করোনাভাইরাস সংকটে উৎসবহীন বৈশাখ
১৪২৬ বঙ্গাব্দ শেষে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের আগমন ঘটেছে, সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা, শুভ নববর্ষ। প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম দিনটিতে দেশব্যাপী যে আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে বরণ করা হয়, এবারের নতুন বছরে তা হয়নি মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে জনসমাগমের কারণে সকল অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি ঘরে বসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নববর্ষ উদযাপনের কথা বলা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে তরুণদের হলুদ পাঞ্জাবীর সাথে তরুণীদের গায়ে হলুদ শাড়ী, খোঁপায় ফুল গুজিয়ে নববর্ষ উদযাপন করা হয়নি প্রাণঘাতী করোনার কারনে। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান না হওয়ায় নতুন বছরের আগমন পানসে মনে হলেও বিদ্যমান করোনাভাইরাস সংকট প্রতিরোধের জন্য ঘরে থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপনই ছিল একমাত্র মাধ্যম।
কোভিড ১৯ এর ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত পৃথিবী। বাংলাদেশেও এ পর্যন্ত আটশ এর বেশি রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। তবে দিন দিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশব্যাপী আতংক বিরাজ করছে। সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ অফিস আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন। এই অবস্থায় বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য রমনার বটমূলে কিংবা সিআরবির শিরিষতলায় উদযাপনের সুযোগ এবার হয়নি। দেশব্যাপী বৈশাখী মেলার উৎসবও এবার হচ্ছে না। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলি খেলাসহ দেশব্যাপী এমন আরো ঐতিহ্যবাহী বহু আয়োজন বাতিল হয়ে গেছে।
গ্রাম কিংবা শহর বৈশাখী মেলা মানেই শিশু-কিশোর-তরুণ সহ সংস্কৃতিমনা মানুষদের কাছে বৎসরের অন্যতম সেরা উৎসব। বৈশাখী মেলাতে নানা রঙ্গের শরবত, ফুচকা-চটপটি, বাচ্চাদের খেলনা, গৃহস্থালীর কাজকর্মের প্রয়োজনীয় সামগ্রী, গ্রামীণ ঐতিহ্যের পিটাপুলি, হাতপাখা, মন্ডা-মিঠাই-সন্দেহ, তরমুজ, তরুণীদের কসমেটিকস, গাড়ী-চুরির দোকান সহ কত শত ব্যবসায়ীদের আয়োজন ভেস্তে গেছে। রঙ্গ-বাহারি সাজে তরুণ-তরুণীদের ঘুরাফেরা, বৈশাখী গানে মাতোয়ারা হওয়া সব আনন্দ উৎসবের ভাবনাকে মাটি চাপা দিয়ে গৃহবন্ধী হয়ে মানুষজনকে লড়তে হচ্ছে খোলা চোখে না দেখা ক্ষুদ্রাকৃতির প্রাণঘাতি ভাইরাসের বিরুদ্ধে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান জনসমাগম ছাড়া অনুষ্ঠিত হওয়ায় বছর জুড়ে বর্ষবরণের যে প্রস্তুতি সবই বেস্তে গেছে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী মেলায় লাখ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হরেক রকম পণ্যের পসড়া সাজিয়ে বসেন, কিন্তু এবার তাদের সব আয়োজন মাটিতে মিশে গেছে। অর্থনৈতিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এসকল ব্যবসায়ীরা। সেই সাথে নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে ঘরে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা শিশু-কিশোর সহ তরুণ-তরুণীদেরও স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।
সারা পৃথিবীর মানুষ কঠিন সময় পাড় করছে এখন। এক লাখ ষাট হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন বিশ লাখেরও বেশি মানুষ। মৃত্যু হারের তুলনায় সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও ভাইরাসটির কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় এবং ছোঁয়াছে প্রকৃতির হওয়ায় চিকিৎসা কার্যে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হওয়া সহ পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকার কারনে ঘরে থেকে রোগটিকে শরীরে বাসা বাধতে না দেওয়াই একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ একাধিক গবেষণায় বলা হয়েছে।
কোভিড ১৯ এর কারনে দেশব্যাপী পুরনো উদ্যোগে উৎসবমুখর পরিবেশে পহেলা বৈশাখ এবং বৈশাখী মেলা উদযাপন করা সম্ভব না হলেও ঘরে থেকে বিদ্যমান সংকট মোকাবেলা করে আবারো আমরা স্ব-স্ব কর্মে নিয়োজিত হতে পারি, প্রাণ খোলে শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি, করোনা কালে আমাদের মধ্যে যে মানবিকতা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের যে মানসিকতা তৈরী হয়েছে. করোনাভাইরাসের প্রকোপ শেষেও যেনো আমরা ততটাই মানবিক, আন্তরিক হওয়া সহ একজন সাচ্ছা দেশপ্রেমিক হয়ে দেশের সেবায় নিয়োজিত হতে পারি নতুন নববর্ষে আমাদের সে প্রত্যাশা।
লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)