২২ মার্চ ২০২০, ১০:৪৪

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা সাধারণ মানুষ

  © ফাইল ফটো

আমাদের প্রিয় সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলায় ভরপুর মাতৃভূমি বাংলাদেশটি আজ শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। যেখানে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আতঙ্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে। চীন থেকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ১৮৫ দেশ ও অঞ্চলের ১১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন পৌনে তিন লাখের বেশি মানুষ। এমন বিপদের সময়ও কিছু স্বার্থলোভী অধিকাংশ মানুষের ভেতরেই অসৎ উপায়ে স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে অধিক হারে দেখা যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে দ্রব্য মূল্যের দাম অধিক হারে বাড়াতে থাকে। তারা সবসময় নিজেদের মুনাফার চিন্তায় নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে করোনাকে কেন্দ্র করে বাড়ানো হচ্ছে দ্রব্য-মূল্যের দাম। অতি লাভের কারণে পণ্য মজুদও করছে অনেকে। যার ফলে হুমকির মুখে পড়ে এই দেশের সাধারণ দিনমজুর নিম্ন মধ্যবৃত্ত শ্রেণির মানুষ।

কারণ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে আমাদের জীবনযাত্রার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। একটি পরিবার কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নির্বাহ করবে তা নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য যখন সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তখন তাদের জীবন কাটে স্বস্তিতে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায়, তখন দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারে শুরু হয় অন্ধকার ছায়া। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের কালো ছায়া।

এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো দুই-এ। আর আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ ছাড়ালো। তবে এমন কঠিন সময়ে সাধারণ মাস্ক থেকে শুরু করে অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অধিক হারে। যার চাপ সামলাতে পারছে না দেশের সাধারণ দিনমজুর নিম্ন মধ্য শ্রেণির মানুষ। গতকাল মাদারীপুরের শিবগঞ্জ উপজেলা লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এরপর থেকে লকডাউনের আশঙ্কা ছড়িয়ে পরেছে দেশব্যাপী। তাই প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংরক্ষণ করতে ব্যাস্ত পরছে মানুষ। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে দেশে। তারপরও ব্যবাসায়ীরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে মাঠে কঠোর হাতে দমন করছে প্রশাসন। দেওয়া হচ্ছ ঝটিকা অভিযান। শাস্তি হিসেবে করা হচ্ছে অর্থদণ্ড। তারপরেও থামানো যাচ্চে না দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারী এই চক্রদের।

অন্যদিকে দেশের অন্যান্য জেলার মত নোয়াখালী প্রশাষণ ও বারবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বাজার স্থিতিশীল করতে পারছে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা আইন অমান্য করে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। প্রতি বস্তা চাল গত একসপ্তাহ আগের মূল্যের তুলনায় বর্তমানে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় করছে। আগের তুলনায় মুনাফার হারও অনেক বেশি। একই মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে ভিন্ন ভিন্ন দামে চাল বিক্রয় হচ্ছে। শুধু চাল নয় পেঁয়াজ আটা আদা মাস্কসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অধিক হারে বিক্রি করছে।

এই বিষয় সম্পর্কে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘বাজারে নিত্যপণ্যের অভাব নেই। সংকটও নেই বরং যথেষ্ট জোগান রয়েছে। সুতরাং বেশি বেশি কেনাকাটা করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করবেন না।’

এই বিষয়ে নোয়াখালী মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রোকনুজ্জামান খান তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যুদ্ধ শুধু করোনার সাথে করলে প‌রিত্রাণ অনেক সহজ হতো কিন্তু যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিজ দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথেও! আল্লাহ, মাফ কর।

দেশের এমন পরিস্থিতিতে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যতালিকা টাঙানো এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে দেশের সাধারণ মানুষের আরও একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে মনে করেন জনসাধারণ।