ছুটি পেয়েছেন— তার মানে এই নয় ‘ফ্যামিলি ট্যুর’ দিয়ে বসবেন
এই যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত বন্ধ হয়েছে বা হচ্ছে— এ বন্ধের সময়টায় বাসায় থেকে যা করতে পারেন তা হলো বই পড়া, গান শুনা, পরিবারকে নিয়ে কিছু ভালো সময় উপভোগ করা। যান্ত্রিকতা মুক্ত আপাতত এই সময়টাকে একটা সুযোগ হিসেবে দেখুন নিজেকে রিফ্রেশ করে তোলার।
রিফ্রেশ করতে পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা বলিনি, যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলুন। ছুটি পেয়েছেন তার মানে এই না কোথাও ফ্যামিলি ট্যুর দিয়ে বসবেন। পরিবার নিয়ে ভালো সময় ঘরে বসেও কাটানো যায়।
আমরা বাঙ্গালি জাতটা একটু বদের জাত, নিজেরা করোনা এড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত আপাতত বন্ধ চেয়ে সোচ্চার হলেও নিজেরাই আবার এই ছুটিটাকে ট্যুর দেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখি।
তো আর কি! কথায় আছে ‘যেই লাউ, সেই কদু’। জনসমাগম এড়িয়ে চলার সুযোগ দিতেই আপনাকে দিলো ছুটি। আর আপনি করলেন কি বন্ধু, বান্ধব, পরিবার নিয়ে ট্যুরের প্ল্যান করে বসলেন! তো এই ছুটি দেওয়ার যে কারণ সেটাতো শুধু শুধু।
মনে রাখবেন আপনি নিজে করোনা সংক্রমিত হলে আপনার পরিবারও কিন্তু করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। তাই নিজে বাঁচুন, পরিবারকেও বাঁচান।
বাঙ্গালি বড় খারাপ জাত। এদেশে এমন কোনো লোক বা এলাকা নেই প্রবাসে যাদের আত্মীয়স্বজন থাকে না। ভাইরে ভাই! এখন যদি কোনো প্রবাসী বাইর থেকে আসে তখন দল বেধে এই খারাপ বাঙ্গালির জাত তাদের দেখতে যায়। যেন বিদেশ ফেরত লোকটি পৃথিবীর কোনো অষ্টম আশ্চর্য!
এইযে দেশে প্রথম করোনা সংক্রমিত রোগী মারা গেলো ইনিও কিন্তু সেই একই কাজটা করেছেন। আত্মীয় বিদেশ থেকে এসেছে আগ্রহসহকারে তাকে মন ভরে দেখতে গিয়েছিলেন। তারপরে করোনাবাহী ওই আত্মীয় থেকে নিজেও সংক্রমিত হন।
দরকার কিরে ভাই! যে বিদেশ থেকে আসছে আসুক, রেস্ট নিক কিছুদিন। মেডিকেল চেকআপ করুক, দেখুক করোনা সংক্রমিত কিনা। আপাতত যদি সুস্থ হয় তাহলে না হয় দেখতে যান। কেউ বিদেশ ফেরত দেশে আসলে তাকে দল বেধে নতুন বউ দেখার মতো করে দেখতে যাওয়ার কি আছে! আজিব।
আরেক দল আছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার কিনে নিজেকে বাঁচাতে বাসায় স্টক করে রাখছে। বাজারে এসব দরকারি বস্তু পাওয়াই এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে এসব বিক্রেতা সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে দিয়ে সাময়িক লাভবান হচ্ছে।
আরে এই খারাপ জাত তোরা নিজেরা খালি নিজের দেহকেই ভাইরাসমুক্ত রাখলেই চলবে! আশেপাশের মানুষও যদি সুস্থ না থাকে তোরাও কোনো না কোনো ভাবে সংক্রমিত হবিই। তাই প্রয়োজনের অধিক স্টক না করে অন্যদেরও ব্যবহার করার সুযোগ করে দিতে হবে।
যারা ছুটিতে বাসায় গিয়েছেন নিজেরা সচেতন থাকুন, অন্যকে সচেতন করে তুলুন, পরিবারকে সময় দিন, পরিবারের মধ্যেই আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে তুলুন। হুজুগে বাহিরে দল বেধে ট্যুর বা ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করবেন না। হউক সেটা ফ্যামিলি আর হউক সেটা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে।
বাইরে গেলে মাস্ক-গ্লাভস পরে বের হউন, এমনিতেও করোনা ছাড়াও ধুলাবালি থেকেও অসুস্থ হতে পারেন। তাই অবশ্যই মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করুন। নিজেকে সবসময় পরিষ্কার রাখুন, করোনা থেকে রক্ষা পেতে দরকারি নিয়মাবলী মেনে চলুন। আর হ্যাঁ যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। পরিশেষে এটাই বলবো, ‘করোনা থেকে নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচান’।
লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়