১৭ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৩০

কলেরা থেকে করোনা: ইতিহাস যখন কথা বলে

আল সানি  © টিডিসি ফটো

১) ১৮৩২ সালে ইউরোপে ব্যাপক আকারে কলেরার মহামারী দেখা দেয়। ইতিহাসে এটি বেঙ্গল কলেরা প্যান্ডেমিক নামেই পরিচিত। বেঙ্গল শব্দটা যুক্ত হবার কারন হিসেবে পিটার স্ট্রিফল্যান্ড, আর জে ইভান্স ঊনবিংশ শতাব্দীর মহামারির ইতিহাসে তুল ধরেন; ইউরোপে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়লেও এর উতপত্তি ঘটেছিলো বাংলাদেশ থেকেই।

ইউরোপ উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই জ্ঞান বিজ্ঞান ব্যাপক উন্নতীর যাত্রা শুরু করে। চিকিৎসা, স্বাস্থ্য সব কিছুতে তারা দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিলো। হঠাত করেই এক অজানা রোগ আঘাত হানে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড, রাশিয়াসহ ইউরোপের বিশাল অঞ্চলে। বাড়তে থাকে লাশের মিছিল।

এই মহামারিতে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয় শহরের নিম্ন শ্রেণির মানুষের। শহরের ধনী শ্রেণী ভেবেছিলো এই রোগের আবিষ্কার হয়েছে নিম্ন শ্রেণীর মানুষ থেকেই। ফলে এসব নিম্নশ্রেণীর মানুষকে শহর থেকে বিদায় করা শুরু হয়, আর নিম্ন শ্রেনীর মানুষ ভাবতে থাকে ধনী শ্রেণীর মানুষরা তাদের হত্যার জন্য এই রোগ তাদের ভিতর ছড়িয়ে দিয়েছে। কলেরার প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে প্যারিসের নগর প্রধান ঘোষনা দেন এরকম অসভ্য রোগ ফ্রান্সের কাউকে আক্রমণ করবেনা, কারণ ফ্রান্সের সবাই প্রচন্ড সভ্য। অথচ কিছুদিন পরেই তার সমস্ত দর্প চূর্ন হয়ে যায় রাজপরিবারের একজন কলেরায় আক্রান্ত হবার পর।

২) এবার ২০২০ সালে আসি; সারা বিশ্বে করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও ইংল্যান্ড তখনো হালকাভাবে নিয়েছিল করোনাভাইরাসকে। ইতালীয়ান লীগ বন্ধ হয়ে গেছে, এরপর বহু আলোচনার পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থামানো হলেও মানুষকে ঘরে থাকার ব্যাপারে গুরুত্ব আরপ করেনি ইংল্যান্ড। ইউরোপে করোনার প্রকোপটা সবার আগে আচ পেয়েছিলো ইতালি। কিন্তু তারাতো প্রথম দিকে কোনো প্রকার সতর্কতো হয়নি। উপরন্ত দেশের সীমানা নিয়ন্ত্রণ কিংবা জনসমাগম কিছুই বন্ধ করেনি।

এর ফল তারা হাতে হাতে পেয়েছে। সবচেয়ে বেশী মৃত্যুবরণ করেছে ইউরোপে বিশেষ করে ইতালীতে। আক্রান্ত হয়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য। ইউরোপের জনগন চীনকে দেখে প্রথমে হেসেছে, তারা তাদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্থ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারবে এই বিশ্বাসে বলবৎ ছিলো। সেই বিশ্বাস উবে গেছে বহু আগেই।

৩) প্রতিনিয়ত শিক্ষা দিয়ে চলছে ইতিহাস আমাদের। কিন্তু আমরা ইতিহাস জানি কম, বুঝি আরো কম, আর এ থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকি যৎসামান্যই। ফলে আমরা সতর্ক হয় শেষ সময়ে; যখন নিজের ও আশেপাশের মানুষের ক্ষতি এড়ানোর সক্ষমতা আর আমাদের হাতে থাকেনা।

আমরা এটা খুব সহযে বিশ্বাস করে ফেলি থানকুনি, আদা চা কিংবা লবন চা খেলে অথবা গো-মূত্র পান করে করোনা দূর হয়ে যাবে! অথচ এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বিদেশ থেকে এসে ১৪ দিন একা থাকলে আপনি সবাইকে নিরাপদ রাখলেন, হাচি কাশির পর পরিস্কার হলে নিজে বাচলেন। আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ইতিহাস কথা বলে, সেই কথা না শুনলে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে আমার আপনার সবার জন্য।

লেখক: শিক্ষার্থী সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ