করোনা: চাই সচেতনতা ও আল্লাহর সাহায্য
সাম্প্রতিক সময়ে চিনে উৎপত্তি লাভ করা করোনাভাইরাস নামক একটি রোগ সমগ্র বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা এখনও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা।
মিডিয়ার তথ্যানুসারে, চীনের উহানে গত ডিসেম্বর মাস থেকে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৫ হাজার জনের বেশী ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে এবং এক লাখ ২৪ হাজারের বেশি রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
জ্বর দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এর পরে শুকনো কাশিও দেখা দিতে পারে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হালকা ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে মৃত্যুর সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করার কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনা মোকাবেলায় রিতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত আছে ২১৮ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ জন। নিশ্চিতভাবে বলা যায় দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরও মহামারী আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।
ঠিক এই মুহুর্তে চাই অনেকবেশী সতর্কতা, আর আল্লাহর সাহায্য। আমরা সতর্ক কীভাবে হতে পারি? প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে সংক্রমন প্রতিরোধে বিচ্ছিন্নকরণ (quarantine) ব্যবস্থার নির্দেশনা প্রদান করেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.)।
আমি পাঠকদের সুবিধার্থে একটি হাদিস উল্লেখ করছি- হযরত আবূ হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সংক্রমনের অস্তিত্ব নেই। তখন এক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার উটগুলো হরিনীর ন্যায় সুস্থ থাকে। এরপর একটি চর্মরোগে আক্রান্ত উট এগুলোর মধ্যে প্রবেশ করার পরে অন্যান্য উটও আক্রান্ত হয়ে যায়।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে সংক্রমিত করল? (বুখারী, আস-সহীহ ৫/২১৬১, ২১৭৭; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৪২। তখন রাসূল (স.) বল্লেন তোমরা কখনও অসুস্থকে সুস্থদের মধ্যে নেবে না। কেননা ওই অসুস্থ পশু, পাখি, মানুষ দ্বারা অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারে।
তাই সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের পরামর্শক্রমে সম্প্রতি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যে সকল নির্দেশনা কর্তৃপক্ষ দিচ্ছেন তা আমাদের সকলের মেনে চলা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই আসুন এই মহামারি থেকে নিজে তথা নিজের পরিবার পরিজন, সমাজ, দেশকে বাঁচাতে হলে আমাদের কে অনেক বেশি সতর্ক থাকার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ যখন যে নির্দেশনা দেয় তা মেনে চলার অনুরোধ করছি।
আচ্ছা বলুন তো আমরা যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আল্লাহকে ভয় করি তারা কি কেবলই সতর্ক থাকলেই হবে? নাকি সতর্ক থাকার পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য ও প্রার্থনা করতে হবে? হ্যা, আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকার পাশাপাশি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আসুন আমরা কিভাবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবো শিখে নেই আমাদের শিক্ষক মানবতার কান্ডারী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর কাছ থেকে-
আল্লাহ মানুষকে তাঁর কাছে চাইতে, দোয়া ও প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। দোয়াকে ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের প্রভু বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৬০)। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৮১)
মুমিনের দায়িত্ব হলো, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। ছোট-বড় সব প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা। আল্লাহ প্রার্থনাকারীকে পছন্দ করেন। প্রার্থনা না করলে তিনি রাগ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না, তিনি তাঁর ওপর রাগান্বিত হন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭৩)।
এখন বিশ্বব্যাপি মহামারি চলছে, নিশ্চই এটি আল্লাহ এমনি এমনি দেননি, এটি আমাদের দুই হাতের কামাই, আমরা অনেক বেশি অন্যার করেছি তাই আল্লাহ অখুশি হয়ে আমাদের উপর এমনটি করেছেন। তাই আল্লাহর কাছে প্রচন্ড আশা নিয়ে সাহায্য চাইতে হবে যাতে আল্লাহ খুব দ্রুত আমাদের এই কঠিন সময় থেকে পরিত্রান দেন। রাসূল (স.) শিখিয়েছেন, তার উম্মতকে তোমরা প্রচণ্ড আশা নিয়ে দোয়া করো।
তিনি বলেন, দোয়া কবুল হওয়ার আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৭৯)।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা ছিল সৎকাজে প্রতিযোগী, তারা আশা ও ভয় নিয়ে আমার প্রার্থনা করত। তারা ছিল আমার প্রতি বিনীত।’ (সুরা: আম্বিয়া, আয়াত: ৯০)। তাই পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলবো, এই কঠিন মুহুর্তে আল্লাহর কাছে বিনয়চিত্তে ক্ষমা প্রার্থনাসহ এই কঠিন মুহুর্তে নিজে এবং নিজের দেশকে হেফাজতের জন্য দোয়া প্রার্থনা করতে হবে। তাহলে আল্লাহ আমাদের এই কঠিন মহামারি থেকে হেফাজত করতে পারেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম