করোনার লস টাইম বিবেচনায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি জরুরি
করোনায় লকডাউন শুরু হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম অব্যহত রাখার জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ে সংসদ টিভির মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাসের ব্যাবস্থা করেছে এবং কলেজগুলোকে বিভিন্ন কন্টেন্ট ও ভিডিও তৈরি করে সম্প্রচার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব জায়গায় যথাযথভাবে ইন্টারনেটের সংযোগ রয়েছে সেখানে শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহের সাথে ডিজিটাল ক্লাস উপভোগ করছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক ক্লাসের চেয়েও এখনে অধিক মনোযোগী হচ্ছে। আশার কথা হলো, বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল পাঠদানের যে নানামুখি উদ্যোগ তা এর মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিপূর্ণতা পাচ্ছে। কারণ আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাও এ পদ্ধতিতে ক্লাস গ্রহণে অভ্যস্ত হচ্ছে, যা স্বাভাবিক সময়ে ডিজিটাল ক্লাস গ্রহণে সহায়ক হবে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে করোনাকালীন শ্রেণী কার্যক্রমের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। এছাড়া শুধু শ্রেনী পাঠদান করা গেলেও যথাসময়ে পরীক্ষা নেয়া যাবে কিনা তা বলা অত্যন্ত দুরহ ব্যাপার।
ইতোমধ্যে ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে। যদি পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়, তবে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হওয়ার কারনে সেশন জটের সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনের বয়সসীমা থেকে এক বছর হারাতে পারে। বিশেষকরে উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সেশন জটের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
আবার করোনাকালীন অনেক চাকরিপ্রার্থীর বিশেষ করে যাদের বয়স শেষের দিকে তাদের বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই যেসব চাকরিপ্রার্থীদের শেষের দিকে তাদের জন্য করোনাকালের বিশেষ পরিস্থিতিকে ‘লস টাইম’ হিসেবে বিবেচনা করে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানোর চিন্তা করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়টিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করছে।
গত ২৬ মার্চের পর যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল; কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দিতে পারেনি, সেক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বিবেচনায় নেওয়া হবে। অর্থাৎ যাঁদের বয়স ২৬ মার্চের আগে ৩০ বছরের নিচে ছিল, তাঁদের বয়স এখন ৩০-এর বেশি হয়ে গেলেও ওই সময়ে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর্যায়ে ছিল সেগুলোতে বিশেষ বিবেচনায় তাঁরা অংশ নিতে পারবেন। করোনার পর সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি উল্লেখ করে দেওয়া হবে।
উপর্যুক্ত সিন্ধান্তকে অবশ্যই স্বাগত জানানোর আগে আরো কয়েকটি বিষয় নজরে আনতে হয়। এই প্রস্তাবে ২৬ মার্চকে একটা স্ট্যাটিক সময় ধরে যারা এর আগের বিজ্ঞপ্তিগুলোতে আবেদন করেছেন তারা করোনা পরবর্তী সময়ে সেসব পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তাহলে তাদের বয়স ৩০ বছরের নিচে হলেও করোনাকালীন সময়ে যেসময় পেত, তা তাদের জন্য কি বর্ধিত সময় হিসেবে দেওয়া হবে?
অর্থ্যাৎ কারো বয়স যদি ২৬ মার্চের আগে ২৭ বছর হয় তাহলে তিনি চাকুরির জন্য আরো তিন বছর আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু এই তিন বছরের মধ্যে করোনার জন্য তার হয়ত আট নয় মাস মাইনাস হয়ে যাবে। এই আট নয় মাস অর্থাৎ প্রায় এক বছর তিনি তার চাকরির বয়সসীমা থেকে বঞ্চিত হবেন। এ বিষয়ে উক্ত প্রস্তাবে কোনো সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট ছিল না। এখানে শুধু যাদের বয়স শেষের দিকে তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো হয়েছে।
আবার সেশন জটের কারণে শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষা শেষ করে তাদের চাকরিতে আবেদনের জন্য ৩০ বছরের মধ্যে প্রায় এক বছর কম সময় পাচ্ছে। তাই করোনা পরিস্থিতির কারণে শুধু যাদের বয়স শেষের দিকে তারা নয় শিক্ষার্থীসহ সবাই তাদের চাকুরীতে আবেদনের জন্য সীমিত ৩০ বছরের মধ্যে প্রায় এক (১) বছর হারাবে।
এছাড়া জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় প্রার্থীরা ৩২ বছর পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ সাধারণ বিসিএসে অংশগ্রহণকারী ৩০ বছর পর্যন্ত সুযোগ পাবেন। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংর্ঘষিক।
১৯৯১ সালের আগে দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে সেটা বাড়িয়ে করা হয় ৩০ বছর। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৮ বছর বর্তমানে গড় আয়ু বেড়ে দাড়িয়েছে ৭২.৩ বছর অর্থাৎ এ তিন দশকে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে প্রায় ১৪ বছর। তাই করোনাকালীন সকলের জন্য লস টাইম বিবেচনা করে চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো যেতে পারে।
ইতোমধ্যে চাকরিতে প্রবেশের জন্য বয়স ৩৫ করার জন্য শিক্ষার্থীরা এবং চাকরিপ্রার্থীরা দাবি করে আসছে। তাই করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে (বিসিএসসহ) প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হবে।
লেখক: প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম