহার হচ্ছে না, যেমনঃ এসি, ফ্যান, লাইট, কম্পিউটার আরো অনেক বৈদ্যুতিক জিনিস। তাই তাদের বর্তমান খরচও কম। এই থেকে আসতে পারে বড় ধরনের একটা অর্থের যোগান। এই সকল সমস্যাই আস্তে আস্তে সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলা মনে করি।
শুধু বিনীত ভাবে বলতে চাই, পরিপূর্ণ সমস্যার সমাধান না করে যদি ক্ষুদ্রতম ত্রুটি নিয়েও অনলাইন পাঠদান পরিচালিত হয় তবে খুব শীঘ্রই যে এই কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পরবে। এটা আমাদের পারিপাশ্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে অতি সহজেই বলে দিতে পারে যে কেউ। এর জন্য গ্রহ- নক্ষতের হিসাব জানা প্রয়োজন নয়।
অবশ্যই মানবিক হতে হবে ইউজিসিকে, সাথে বিনয়ী। কোন মতেই অমানবিক আচরণ করা যাবে না। দেশের এই ক্রন্তিকালে। রাষ্ট্র কতটুকু মানবিক ও বিনয়ী এটাই আমরা স্বচক্ষে দেখতে পারবো ইউজিসির সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। আশা করছি সুবিধা বঞ্চিত যারা আছেন সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যাওয়াই যথার্থ বলে বিবেচনা করবে ইউজিসি।
এমুহুর্তে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যৌক্তিক হবে না। তাই পূর্ণাঙ্গভাবে সকল বিষয় মাথায় রেখে আমাদের অগ্রসরের চিন্তা করতে হবে। কারণ এই দুর্বল নেটওয়ার্ক ও চরম ব্যস্ততাকে সঙ্গে নিয়ে হয়তো এই অনলাইনে পাঠদান আদৌ শুরু করা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। হলেও কতটা সর্বজনীন হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
শনিবার, ১৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশন শোক প্রস্তাবে অংশ নিয়ে সমাপনী বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বোরো মৌসুমে ধান কাটতে কৃষক ও দিনমজুরদের পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন’। রাষ্ট্র প্রধানের এই আহ্বানে কিছুটা হলেও বুঝাতে পারা যায় যে রাষ্ট্র এখন শিক্ষা কার্যক্রম থেকেও অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে খাদ্যকে।
কারন, আমাদের দেশে ‘খাদ্যের বিনিময় শিক্ষা কর্মসুচী’ চালু ৯৩’ থেকে। তাই রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তাড়াহুড়োর বশবর্তী হয়ে ভুল কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। যাতে করে আবার কোন ‘রফিক আজাদ’র জন্ম হোক যে আবারও তার জ্বালাময়ী কষ্ঠে বলে উঠুক, “ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো”।
‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’র ১৫নং অনুচ্ছেদ- (মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা) রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তি ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়: (ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা;
যেহেতু, রাষ্ট্রের দ্বারা স্বীকৃতি জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ ব্যবস্থা গুলোর প্রথমেই ‘অন্ন’ তার পর ধারাবাহিকভাবে চতুর্থ অবস্থানে ‘শিক্ষা’। সেহেতু, বেঁচে থাকা যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে শিক্ষা সত্যিই বিলাসিতাকেও হার মানায়!
আশা করছি আর কোন ‘করুনাকান্ত’কে যেনো করোনায় আক্রান্ত না হতে হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও মানবাধিকার বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
মেইল: ranjanchowdhury74@gmail.com