কৃষকের হাসি যেন বাংলাদেশের হাসি
কৃষি, শিল্প এবং সেবা নিয়ে দেশের অর্থনীতি ঘুরছে। করোনার কারণে বিভিন্ন সেক্টর যখন ধাক্কা খাচ্ছে, তখন আমাদের আশাবাদী করছে বাংলাদেশের কৃষি। করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে কৃষির অবদান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি আমাদের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। খাদ্য শস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংসস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিবছর বিভিন্ন মৌসুমে কৃষকের বঞ্চনা অসহায়ত্ব দেখে আসছি। যে অন্ন খেয়ে আমরা জীবন ধারণ করি, সেই সংগ্রামী কৃষকদের কষ্ট মানে প্রাণের কষ্ট। কৃষকদের অবহেলা মানে নিজ শিকড়ের প্রতি অবহেলা। এখন ধানের মৌসুম। বর্তমান সরকার কৃষির জন্য বড়ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন মৌসুমে কৃষকের হাসি যেন মলিন না হয়, কৃষি প্রণোদনা যেন প্রকৃত কৃষক পায় সেদিকে নজর দিতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেঁছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে।
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন (৪৩২.১১ লাখ মেট্রিক টন)’র লক্ষ্যমাত্রা (৪১৫.৭৪ লাখ মেট্রিক টন) ছাড়িয়ে গেছে। দেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ।
ভুট্টা উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪৬ লাখ মে. টন। নিবিড় চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। সবজি উৎপাদন বেড়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত এবং বিশ্বে সপ্তম। এবছর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ মেট্রিক টন। দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম এবং পেয়ারায় অষ্টম। আম উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। দারিদ্র্য, ঘনবসতি, নগরজীবনের নানা অনিশ্চয়তা আর জলবায়ুর পরিবর্তনের ভেতর বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও টিকে থাকার মূল জায়গাটি হচ্ছে ভূমি ও কৃষক সম্প্রদায়।
অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাছে বাংলাদেশ। কৃষক হারলে দেশ হারবে। কৃষকদের প্রতি সহযোগিতা মানে নিজেকে সহযোগিতা করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও কৃষি বিজ্ঞানীরা সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এসেছেন। সার্বিক সুবিধা যেন এদেশের কৃষকেরা ভোগ করতে পারে এই প্রত্যাশা করছি।
লেখক: প্রভাষক হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ