মানব সৃষ্ট কিয়ামতের খপ্পরে বিশ্ব

মো. আবু রায়হান
মো. আবু রায়হান  © টিডিসি ফটো

গত বৃহস্পতিবার ইরানের একজন কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানি ইরাকের বাগদাদে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হলেন। এতে তার সঙ্গে থাকা সামরিক বাহিনীর আরো কয়েকজন অফিসারও হতাহত হন। এই হত্যার পর বিশ্ব উত্তপ্ত। তেলের দাম বেড়েছে। ট্রাম্প দিচ্ছে রণ হুংকার। ইরানও উচিত শিক্ষা দিতে সংকল্পবদ্ধ। তবে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে?

কেননা আজ থেকে ১০৫ বছর আগে ১৯১৪ সালের জুন মাসে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিন্যান্ডকে হত্যার জের ধরে শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সোলায়মানি হত্যা একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। যদিও সম্মুখ সমরে আমেরিকা, ইরান দুটো অসম শক্তি। আমেরিকার সঙ্গে টক্কর দেবার মতো সমর শক্তি ও রণ কৌশল ইরানের নেই। তবে বর্তমান যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে ইরান বাদে রাশিয়া কিংবা চীনের কোনো জেনারেল নিহত হলে হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে বিশ্ববাসী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ উপভোগ করতো।

উপভোগ বললাম একারণে যে, যুদ্ধ এখন অনেকের কাছে হাতের মোওয়া। জীবন তাদের কাছে তুচ্ছ। মানবিকতা, মানবাধিকার তাদের কাছে উপেক্ষিত। তাহলে এটি তাদের কাছে উদযাপন ও উপভোগের বিষয় নয়তো কী?একটি বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে যেসব আলামত দেখা দেয় তার সবই বর্তমানে দৃশ্যমান। তারপরও ইরানের আপাতত নীরবতা অন্য কোনো কিছুর ঈঙ্গিত বহন করে। তবে যাই হোক না কেন জেনারেল সুলায়মানির হত্যা আমেরিকা ইসরায়েলের একটি নতুন যুদ্ধ কৌশল ও ইরানকে ফাঁদে ফেলার কৌশলও হতে পারে। সুলায়মানির হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া এখন ইরানের মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় ইরান মাথা গরম করে ইসরায়েল কিংবা আমেরিকার কোনো স্বার্থে আঘাত হানলে সেটা ইরানের জন্য হবে বুমেরাং।

ইরানের জন্য তখন টিকে থাকাটাও কষ্টের হবে। এখন ইরানের কৌশলের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করায় হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অঙ্গন ইরানের প্রতি সহমর্মী। তবে যুদ্ধের মতো চরমপন্থা অবলম্বন ইরানকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলবে। ইরান যে আধুনিক অস্ত্রের সম্ভার গড়ে তুলেছে তাও বাঁধার মুখে পড়বে। আমেরিকাকে মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা ও যুদ্ধাস্ত্র ইরানের নেই। ইরানকে এক ঘরে করতে ও একটি যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে আমেরিকা অজুহাত খুঁজজে। জেনারেল সুলায়মানির হত্যা ছিল সেই উপযুক্ত অজুহাত।

এখন দেখার বিষয় ইরান কি আমেরিকা ইসরায়েলের সাজানো ফাঁদে পা দেবে? আশা করি ইরান এ বিষয়ে ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করবে।আমি শিরোনামে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসীদের গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিভাষা কিয়ামত শব্দটি ব্যবহার করেছি। কিয়ামত আরবি শব্দ। অর্থ মহাপ্রলয়, পুনরুত্থান, ধবংস । ধর্মীয় দৃষ্টিতে কিয়ামত হচ্ছে যাবতীয় সৃষ্ট বস্তুর সর্বশেষ পরিণতি অর্থাৎ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার নাম। মানুষ, পৃথিবী ও সৌরজগতসহ সকল কিছুর মহা ধ্বংসকেই কিয়ামত বলে অভিহিত করা হয়।

কিয়ামত সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, ‘যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে একটি মাত্র ফুৎকার এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে এবং এক ধাক্কায় তারা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে, সেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়বে এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আটজন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের ঊর্ধ্বে বহন করবে’।( সুরা হাক্বকাহ ১৩-১৭) এটি হচ্ছে স্রষ্টার ইচ্ছায় নশ্বর পৃথিবীর বিনাশ সাধন।বর্তমান বিশ্বে আধুনিক বিজ্ঞানী বা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক বিপর্যয় দ্বারা পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছেন এবং বিগত কয়েক দশকে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার দিন তারিখও তারা উল্লেখ করছেন। কিন্তু তাদের অনুমান, গবেষণা এতটুকুও কার্যকর হয়নি।

বুঝা যাচ্ছে, এ পৃথিবীর কোন কিছুই কার্যকর হয় না মহান আল্লাহ পাকের হুকুম ব্যতীত। অবশ্য বিজ্ঞানীদের বর্ণনায় পৃথিবীর ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে ক্বিয়ামতের ধ্বংসযজ্ঞের যৎসামান্য সাদৃশ্য রয়েছে।কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে সে বিষয়ে আল্লাহ পাকই বেশি ওয়াকিবহাল। এ বিষয়ে মানুষের জানার সুযোগ নেই। আল্লাহ পাক তা জানেন এবং গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ পাক বলেন, ‘লোকেরা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই আছে। আপনি কি করে জানবেন যে, সম্ভবত ক্বিয়ামত শিগরই হয়ে যেতে পারে’। (সুরা আহযাব আয়াত- ৬৩)।

তবে কিয়ামতের আগে কিছু নির্দশন দেখা দেবে যেগুলো দেখে কিয়ামত যে সন্নিকটে তা আচ করার সুযোগ হবে।কিয়ামতের কিছু ছোট ও বড় নিদর্শনের কথা কুরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে।বর্তমানে ছোট নিদর্শন বা আলামত গুলো প্রকাশ হতে শুরু করলেও বড় বড় নিদর্শন বা আলামত এখনো অপ্রকাশিত রয়েছে। যদিও আলেম ওলামা ও কিছু গুজব রটনাকারী কিয়ামত নিকটে বলে প্রায় জনগণকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলে। এসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা থেকে দূরে থাকতে হবে।

সাহাবি হযরত হুযায়ফা (রা.) বলেন, আমরা পরস্পর আলাপ রত অবস্থায় ছিলাম, নবী করীম (সা.) এসে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমরা কী প্রসঙ্গে আলোচনা করছিলে? সবাই বলল- কিয়ামত প্রসঙ্গে। তখন নবী করীম (সা.) এরশাদ করলেন- ”কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমরা দশটি (বড়) নিদর্শন প্রত্যক্ষকরবে, ধোঁয়া(ধূম্র), দাজ্জাল,অদ্ভুত প্রাণী,পশ্চিম দিগন্তে প্রভাতের সূর্যোদয়, মরিয়ম আঃ এর সন্তান ঈসা আঃ এর পৃথিবীতে প্রত্যাগমন, ইয়াজুজ-মাজুজের উদ্ভব, তিনটি ভূমিধ্বস,প্রাচ্যে ভূমি ধ্বস,পাশ্চাত্যে ভূমিধ্বস, আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস, পরিশেষে ইয়েমেন থেকে উত্থিত হাশরের ময়দানে দিকে তাড়নাকারী বিশাল অগ্নি।

অন্য একটি বর্ণনায় ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ, কাবা শরীফ ধ্বংস এবং মানুষের অন্তর থেকে কুরআনুল কারীম উঠিয়ে নেয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে।এসব হলো ইসলামের দৃষ্টিতে কিয়ামতের লক্ষণের আলোচনা। এবার আসি মানব সৃষ্ট কিয়ামত। আমি মানব সৃষ্ট কিয়ামত বলতে সাধারণত বিশ্বের ক্ষমতাধর সামরিক অস্ত্র নির্ভর রাষ্ট্র গুলোর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধের বিভীষিকা ও ভয়াবহতার কথা বলতে চেয়েছি। মানব সৃষ্ট কিয়ামত বা বিপর্যয় কখনই আল্লাহ পাকের সেই কিয়ামতের ভয়াবহতার সাথে কখনোই তুলনীয় নয়। শুধু বীভৎসতা ধ্বংসযজ্ঞ বোঝাতে এখানে মানব সৃষ্ট কিয়ামত শিরোনাম নির্বাচন করা হয়েছে।বর্তমান শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলো মানব বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের কাছে পৃথিবী নামক গ্রহের মানুষগুলো অসহায় ও জিম্মি। এমনি প্রতিনিয়ত আদম সন্তানের রক্ত তো ঝরছেই। তারপরে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মানব বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের কারণে পৃথিবীর মানুষ আজ হুমকির মুখে।

এই অস্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু হলে এই পৃথিবীতে কিয়ামতের মতো না হলেও পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে যে বিপর্যয় নেমে আসবে তা হবে পৃথিবীর সব জীবের অস্তিত্ব বিলুপ্তির জন্য যথেষ্ট। যা আমাদের কিয়ামতের সেই ধ্বংসযজ্ঞের কথায় মনে করিয়ে দেবে।মানব জাতি নিশ্চয়ই হিরোশিমা নাগাসাকির সেই বীভৎসতা ভুলে যায়নি? আজ থেকে ৭৪ বছর আগে ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরকে লিটলবয় ও ফ্যাটম্যান পরমাণু বোমায় ধ্বংস করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ বিধ্বংসী বোমায় মুহূর্তে কেড়ে নিয়েছিল সেই সময় দুই লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ। এ আক্রমণ থেকে যারা বেঁচে গিয়েছিলেন বাকি জীবনটা তাদের পঙ্গু ও বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছে। শহর দুটির উপরে চালানো এই ভয়ঙ্কর পারমাণবিক হামলাই যুদ্ধকালীন এই ধরনের অস্ত্রের ব্যবহারের একমাত্র নিদর্শন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ব লক্ষ্য করেছে এ যুদ্ধে ৯০ লক্ষ যোদ্ধা ও ৫০ লক্ষ নিরীহ মানুষ নিহত হয়। প্রায় এককোটি সৈন্য এবং ২ কোটি ১০ লক্ষ সাধারণ মানুষ হতাহত হয়।দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগের ঘটনায় কুখ্যাত এই যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এসব পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে যে এটিপৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম যুদ্ধের একটি এযেন পৃথিবীতে একখন্ড কিয়ামত। বর্তমান বিশ্বে পরমাণু বোমাগুলো অনেক ক্ষেত্রে বসানো

আছে ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায়। এছাড়া আছে বিভিন্ন সামরিক বিমান-ঘাঁটিতে বা অস্ত্রের গুদামে। বিশ্বের মোট ১৯৬টি দেশের মধ্যে মাত্র ৯টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্রসমূহ রয়েছে। পরমাণু অস্ত্র আছে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার হাতে। ইসরাইলের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে মনে করা হলেও তারা কখনো একথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করে নি।বিভিন্ন দেশে এখন শত শত পারমাণবিক বোমা বসানো-ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা আছে। আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বসানো আছে জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি, তুরস্ক এবং নেদারল্যান্ডসে।

সব মিলিয়ে এগুলোর সংখ্যা প্রায় ১৫০টি।অন্তত ১৮০০ পরমাণু বোমা আছে যেগুলো খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে নিক্ষেপ করা যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব পরমাণু-শক্তিধর দেশই এখন তাদের অস্ত্রগুলোর আধুনিকায়ন করছে, বা করার পরিকল্পনা করছে।পৃথিবীতে মোট পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০টি। কার্যকরী পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা মোট ১৫,০০০টি। গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে আমেরিকার হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে ৬৮০০ রাশিয়ার ৭০০০, ফ্রান্সের ৩০০', যুক্তরাজ্যের ২১৫, চীনের ২৭০, ভারতের ১৩০, পাকিস্তানের ১৪০, ইসরায়েলের ৮০, আর উত্তর কোরিয়ার আছে ২০টি।

আজ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর উদ্দেশ্যে ঘটানো মোট পারমাণবিক বিষ্ফোরণের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে পুরো পৃথিবীকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে প্রয়োজন ৩.৫ মিলিয়নের বেশি সংখ্যক লিটল বয়।বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী কার্যকরী পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রটি হচ্ছে বি-৮৩, যার রয়েছে হিরোশিমার অংশভাগ ধ্বংসকারী বোমা লিটল বয় থেকেও ২০০ গুণ বেশি ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা। আর সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাটির ব্যাপ্তি হবে ১৪.৯ বর্গ কিলোমিটার। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকা সব কিছুই মুহুর্তে ধ্বংস হয়ে যাবে, তৎক্ষণাৎ পুরোপুরি আঁধারে ছেয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দৃষ্টিসীমার সবকিছুই যেন আড়াল হয়ে যাবে। বর্গ কিলোমিটার এককে এই সমগ্র আয়তনকে বি-৮৩ এর ধ্বংসসীমার ব্যাসার্ধ দিয়ে ভাগ করলে মানবজাতির তাৎক্ষণিক বিনাশে ঠিক কতটি বি-৮৩ প্রয়োজন তা জানা সম্ভব।

আর তা হলো বর্তমানে যতটি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে তার ৮২.৭৪ গুণ, যেখানে এক মিলি সেকেন্ডে আমাদের মানবজাতির প্রত্যেককে ছিন্নভিন্ন করতে প্রয়োজন ১,২৪১,১৬৬টি পারমাণবিক অস্ত্র, যার বিপরীতে পৃথিবীতে বর্তমানে রয়েছে ১৫০০০ এর মতো।পৃথিবীর বুকে এখন লিটল বয়ের চেয়েও শক্তিশালী সংস্করণ বিদ্যমান। প্রথমে, যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষা চালানো পারমাণবিক বোমা ‘আইভি কিং' এর কথাই ধরা যাক। এটি ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনার ব্যাপারে লিটল বয়ের চেয়ে সামান্য বেশি দক্ষ। পুরো উত্তর আমেরিকাকে ধূলিসাৎ করতে মোট ৫৫,০০০ আইভি কিং যথেষ্ট হবে।আমেরিকার তৈরি লিটল বয়ের চেয়ে বি-৫৩ বোমাটি ৬০০ গুণ শক্তিশালী। বোমাটি কার্যকরীভাবেও বেশি শক্তিশালী।

এদিকে রাশিয়ায় তৈরি মানবজাতির এখন পর্যন্ত ডেটোনেট করা সর্ববৃহৎ এ পারমাণবিক বোমাটির কথা না বললেই নয়। বলা হয় এটি পারতপক্ষেই ডেকে আনতে পারে পৃথিবীর প্রাণীকূলের অন্তিম দিবস। মাত্র ১৬,০০০টি জার বম্বা পুরো পৃথিবীকে ধূলোয় মিশিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।ম্যাক্সিমিলানের মতে, 'পৃথিবীতে এই মূহুর্তে প্রায় ২০,৫০০ পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যদি সেগুলোর গড় কার্যকরী ক্ষমতা হয় ৩৩,৫০০ কিলোটন, তাহলে পৃথিবী নামক গ্রহটিই ধ্বংস করার পক্ষে যথেষ্ট পারমাণবিক বোমা ইতোমধ্যেই মানুষ তৈরি করে ফেলেছে!'পৃথিবীতে অবস্থানকারী কার্যকর প্রায় ১৫ হাজার পারমাণবিক বোমা লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যার পাশাপাশি অসংখ্য শহরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে যথেষ্ট।

দৈনিক টেলিগ্রাফের করা এক গবেষণা মতে, ধারণা করা হয়,আমেরিকা ও রাশিয়ার অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা অস্ত্রসমূহের মিলিত শক্তি প্রায় ৬,৬০০ মেগাটনের সমান, যা প্রতি মিনিটে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত সৌরশক্তির দশ ভাগের এক ভাগের সমতুল্য!NukeMap ওয়েবসাইটের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রসম্ভারে থাকা সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্র বি-৮৩ নিক্ষেপের প্রথম ২৪ ঘণ্টায়ই ১.৪ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করে ফেলবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ৩.৭ মিলিয়ন মানুষকে আহত করবে, যেহেতু তাপীয় তেজষ্ক্রিয়তার ব্যাসার্ধ দাঁড়াবে ১৩ কিলোমিটারে।

উপরিউক্ত পারমাণবিক বোমার শক্তি ও এদের কার্যকারিতা দেখে সহজে অনুমেয় পৃথিবী কতটা ঝুকিপূর্ণ।পৃথিবী মানব সৃষ্ট গজব নামক কিয়ামতের খপ্পরে কতটা নিমজ্জিত?একটি কথা প্রচলিত আছে যুদ্ধ বিলুপ্ত করো নয়তো যুদ্ধ মানুষকে বিলুপ্ত করবে।পারমাণবিক বিস্ফোরণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া এবং ওজোনস্তরের ফুটো বা ফাটল সভ্যতার ধ্বংসের কারণ হতে পারে। এসবব সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, 'জল–স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল।' (সুরা রুম আয়াত- ৪১)

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক


সর্বশেষ সংবাদ