পুঁজিবাদ কখনো মানুষের কথা ভাবে না
মানলে বন্ধু না মানলে সভ্যতার শত্রু, দুনিয়ার বাজার খুলে দিতে হবে তাদের জন্য, দুনিয়ার সেরা মেধাকে আশ্রয় দিতে হবে তাদের দেশে, দুনিয়ার সেরা পণ্য পৌঁছাতে হবে তাদের দেশে, মানুষের জীবন-মরণের পরোয়া করা যাবে না, প্রভু আমার প্রিয় আমার গান গাঁইতে হবে সর্বক্ষণ। এটাই পুঁজিবাদের আদর্শের চাকা।
করোনা মোকাবেলায় শুঁয়ে পড়েছে একের পর এক পুঁজিবাদী দেশ। করোনা এসে বুঝিয়েছে পুঁজিবাদী দেশগুলোর সামাজিক কাঠামো কত নড়বড়ে। পুঁজিবাদ কখনো মানুষের কথা ভাবে না। কম সময়ে বেশি মুনাফা তাদের মুল উদ্দেশ্য। ফলে যার হাতে সম্পদ আছে সেই সম্পদ বাড়াচ্ছে আর যার হাতে সম্পদ নেই সে হচ্ছে আরো গরীব ।
কিন্তু করোনা তো গরীব বড়লোক দেখে আক্রমন করে না। এখন ধনী সমাজ বুঝেছে সমাজে গরীবের ভুমিকা যথেষ্ট। পুঁজিবাদী দেশের সরকারগুলো শুধু পুঁজির পেঁছনেই ছুটছে। ফলে আপদকালীন অসুখে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। গবেষণা, স্বাস্থ্যখাতে কোন লাভ নেই বলে এসব খাতে ক্রমশ বাজেট কমিয়েছে, এখন তার ফল ভুগতে হচ্ছে পুঁজিবাদী দেশগুলোকে। নগরায়নের লোভে আরো বেশি ব্যবসার জন্য কখনো তারা পরিবেশের কথা ভাবেনি, এখন সেই পরিবেশই আতঙ্কের কারণ।
সাধারণ মানুষ এখন বুঝতে পারছে বাজার সুখ দিতে পারে কিন্তু জীবন নয়। বেঁচে থাকতে গেলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দরকার, পরিবেশ বাঁচানো দরকার, ধনী-গরীব সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা থাকা দরকার। এখানেই আসছে সমাজতন্ত্রের কথা।
অর্থনীতির লালঝাণ্ডা এখন পুঁজিবাদী আমেরিকা থেকে সরে গেছে সমাজতান্ত্রিক চীন আর রাশিয়ার কাছে। সমাজতন্ত্রের ফর্মুলা মেনে প্রতিটি নাগরিকে নিয়ে করোনা মোকাবিলায় নেমেছিল চীন। সরকারী নিয়ন্ত্রণে করোনার কবোল থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ প্রতিটা নাগরিক পেয়েছে চিকিৎসা, এতে কোনো ধনী-গরীব দেখা হয়নি।
চীনের বার্ষিক বাজেটের একটা বড় পরিমান খরচ হয় গবেষণা, চিকিৎসা আর সামাজিক উন্নয়নে। এর ফল পেয়েছে তারা। ফলে মাত্র কয়েকদিনে তৈরি হয়েছে বিশালাকার হাসপাতাল, হয়তো গোপনে তৈরি হয়েছে ভ্যাক্সিনও, যার নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি ফার্মাসিটিক্যালের হাতে না দিয়ে সরকার সম্পুর্ণ হাতে নিয়েছে, যা আপদকালীন ওষুধ হিসেবে সবাই পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নির্ধারণে এখন শেষ কথা রাশিয়ার। তারাও সমাজতান্ত্রিকের ফর্মুলা মেনে প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছিল। তার ফলও হয়েছে সুদুরপ্রসারি।
অপরদিকে ইউরোপ আমেরিকাসহ সব পুঁজিবাদী দেশগুলো নুইয়ে পড়েছে। এ যেনো পুঁজিবাদ অর্থনীতির চাকা ভেঙে যায় যায় অবস্থা। এরপর হয়তো পুঁজিবাদী অনেক কোম্পানি ক্ষতি সামলাতে না পেরে বিক্রি হয়ে যাবে। বিপুল অর্থে হয়তো সেগুলো কেনার সামর্থ্য থাকবে সমাজতান্ত্রিক চীনের। এর আগে গোটা দুনিয়ার বেশিরভাগ আউটসোর্সিং হতো চীন থেকে। এখন সমাজতন্ত্রের কর্তৃত্ব সরাসরি বলবত হবে।
পুঁজিবাদ শেখায়, হাড়ভাংগা পরিশ্রম করো আর সেই অর্থ ব্যয় করো ধনীর ভাগ্য উন্নয়নে। এই করোনার দিনে বাজার একেবারেই উঠে গেছে। মানুষ এখন আর লাক্সারিতে বিশ্বাসী নয়, কারণ তারা চায় বেঁচে থাকার প্রাথমিক উপকরণ। আর গাড়ি বিক্রি হবে না, শপিংমলে ভিড় হবে না, কেউ দামি বাড়ি কিনবে না, বহুজাতিকের বেশি মুনাফা হওয়ার কেউ নেই, বহুজাতিকের এখন উঠে যাওয়ার অবস্থা।
পুঁজিবাদের মুল ভিত্তিটাই যেনো ধ্বসে পড়েছে। চে গুয়েভারার স্বপ্ন হয়তো পুরণ হবে। যারা গোটা দুনিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছে তারা এখন সামান্য মাইক্রোবের মোকাবিলায় ব্যর্থ। ডলার ছড়িয়েও যেনো আর কোনো লাভ হয় না। এভাবেই হয়তো পতন হবে পুঁজিবাদের। সমাজতান্ত্রিকতা ছড়িয়ে যাবে গোটা দুনিয়ায়।
লেখক: শিক্ষার্থী আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস আ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সিলেট