২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:১৩

স্বার্থান্ধ ভাইলীগ তৈরি হচ্ছে, আদর্শিক কর্মী নয়: সাবেক নেত্রীর স্ট্যাটাস

বাণী ইয়াসমিন হাসি  © টিডিসি ফটো

ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদা আপু আর আমি একই ফ্লোরে থাকতাম। তখন আমি মাত্র প্রথম বর্ষে পড়ি।সকালে বেসিনে ব্রাশ করতে করতে আপুর সাথে গল্প হতো। এই বাণী আজকের ইত্তেফাক দেখেছো? না আপু আমি তো রুমে জনকন্ঠ রাখি।ইত্তেফাকে তোমার অনেক বড় ছবি এসেছে (সরকারবিরোধী হরতালের মিছিলের ছবি)। আমার রুম থেকে নিও।আমি ভুলে যেতাম কিন্তু রাতে রুমে ফিরে দেখতাম আমার ডেস্কে ইত্তেফাক।

ছাত্রদল আর পুলিশের হামলায় আমার তিনবার হাত ভেঙেছিলো।প্রতিবার চোখ মেলে হাসপাতালে আমি আরেফীন স্যার, নাজমা শাহীন ম্যাম আর সাদেকা হালিম ম্যামকে দেখতাম।পাশাপাশি আমার হলের সেই সময়ের প্রভোস্ট সাদাদলের খুব প্রভাবশালী নেতা তাজমেরী এস এ ইসলাম ম্যামকেও দেখতাম।আপার সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাদের ভাই হাসপাতালে ছুটে আসতেন।পুরো চিকিৎসার দেখভাল করতেন।চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে আমি কিন্তু আবার হলেই ফেরত যেতাম।একবার আমার হাত ভাঙার পাশাপাশি পায়েও ব্যথা পেলাম।আমি থাকি এক্সটেনশনের দোতালায়।সেই সময়ের ছাত্রদলের সভাপতি নারগিছ আপু কোলে করে আমাকে আমার রুমে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

মাহবুব আরা গিনি আপু, আপার নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের মেয়েদের হলগুলোর টেক কেয়ার করতেন।সেই সময়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাই ছিলেন আমাদের আপার বডিগার্ড, এসএসএফ বা সভাসদ।তাই আমার মত সামান্য একজন কর্মী আহত হলেও সে খবর আপার কানে পৌঁছে যেতো।

গতকাল শাকিল ভাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল বাংলা একাডেমিতে।পেছনের সারিতে বসে দেখছিলাম।বর্তমান একনেতা যখন অডিটোরিয়ামে ডুকলো তখন সাথে বেশ বড় বহর।কিছুক্ষণ পরই সাবেক হয়ে যাওয়া নেতা ডুকলো।আমাকে সালাম দিলো।তাকিয়ে দেখি সাথে মাত্র ৫ জন!

আমি এখনো আমার নেতা লিয়াকত ভাই, সাজ্জাদ ভাই, আজিম ভাই বা দেলোয়ার ভাইকে যেখানেই দেখি দাঁড়িয়ে যাই।উনারা মানা করলেও সেই স্থান ত্যাগ না করা পর্যন্ত পিছ পিছ ঘুরতে থাকি।নেতার প্রতি যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং কমিটমেন্ট সেই জায়গাটা আজো অটুট।এখানকার নেতারা কিছু স্বার্থান্ধ ভাইলীগ তৈরি করে,আদর্শিক কর্মী তৈরি করে না।তাই পোস্ট চলে যাওয়ার সাথে সাথেই ভাই বদল হয়ে যায়।

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সহনশীলতা রাজনীতির আসল সৌন্দর্য।আমি বিশ্বাস করি সবচেয়ে সচেতন এবং মানবিক ছেলেমেয়েগুলোই ছাত্র রাজনীতি করে।সেই তারাই কেন ভালোবাসার ফুল না ফুটিয়ে ঘৃণার চাষাবাদ করবে?

লেখক: বাণী ইয়াসমিন হাসি, সাবেক সহ-সভাপতি বালাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা