বিজ্ঞানের মানুষ নয় বিজনেসের মানুষ— ‘গণস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে ভাবনা’
সারাজীবন বিজনেসের ছাত্র ছিলাম বিজ্ঞানটা তাই আসে না বললেই চলে। তবে যতটুকু বুঝেছি পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে তা হলো গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিটটি পরীক্ষা না দিতেই ফেলের তকমা পেয়ে গেলো। অনেকে অনেক কথা বলছে, এই কিট ৩০% পর্যন্ত ফলস পজিটিভ বা নেগেটিভ রেজাল্ট দিতে পারে তার মানে হলো ১০০টা পরীক্ষা করলে ৩০টা পর্যন্ত ভুল রেজাল্ট দিতে পারে। আর সেটা হলো এমন—
১) কারও করোনা হয়নি তার রেজাল্ট আসলো পজিটিভ। অর্থাৎ সে করোনা আক্রান্ত।
২) কারও করোনা হয়েছে কিন্তুু রেজাল্ট আসলো নেগেটিভ। অর্থাৎ আক্রান্ত হননি।
এখন আসি তাহলে এটা ব্যবহার করলে লাভ নাকি ক্ষতি?
যদি একজনও ফলস নেগেটিভ আসে এবং সে নিজেকে আক্রান্ত নয় ভেবে অবাধে ঘুরে বেড়ায় তাহলে পাড়া মহল্লাতো দূরের কথা দেশকে বিপদে ফেলার জন্য যথেষ্ট। তাহলে আমাদের কি করণীয় কিটটা গ্রহণ করবো নাকি করবো না?
এখন আসি আসল কথায়— আমরা যে পদ্ধতিতে টেস্ট করছি তার খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকা আর টেস্টের পরিমাণ। অন্যান্য দেশের তুলনায় অপ্রতুল। গণস্বাস্থ্যের কিটে সেই টেস্টে খরচ সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। তাহলে আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হলো গণস্বাস্থ্যের কিট দিয়ে আমরা ১০০ জনের টেস্ট করলাম খরচ (১০০×৫০০) ৫০০০০ টাকা। ১০০ টেস্টের মধ্যে ধরলাম ৩০ জনের ফলস নেগেটিভ আসছে তখন যেটা করতে হবে সেটা হলো ঐ ৩০ জনের আমরা প্রচলিত পদ্ধতিতে টেস্ট করাবো তখন খরচ ৩(০×১৫০০০) ৪৫০০০০ টাকা।
তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো ৫০০০০০ (৫০০০০+৪৫০০০০) টাকায় শতভাগ সঠিক পরীক্ষা। আর সেটা যদি না করি তাহলে প্রচলিত পদ্ধতিতে খরচটা দাড়াচ্ছে (১০০×১৫০০০) ১৫০০০০০ টাকা, যেটা উপরের পদ্ধতির চেয়ে ৩ গুণ। অনেকে বলতে পারেন গণস্বাস্থ্যের কিটে যে ৭০% পজিটিভ আসবে তাদেরতো অনেকের করোনা নাও থাকতে পারে সেক্ষেত্রে তারা যদি নিজেদের করোনা পজিটিভভেবে ঘরেই থাকে তাহলে খুব একটা ক্ষতি যে দেশের হবে সেটা আমার মনে হয় না।
আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো সেক্ষেত্রে লাভ ক্ষতির হিসাবটা অত্যন্ত জরুরী অতএব কোন পদ্ধতিকেই ব্যতিরেকে নয় বরং দুটো পদ্ধতির সমন্বিত সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাই ডাঃ বিজন সাহেব ও গণস্বাস্থ্যের এই উদ্ভাবনকে গ্রহণ না করা হবে হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলার মতই।
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়