বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসকে পাত্তা দিচ্ছে না মানুষজন
কোভিড-১৯ বা নভেল করোনা অথবা করোনা ভাইরাস যে নামই বলি না কেন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের কাছেই এটি পরিচিত একটা নাম। করোনা একটি মরণঘাতী ভাইরাস যার উৎপত্তিস্থল নিয়ে কোনো বির্তক না থাকলেও সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ নিয়ে রয়েছে নানা দ্বিমত। করোনার প্রকোপে আজ কাঁপছে সারা বিশ্ব। যদিও বলা হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর হার সীমিত তবুও এর থাবায় এতটা ভয়াবহ যে বিশ্ব অর্থনীতিকেই পঙ্গু করে দিয়েছে। বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশই আজ লকডাউনে সমস্ত ধরনের যোগাযোগ আকাশপথ, রেলপথ, সড়কপথ এমনকি জলপথও বন্ধ রাখা হয়েছে।
একটু পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা অন্যান্য ভাইরাসে মৃত্যুর হার ইবোলায় এগারহাজার, সার্স বা মার্স ভাইরাসে সাতশত জন, পোলিওতে ছয়হাজার এবং শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যেটি স্প্যানিশ ফ্লু নামেও পরিচিত ১৯১৮-১৯ সালে সারাবিশ্বের প্রায় কোটি মানুষ এই ফ্লুতে মারা যায়। আর বর্তমানে মহামারী করোনা ভাইরাসে ২ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ জন এবং মারা গিয়েছে ছয়জন। আর সারা বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯লাখ ৩৮ হাজার তিনশত তিয়াত্তর জন আর মৃতের সংখ্যা ৪৭ হাজার দুইশত তিয়াত্তর জন (দৈনিক বণিক বার্তা,২ এপ্রিল,২০২০)।
বাংলাদেশেও গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে লোকজনকে বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়। পরে ১ এপ্রিল এই ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। কার্যত এটি সারাদেশে একপ্রকার লকডাউনই। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ জন। মারা গিয়েছেন ৬জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন।
লকডাউনের প্রথম কয়েকদিন মানুষের ঘরে থাকলেও এখন রাস্তাঘাটে বেড়েছে মানুষের আনাগোনাও ছোট যানবাহনের সংখ্যা, যদিও সকল প্রকার বিপণী বিতান বন্ধ আছে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য কাঁচামালের দোকান, মুদি দোকান ও ঔষধের দোকান খোলা রাখা আছে। খুলনায় যে এলাকায় আমি থাকি সেখানে গতকাল থেকেই মানুষজনের মানুষজন সকালের হাঁটছে বের হচ্ছেন, বিকালে শিশুরা দল বেঁধে নানা রকম খেলাধুলা করছেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থাও যদিও অন্যান্য দেশের তুলানয় অনেক ভালো তবুও ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশে একটি অতি ঘনবসতি দেশ ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,১১৫জন । যা বিশ্বে অন্যান্য বেশি পরিমাণ আক্রান্তের চেয়ে অনেক বেশি। করোনার ভাইরাসের উৎপত্তি স্থল চীন বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তার মূল কারণ হলো চীনের কঠোর অবস্থান।আমি এই ভেবে শঙ্কিত যে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার সাথে সাথেই টানা একটা লম্বা ছুটি পেয়ে ঢাকা শহরের অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলেছেন। গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি যে লোকজন কি মাত্রায় অতিরিক্ত বোঝাই হয়ে গ্রামের পানে ছুটছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বলেছেন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের এটা প্রকারের যুদ্ধ। সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করতে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী যারা জেলা প্রসাশনের সাথে একযোগে কাজ করছে।পুলিশ, র্যাব ও নৌবাহিনী তাদের টহল অব্যাহত রেখেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং মানুষজনকে বাড়িতে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তারপরও মানুষজন যততত্র ঘোরাফেরা করছে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করে এবং সেটি কঠোর ভাবে পালন করা হচ্ছে। অন্যদিকে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রবার্ট দুর্তাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে লোকজন লকডাউন না মানলে গুলি চালিয়ে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে, এপ্রিলের প্রথম দু-সপ্তাহ অনেকটা টার্নিং পয়েন্ট করোনাভাইরাসের বিস্তার লাভের জন্য আর এই কয়দিন আমাদেরকে বাসায় অবস্থান করতে হবে।
হ্যাঁ কর্মজীবী মানুষ যারা দিন আনে দিন খায় তাদের একটু কষ্ট হচ্ছে। এসব মানুষজনকে সহায়তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে তাদের নিকট খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে বাংলাদেশে আক্রান্তের হার কম বলে অনেকেই একে গুরুত্ব বা পাত্তা দিচ্ছেন না। কিন্তু এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে এসে সরকারি নির্দেশ মেনে পুরোপুরি বাড়িতে অবস্থান। বাড়িতে অবস্থান করুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়