চীনে আমরা বাংলাদেশিরা ভালো আছি
সম্প্রতি চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের মাঝে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ এটাকে খুব চিন্তা-উৎকণ্ঠার বিষয় মনে করছেন, আবার কেউ কেউ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন না করে হালকাভাবে নিচ্ছেন। আবার কোন কোন ফেসবুক গ্রুপে চীনে বর্তমানে অবস্থানরত অনেকে দেশে ফিরতে চাওয়ার আকুতিও জানাচ্ছেন (বিশেষ করে যারা উহানে রয়েছেন)। তা নিয়েও আবার ফেসবুকে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কেউ বলছেন তাদের নিয়ে আসা উচিত আবার কেউ বলছেন, না তারা ওখানেই নিরাপদ আছেন। তাদেরকে দেশে নিয়ে আসার ব্যাপারে মতামত দিচ্ছেন না।
আমি প্রথমে আমাদের কথা বলি, আমারা চিংডাওতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি আছি। এই শহরটা উহান থেকে ১০৭২ কি.মি. দূরে। এই শহরে গতকাল পর্যন্ত ৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ নিয়ে এ শহরে মানুষের মাঝে তেমন উৎকণ্ঠা দেখা যায় নি। তবে আজ থেকে শহর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের সচেতন থাকার জন্য নানাবিধ দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ব্যতিরেকে বাহিরে না যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছে।
যাইহোক আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশীসহ সকল বিদেশী শিক্ষার্থী ভালো আছেন। জানা তথ্যমতে, শুধু আমাদের এখানে নয়, চীনের কোথাও এখনো কোন বিদেশি নাগরিক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়নি।
এখন কথা হচ্ছে আমাদের দেশের কথা। আমাদের দেশে কি ছড়ানোর কোন সম্ভাবনা আছে? ছড়ালে কীভাবে ছড়াতে পারে? এর ছড়ানোর মাত্রা কেমন হতে পারে? এবং আমাদের কি ধরনের প্রস্তুতি নেয়া উচিত?
প্রথমত, আমাদের দেশে ছড়ানোর সম্ভাবনা একবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ (নেপাল, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া) সনাক্ত হয়েছে।
আমাদের দেশের সাথে চীনসহ অন্যান্য দেশের ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক রয়েছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসা যাওয়া করছেন।
অন্যদিকে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে শিক্ষার্থী চীনে অধ্যয়নরত রয়েছেন। বর্তমানে শীতকালীন ছুটিতে অনেকে দেশে গিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত যত দেশে এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে দেখা যাচ্ছে যে আক্রান্ত ব্যক্তি হয় হুবেই প্রদেশ ভ্রমণ করেছেন অথবা উহান শহর গিয়েছেন নিকট সময়ে এমন কোন ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট।
দ্বিতীয়ত, কীভাবে ছড়াতে পারে?
চীনে যে প্রাথমিক সংক্রামনটা পাওয়া গেছে তা বন্যপ্রাণী থেকে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও পরে দেখা গিয়েছে তা মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াচ্ছে এবং অল্পদিনেই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ছড়ালে তা শুধু মানুষ থেকেই ছড়াতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত বন্যপ্রাণী (বাদুড়, সাপ ইত্যাদি) খায় না।
তৃতীয়ত, ছড়ানোর মাত্রা কেমন হতে পারে?
এটা নির্ভর করছে আমাদের প্রস্তুতি নেয়ার উপর। কারণ, চীন থেকে অনেক মানুষ সাম্প্রতিক সময় দেশে গিয়েছেন। আমাদের কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কতটুকু সনাক্ত করতে পেরেছে বা তাদেরকে কতটুকু নজরদারিতে রাখতে পারছেন তার উপর নির্ভর করছে এর ছড়ানোর মাত্রা। আমাদের স্মরণ রাখা উচিত, বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। যদি তা সেখানে ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তবে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের দেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন
ব্যাপারটা এমন না যে এটা ছড়িয়ে পড়েছে তাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি এখনো সচেতনতামূলক প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে।
প্রথমত, ভয় পাওয়া যাবে না। কথায় আছে ‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়’। তাই ভয় পাবেন না, ভয় ছড়াবেন না। আবার বলা যায়, ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম’।
দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। সময়মত এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান। শরীরটা সুস্থ রাখুন। বাহিরে বের হলে মাস্ক (মুখবন্ধনী) ব্যবহার করুন। ঢাকায় চলতে হলে এমনিই এমনটা করতে হয় । তাই এটা অতিরিক্ত কিছু মনে না করে প্রতিদিনের অভ্যাস হিসেবে নেন। তাহলে মানসিক চাপ বাড়বে না। বাহিরে যেখানে সেখানে থুথু ফেলা বন্ধ করুন। (সাময়িক সময়ের জন্য হলেও) রাস্তার পাশে খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
তৃতীয়ত, বিদেশ ফেরত (বিশেষত চীন) ব্যক্তিদের সচেতনভাবে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখুন। দেখুন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হচ্ছে কিনা। এমন কিছু দেখা গেলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পরিশেষে, বেশি মানুষের সমাগম এড়িয়ে চলুন। আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্রতিবার বাহির থেকে বাসায় এসে ভালোভাবে সাবান/জীবাণুনাশক দিয়ে হাত-মুখ ধৌত করে নিজেকে পরিষ্কার ও পরিপাটি রাখুন।
লেখক: শিক্ষার্থী ওশান ইউনিভার্সিটি অব চায়না, চিংডাও, গণচীন