০৬ মার্চ ২০২০, ১৭:৪৫

সর্দি-জ্বর হলেই বিদেশ নয়, দেশে উন্নত মানের হাসপাতাল চাই

চিকিৎসার প্রতিকী ছবি  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসার অভাবে এবং ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়ার ভয়ে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের হাসপাতালগুলোর দিকে ছুটছেন। ভুল চিকিৎসা এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণেই এমন অবস্থা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক রিপোর্টে বলা হয়, প্রতি বছর বাংলাদেশীরা বিদেশে চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রায় ২.০৪ বিলিয়ন টাকা খরচ করে থাকেন। এই অর্থ বাংলাদেশের মোট আয়ের ১.৯৪ শতাংশ।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছুটে যাওয়ার বিষয়টি নতুন কোনো বিষয় নয়।ব্যক্তিগত টাকা খরচ করে বিদেশে চিকিৎসা নিলে সেটি নিয়ে হয়তো কোনো আপত্তি উঠতো কিন্তু। কিন্তু রাষ্ট্রের টাকায় অর্থাৎ জনগণের করের টাকায় বিদেশে চিকিৎসা নেবার বিষয়টি নিয়ে অনেক সময়ই প্রশ্ন ওঠে।রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা - রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি- কেন অসুস্থ্য হলে বিদেশে চিকিৎসা নিতে ছুটে যান?রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ মন্ত্রী, এমপিরা বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে প্রমাণ হয় জনগণের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

সরকার প্রধানের সর্দিকাশি, গল-ব্লাডার অপারেশন, রাষ্ট্র প্রধানের চোখের চিকিৎসা বিদেশে হলে জনগণ চিকিৎসা পাবে কোথায়? বাংলাদেশে রাষ্ট্র কিংবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেন না বলেই বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার মান দিনদিন নিম্নগামী হচ্ছে।এটা কি এমন ধারণা দেয় না যে দেশের চিকিৎসা সেবার প্রতি তাদের কোন আস্থা নেই? নাকি দেশের হাসপাতালগুলো তাদের চিকিৎসা দেবার মতো অবস্থায় নেই? রাষ্ট্র কিংবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়মিত শারীরিক চেকআপের জন্য বিদেশ যান। দেশের জনগণও বাধ্য হয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

১৯৭৪ সালে জানুযারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডনে পিত্তথলির অপারেশনের মাধ্যমে ভিভিআইপিদের বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের পথ উন্মুুক্ত করেন। এরপর থেকে যতদিন যাচ্ছে দিনদিন চিকিৎসার্থে বিদেশ যাত্রীদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাক, কান, গলা নিয়মিত চেকআপ করেন আমেরিকায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে গাজীপুরে তাঁর মায়ের নামে নির্মিত শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিজে টিকিট কেটে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি, তাহলে আপনারা আমাকে বিদেশে নেবেন না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠাবেন না। আমি দেশের মাটিতেই চিকিৎসা নেব। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেব।’সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া পায়ের ব্যথার চিকিৎসা করাতেন সৌদি আরবের কিং ফাহাদ হাসপাতালে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম এরশাদের জন্য সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল নির্ধারিত ছিল। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, উচ্চপদের আমলা তারা সবাই দেশের ভিআইপি। বাংলাদেশে তাদের চিকিৎসা সেবা নেই, করাতেও চান না। বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি ৮৪ বছর বয়সী বর্ষীয়ান জননেতা মো: জিল্লুর রহমান ২০১৩ সালের ২০শে মার্চ ফুসফুসের সংক্রমণ ব্যাধিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ হতে কয়েক হাজার মাইল দূরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মারা যান।বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান। প্রবীণ জননেতা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের মৃত্যু হয় বিদেশে। প্রখ্যাত রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুর রাজ্জাকের জীবনাবসান ঘটে বিলেতে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কলকাতার একটি হাসপাতালে।

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এরশাদুল বারী মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।সুবীর নন্দী দীর্ঘদিন ফুসফুস, কিডনি ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। হার্ট অ্যাটাকের পর গত বছরের ৭ই মে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

এভাবে তালিকা করলে অসংখ্য বাংলাদেশী ভিআইপির নাম পাওয়া করা যাবে।যারা নিয়মিত বিদেশে চিকিৎসা নিতেন। দেশে প্রতিবছর ৭ হাজার শিশুসহ প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি মারা যায় বিনা চিকিৎসায়। নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত ২ লাখ রোগীর মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোগীই চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

ঢাকায় নাগরিক পরিষদ এর উদ্যোগে জনগনকে চিকিৎসা বঞ্চিত রেখে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনের বক্তারা বলেন, ‘জনগণকে চিকিৎসা বঞ্চিত রেখে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণকারী জননেত্রী, জননেতা, দেশনেত্রী, দেশনেতা হতে পারে না। একজন প্রধানমন্ত্রীর ২ চোখের চিকিৎসা লন্ডনে হলে ১৮ কোটি নাগরিকের ৩৬ কোটি চোখের চিকিৎসা কোথায় হবে? রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি ও শীর্ষ আমলারা বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম বেহাল ও নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে।’

গত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে সবমিলিয়ে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল যা মোট জাতীয় বাজেটের ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।ষোলো কোটি মানুষের জন্য যা অপ্রতুল।

শুধু বিত্তশালী নন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক রোগীই নিজেদের জমি জিরাত ও সর্বস্ব বিক্রি করে দিয়ে হলেও বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে নিজেদের নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা খুঁজে পেতে চান। প্রতিবছর রেকর্ড সংখ্যক রোগী যাচ্ছেন ভারতে।ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতে যাওয়ার মেডিক্যাল ভিসা দিয়েছে তারা। এ সংখ্যা ২০১৬ সালে ভারতগামী চিকিৎসা প্রার্থীদের তুলনায় দ্বিগুণ।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে আসা ৪,৬০,০০০ রোগীর মধ্যে ১,৬৫,০০০ জনই ছিলেন বাংলাদেশি। তবে এদের মধ্যে মাত্র ৫৮,০০০ জন ছিলেন বাংলাদেশী নাগরিক। ভারতের পর্যটকদের কাছ থেকে আসা চিকিৎসা সেবার ৩৫ শতাংশই বাংলাদেশ নিয়েছে। বিদেশীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ভারতের মোট আয়ের ৫০ শতাংশ আসে শুধু বাংলাদেশ থেকে।২০১৮ সালে ভারতে পাড়ি জমান প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশী রোগী।

এছাড়া পর্যটন ভিসায় ভারতে যাওয়া বাংলাদেশীদের অধিকাংশেরই লক্ষ্য থাকে চিকিৎসা নেয়া। যেসব রোগী ভারতে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই অর্থোপেডিক্স, ক্যান্সার, কার্ডিওলজি ও নিউরো সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত।বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে গমন করেন। এতে বছরে ব্যয় হয় ৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিবেচনা ছাড়াও জাতি হিসাবে এটি অবমাননার বিষয়। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ক্ষুদ্র বাংলাদেশে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ৩২টি সরকারি ও ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ১৮টি বিশেষায়িত চিকিৎসা ইনস্টিটিউট, ৬৪ জেলায় জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা, ইউনিয়নে ছোট বড় ৪ হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিদ্যমান।

দেশে বিএমডিসিভুক্ত বৈধ ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ এর মধ্যে এমবিবিএস ডাক্তারের সংখ্যা ৯১ হাজার এবং বিডিএস ডাক্তারের সংখ্যা ৯ হাজার।দেশসেরা মেধাবীরা চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নের সুযোগ পান। প্রতিবছর স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় বাজেটের কিছু অংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তারপরও কেন রাষ্ট্রের নেতা নেত্রীরা এ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না।

দেশে চিকিৎসা সেবার ওপর আস্থাহীনতা, ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা এবং চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতাকেই এজন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে সব ধরনের রোগের চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রটি পুরোপুরি রোগীবান্ধব হয়ে ওঠেনি।বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোগীর সর্বোত্তম সেবা ও নিরাপত্তা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার প্রধান কাজ। তবে বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালে রোগীদের সেবার চেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বেশি। প্রয়োজন না থাকলেও দীর্ঘ সময় রাখা হয় আইসিইউতে। এর ওপর লাইসেন্সবিহীন নামসর্বস্ব হাসপাতালে অপচিকিৎসা ও ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য তো আছেই। হৃদরোগের রোগীদের হার্টের রিং পরাতে চলে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মন কষাকষি। কিডনি, লিভার প্রতিস্থাপনে রয়েছে নানা জটিলতা।

সরকারী হাসপাতালে শয্যা সঙ্কট, বেসরকারী হাসপাতালের লম্বা সিরিয়াল এবং অব্যবস্থাপনা রোগীদের বিদেশমুখী হতে বাধ্য করে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।ভুক্তভোগী রোগী এবং তাদের অনেক পরিবারের অভিযোগ, দেশের অধিকাংশ হাসপাতালেই চিকিৎসার নামে রোগীর জীবন নিয়ে ছেলেখেলা চলে। বাংলাদেশের এই ব্যয়বহুল ও অনাদরের চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা নেই। সাধারণত সরকারি হাসপাতালে গরিব রোগীরা গিয়ে থাকে। গরিব রোগীদের অর্থবিত্ত নেই, ডাক্তার ও হাসপাতালের স্টাফদের অবহেলার শিকার হতে হয় চরমভাবে। গ্রামগঞ্জে ও জেলা শহরের হাসপাতালের অবস্থা আরো ভয়ানক।

সিঙ্গাপুরে অবস্থিত মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল বা সংক্ষেপে মাউন্ট-ই নামে পরিচিত একটি ৩৪৫ শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল। সিঙ্গাপুরের এই হাসপাতাল একটি বেসরকারি কোম্পানি এবং পার্কওয়ে হেলথ কোম্পানি কর্তৃক অধিকৃত ও পরিচালিত।১৯৭৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া এই হাসপাতাল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৯ সালের ৮ ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে। হাসপাতালটিতে একই সঙ্গে হৃদরোগ, ক্যান্সার চিকিৎসা, কিডনি রোগ ও স্নায়ুজনিত রোগসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। সিঙ্গাপুরের প্রথম কোনো বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে এখানেই সর্বপ্রথম ওপেনহার্ট সার্জারি অস্ত্রোপচার করা হয় এবং আণবিক ওষুধ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি এবং তা ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে।

২০১৬ সালের হিসাবমতে, হাসপাতালটিতে চার শয্যার ওয়ার্ডে একটি শয্যার জন্য প্রতি রাতে ২৭৬ মার্কিন ডলার গুনতে হয়। সম্পূর্ণ নিজস্ব রুমের জন্য প্রতিরাতে খরচ হয় ৬৪০ মার্কিন ডলার।সব মিলিয়ে ৩১টি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দল এই হাসপাতালে কর্মরত আছেন। স্নায়ুরোগ থেকে শুরু করে হৃদরোগ, দন্তচিকিৎসা, পাকান্ত্রবিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সেবা প্রদান করেন। রোগীর অবস্থা, ক্লিনিক ও বিশেষজ্ঞভেদে চিকিৎসা খরচ ভিন্ন হয়।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা খরচের একটা তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরেন বাংলাদেশী একজন চিকিৎসক।তিনি বলেন একটা এমআরআইতে যেখানে আট হাজার টাকা নিচ্ছি (১০০ ডলার) যেটা সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথে এক হাজার ডলার নেওয়া হচ্ছে। আমরা যেখানে একটি এনজিওগ্রামে ১৬ হাজার টাকা নেই, সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথে নেয় চার হাজার ৫০০ ডলার।এরপরেও রোগীরা পাড়ি জমায় বিদেশে, এতে খরচ হয় বেশি।

ভারতে লিভার ট্রান্সপ্লান্টে যেখানে ৫০ লাখ টাকা লাগে সেখানে বাংলাদেশে প্রথম তিনটি লিভার ট্রান্সপ্লান্ট মাত্র ছয় লাখ টাকায়।কেউ কেউ অভিযোগের সুরে বলেন দেশে একজন রোগী মারা গেলে এরপর এমন ক্যাম্পেইন হয় যা চিকিৎসা ব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে। একটা বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট, যেখানে ভারতে ২০-২২ লাখ টাকা নেয়, সেখানে আমাদের ক্যান্সার হাসপাতালে তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকায় করা যায়।

দেশের অর্থ দেশে ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদেরও স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে হবে।এজন্য আমাদেরও সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মতো একটি হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে। যার মাধ্যমে দেশেই উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

একটি রাষ্ট্র, একটি দেশ, একটি সরকার কি পারে না ভিআইপি ব্যক্তিদের চিকিৎসার পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করতে? সিঙ্গাপুরের একটি প্রাইভেট হাসপাতাল যা পারছে, তা কি বাংলাদেশ চাইলে করতে পারে না? দেশে এমন একটি হাসপাতাল দাঁড় করানো যেতেই পারে যেখানে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, এমপি, বিরোধীদলীয় নেত্রী, উচ্চপদের আমলা এবং অন্য রাজনীতিবিদদের চিকিৎসার সাথে সাধারণ জনগণের পূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে।