শিক্ষক মহোদয়ের ভুল: আমাদের মনোভাব

  © ভিডিও থেকে

স্বীকার্য
আপনি অবশ্যই স্বীকার করবেন যে মানুষ মাত্রই ভুলের উর্ধ্বে নয়। তবে শিক্ষকগোষ্ঠীর ভুল হলে তো মান থাকে? ক্ষমার অযোগ্য তিনি! কথায় আছে একটি ছবি হাজারো কথা বলে। স্থির চিত্রটি যদি আপনি দেখেন তাহলে সহজেই বলতে পারবেন, শিক্ষক মহোদয় অংক পারে না! পারে না তা ক্লাস নিচ্ছে কেন? এদের জন্যই জাতির এই দুর্দিন, হেন তেন কত কথা!

ভুল কোথায় হয়েছে?
এখন আসি অংকতে। ভিডিও দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন ঠিক কোথায় তাঁর ভুল হয়েছে। সেখানে দেখা যায় তিনি দশকের ঘরের সংখ্যাগুলো যোগ করার সময় ঠিক এভাবে করেছেন, ৫ আর ১ = ৩। ভুলটি এখানেই থেকে গেল এবং এর ভিত্তিতে অংক শেষ করলেন। তিনি নিশ্চয়ই ৫+১=৩ নয় বরং ৬ হবে এটা অবশ্যই জেনে থাকবেন, না হলে সমাধানের সব জায়গাতে ভুল থাকত। শিক্ষক মহোদয়ের শিখন কৌশল অপূর্ব। তবে তিনি যোগটি রিভিশন দিলে হয়ত ভুলটা ধরা পড়ত। এখানে তার একটা ঘাটতি থেকে গিয়েছে।

কারণ
দশকের ঘরে তিনটি সংখ্যা ছিল ১, ৫ এবং ৩। তিনি যখন ১+৫=৩ বললেন সম্ভবত তার মস্তিষ্ক নিচে থাকা ৩টির দিকে নিবেশিত ছিল। ‘এ্যাবসেন্স অব মাইন্ড’ অথবা ‘এ্যাক্ট অন সাইট’ এর ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে। অথবা অনলাইন ক্লাস নেওয়াতে তিনি আলাদা চাপ অনুভব করেন তাঁর ‘স্কেপটিক মাইন্ড’ অথবা ‘কশ্যাচনেস অব বডি’ হয়তবা এটা বলছিল যে কোথাও ভুল হচ্ছে না তো! ঠিক এমন ক্ষেত্রে আমাদের ভুল হয়ে যায়। আর একটি কারণ থাকতে পারে তার এমন শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় অনভ্যস্ততা।

যে চিত্র আমরা দেখি সমাজে
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ব্যক্তি গড় গড় করে কথা বলেন অথচ তিনিই ক্যামেরার সামনে এক অক্ষরও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে পারেন না। আবার অনেকের মাইক্রোফোন হাতে নিলে হাত-পা কাঁপে এমন দৃশ্যও আমাদের অজানা নয়। এটাও পরিলক্ষিত হয় যে, কারো অনুপস্থিতিতে আমরা কথা বলতে পারি তাঁর উপস্থিতিতে আমাদের কথা বের হতেই চায় না।

এনজি শট
সিনেমাতে যারা অভিনয় করেন একটা দৃশ্য সম্পূর্ণ করতে তাদের বহুবার এনজি শট হয়ে যায়। তাদেরও ভুল হয়। পরিচালক মহোদয় আবার সেটি ঠিক করে নেন। শিক্ষক মহোদয়ের এমন ভুল হতে পারে কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তগণ এটা রিভিও কেন করেননি প্রশ্ন থেকে যায়!

আমাদের মানসিকতা
প্রথমে বলেছি একটি ছবি হাজারো কথা বলে যা লিখতে হাজারো পৃষ্ঠা ব্যয় হতে পারে। এরূপ স্থির চিত্র দেখে হয়ত আমাদের মানসিকতা শিক্ষকগোষ্ঠী সম্পর্কে খড়গ হস্ত। আর প্রশাসনও হয়তবা তাঁর পক্ষে থাকবেন কিনা জনরোষের চাপে সেটাও দুর্বোধ্য। ফলে শিক্ষকের রুটি রুজিও বন্ধ হতে পারে।

তাই শিক্ষক মহোদয়কে মানুষের কাতারে ফেলে তাঁঁর এ সামান্য ত্রুটি আমরা ক্ষমা করে দিই।

লেখক: প্রভাষক, যশোর সরকারি মহিলা কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ