যত দোষ ছিল নন্দ ঘোষের এখন নুরের
নুর একাই লড়ে যাচ্ছে শোষণ বঞ্চনাহীন সমাজ বিনির্মাণে। পাশে পেয়েছে একদল নির্ভীক টগবগে তারুণ্যে উদ্দীপ্ত স্বপ্নবিলাসী তরুণ। নুরের এই পথ চলা কখনো কুসুমাস্তীর্ণ হয়নি। বড়ই বন্ধুর সেই পথ।এ পথে পোহাতে হয়েছে তাকে শত যুলুম নির্যাতন। তার জীবনের উপর দিয়ে বয়ে গেছে অবর্ণনীয় ধকল।তবুও দুমড়ে মুষড়ে যায়নি নুর। হয়নি নত ঐ শোষকের যুলুম আর তাঁবেদারীর কাছে। যত নির্যাতন হয়েছে তত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে হিমালয়ের মতো। কখনো হয়েছে চীনের দুর্ভেদ্য মহাপ্রাচীর।উপেক্ষা করেছে শোষকের রক্তচক্ষুর ভয়। হুংকার দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে এ লড়াই চলবে আমৃত্যু।
এখন নুরের অবর্তমানে হাজারো নুর প্রস্তুত শোষকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। শির উচু করে তারা ডাকছে সত্যের সারথি হতে।তাদের এ পথে চলতে শুনতে হচ্ছে অপবাদ। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে তাদের দেওয়া হচ্ছে সীমাহীন অপবাদ। কখনো কখনো তাদের বলা হয়েছে জামাত শিবির, বিএনপি।যখন নুর গণভবনে যায় তখন তাকে বলা হয় আওয়ামীলীগ। যখন গণফোরামের সমাবেশে নুর যায় তখন হয়ে যায় ড. কামালের লোক। কি অদ্ভুত! কি হাস্যকর অভিযোগ ও অপবাদ নুরের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশের জনগণ দুই দলের যাঁতাকলে পিষ্ট। জাতীয় রাজনীতিতে বড় দুই দল জাতির ক্রান্তি লগ্নে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না।জাতীয় ঐক্যমত্য তৈরিতেও তারা ব্যর্থ। এই ধারা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। রাজনীতির এই দিওলিয়াপনা, অনাস্থা নিরসন প্রয়োজন। জাতির প্রয়োজনে দেশ গড়তে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ খুব বেশি প্রয়োজন। নুর সেই অভাব পূরণের প্রত্যয়ে কাজ করছে। দলীয় গোঁড়ামী সংকীর্ণতা মূলোৎপাটন করে দেশের জন্য কাজ করাই নুরের ব্রত। নুরের এ কাজে এসেছে সীমাহীন বাধা, অকথ্য নির্যাতন, মিথ্যা প্রপাগান্ডা, মামলা, হামলা। সবকিছু কিছু মাড়িয়ে জনগণের ভালোবাসায় নুর স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। পাছে লোকে কিছু বলে সে ভাবনা তাকে আর পিছু টানে না। সমাজিক অনাচার, বৈষম্য দূরীভূত করতে সে এখন অকুতোভয় আরো বেশি নির্ভীক। তাকে নিয়ে কত প্রশ্ন, শত জল্পনাকল্পনা।
সেসব নিয়ে এবার কিছু আলোকপাত করি। একজন প্রশ্ন তুলেছেন, ডাকসুর ভিপি নুরকে যারা নির্দলীয় বলে তারা বোকার স্বর্গে নাকি বাস করে। ভুলে গেলে চলবে না মানুষ জন্মগত ভাবে রাজনৈতিক জীব। মানুষের নিজস্ব চিন্তা চেতনা মতামত থাকতেই পারে। নুর এসবের ঊর্ধ্বে নয়। তবে প্রচলিত খাই খাই ভাই ভাই রাজনীতির সদস্য সে নয়। সে সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে রাজনীতি করে। নুরের একটি সংগঠন আছে, সুতরাং নুর নির্দলীয় হয় কি করে? এসব প্রশ্ন তোলা বাতুলতা বৈকি। নুর শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করতে পারে, আমেরিকান এম্বাসি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সকল অনুষ্ঠানে যেতে পারে। আপনাদের এতো গাত্রদাহ হয় কেন? নুর তো এসব অনুষ্ঠানে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে প্রিয়া সাহা ও আপনাদের মতো নালিশ করে না। ষড়যন্ত্র করে না। গাদ্দারী করে না। তবে নুরের যাওয়া নিয়ে আপনাদের এতো ঈর্ষা কেন?
নুর ডাকসুর ভিপি হয়ে কোটি কোটি টাকার টেন্ডারবাজিতে অংশ নিয়েছে, ফোনালাপের অডিও ফাঁস হয়েছে, জোড়াতালি রেকর্ডিং নুরের কণ্ঠ বলে চালিয়ে দিলেও জনগণ কিন্তু তা গিলেনি, হজম করেনি।কারণ নুরের যদি এতো টাকা পয়সা প্রয়োজন হতো তাহলে নুর এতোদিন ডিগবাজি দিয়ে সরকারি দলের হয়ে যেতে পারতো। বিক্রি হয়ে যেতো পারতো। নুর সেই টোপ তো গিলেনি।কেউ টাকার কাঙ্গাল , কেউ সাধারণ মানুষের ভালোবাসার। নুরের সঙ্গে এদেশের মানুষের ভালোবাসা আছে এটিই তার বড় পাওয়া।
নুর টেন্ডারবাজি করেছে বলে জোড়াতালি দেওয়া ভাঙ্গা অডিও ক্যাসেট বাজানো হচ্ছে।
এছাড়া এখন পর্যন্ত বড় সড়ো কোনো প্রমাণ কি তারা দেখাতে পেরেছেন? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা আছে, দুদক আছে খুঁজে বের করুক।নুরের টেন্ডারবাজির খবর। নুরকে আইন আদালতে সোপর্দ করেন। তথ্য প্রমাণ হাজির করে বিচার করেন। তা না করে আপনাদের আষাঢ়ে গল্প ও গোয়েবলসীয় নীতি এখন ধোপে টিকে না। জনগণ সব বোঝে, কোনটি রাজনীতি আর কোনটি অপরাজনীতি, অপবাদ।
নুরের সংগঠনের আর্থিক সোর্সের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমার যতটুকু জানা এই সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের দেওয়া চাঁদা থেকে। কঠিন পরিস্থিতিতে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে হাত পাতে। সাধারণ শিক্ষার্থী, সুধীজন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের বিমুখ করেন না। সাম্প্রতিক ডাকসুর হতাহতের ঘটনায় অাহতদের চিৎকিসায় অর্থের প্রয়োজন হলে অনেকে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। সুতরাং তাদের অঢেল অর্থ বিত্ত আছে বিভিন্ন দেশ গোষ্ঠী তাদের সহযোগিতা করেন এ ভাবনাটা যারা ভাবেন মূলত তারাই বোকার স্বর্গে বাস করছেন।আজ পর্যন্ত নুররা চার পাঁচ বার সরকার গঠন করেন নি। এমপি মন্ত্রী হননি যে আপনাদের মতো বিত্ত বৈভব হবে। এসবের আশাও তারা করেন না। আজ পর্যন্ত শুনেছেন চাঁদাবাজি করতে গিয়ে নুরদের কেউ ধৃত? আয়নায় নিজেদের চেহারাটা দেখেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে কত অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন! আপনাদের এখন ঠাকুর ঘরে কে রে?আমি তো কলা খাই না অবস্থা।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি, নুর ডাকসুর ভিপি হয়ে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলতে পারেন না। কত বড় অজ্ঞ, নালায়েকের দল। এরা ইতিহাস পড়েছে? কোনো ধারণা আছে?যদি তাই হবে ভিয়েতনাম নাম যুদ্ধের সময় অতীতে মতিয়া- মেনন- সেলিমরা যখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী হামলার প্রতিবাদ করেছিলেন তখন কি তা অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ ছিল? এখন কী বন্ধুরাষ্ট্র বলে ভারত নিয়ে চুপ থাকতে হবে? বিজেপি সরকারের পদক্ষেপকে বাংলাদেশ সরকার ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বললে সবাইকে তা মেনে জো হুকুম জাঁহাপনা বলে নত শিরে মেনে নিতে হবে?বিভিন্ন সময়ে বৈশ্বিক ইস্যুতে যেমন, ফিলিস্তিন-ইরাক যুদ্ধ, আফগানিস্তান আমেরিকার বর্বরতার প্রতিবাদে এদেশের ছাত্রসমাজের বিক্ষোভ ও মিছিল হয়েছে আজ তা নতুন কিছু নয়। তবে কেন কথিত মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের এই পেরেশানী?
নুরুল হক নুর কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মাঝেমধ্যেই আলোচনায় থাকতে চায় বলে মন্তব্য করলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।আরো বললেন,
ডাকসুর কাজ ছাত্রদের বিষয় নিয়ে কাজ করা, ভারতের রাজনৈতিক বিষয় তো তাদের কাজ না।একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী এমন অজ্ঞতাপূর্ণ বক্তব্য দিতে পারেন কি না ভাবনার বিষয়।
প্রথমত বলি নুরের ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় আসার প্রয়োজন নেই। নুর অর্থ আলো। নুরের আলোয় আলোকিত হয়ে ছাত্র সমাজ ধন্য। এমনিতে সে ছাত্রদের মণিকোঠায়। বরং আপনাদের সোনার ছেলেরা তার ওপর নয় বার হামলা করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। নুর কোনো সোনার ছেলের কাছে পিঠ এগিয়ে দিয়ে বলেনি আমাকে আলোচনায় নিয়ে এসো। দ্বিতীয়ত বলি, একজন শিক্ষার্থীর ভাবনা হবে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বময়। সেখানে শুধু দেশের কথা নয়, বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়ত মানুষের পক্ষে কথা হবে। নুর সব সময় মানবতাবাদীদের পক্ষে বলিষ্ঠ হুংকার দিয়েছে। এতেই আপনাদের হাঁটু কাঁপুনি শুরু হয়েছে।অথচ বাংলাদেশের সংবিধানে বৈদেশিক নীতিতে কি বলা আছে? উনি কি ভুলে গেছেন?সংবিধানে সুষ্পষ্ট বলা আছে, প্রতিটি মানুষের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং তার নিজের পছন্দ অনুযায়ী নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে সমর্থন করা, এবংসাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতা বা জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত সারা বিশ্বের সকল নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে "যত দোষ নন্দ ঘোষ। অর্থ - যে যাই করুক না কেন, দোষটা একজনের ঘাড়েই পড়ে।দুর্বলের প্রতি সর্বদা দোষারোপ। যাই ঘটুক না কেন। নুর কেন বারবার হামলার শিকার হচ্ছেন। আগের লেখায় বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছি আজ মেজর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করছি।
প্রথমতঃ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি। অনেকটা জেদের বশে কোটা বাতিল করা হয়েছে। এটি সরকারের এক ধরনের পরাজয় মনে করা হয়।
দ্বিতীয়তঃ ডাকসু নির্বাচনে নুরের কাছে ছাত্রলীগ প্রার্থীর পরাজয়।
তৃতীয়তঃ নুর ফোবিয়া বা সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন মনে করে নুরের কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণ আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।এ ভয় থেকে তাদের মারমুখি অবস্থান। তাদের ভাবনা এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক