১৬ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৫৫

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, শিশুদের সফলতার প্রথম ধাপ

  © ফাইল ফটো

প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল রোববার। চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। সারাদেশে মোট সাত হাজার ৪৭০ টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে দেশের বাইরে রয়েছে আটটি দেশে ১২ টি কেন্দ্রে।

পরীক্ষা প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হবে দুপুর ১টায়। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে। ছয়টি বিষয়ের প্রতিটিতে ১০০ করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৬৭ ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেবে। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ১১ লাখ ৮১ হাজার তিনশ’ ও ছাত্রী সংখ্যা ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৯৬৭ জন। ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় তিন লাখ ৫০ হাজার ৩৭১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৮৭ হাজার ৮২ এবং ছাত্রী সংখ্যা এক লাখ ৬৩ হাজার ২৮৯ জন। দেশের বাইরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬১৫ জন।

প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা হলো শিশুদের জীবনে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। প্রাক- প্রাথমিক থেকে শুরু করে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা শেষে শিশুরা এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা হওয়ায় শিশুদের মধ্যে উৎসাহ কাজ করলেও অনেকের মধ্যে ভয়ও কাজ করতে পারে। তাদের এই ভয়কে জয় করে পরীক্ষার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে বছর ব্যাপি চলে বিভিন্ন কার্যক্রম। তারা যেনো নির্ভয়ে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় সফল হতে পারে সে জন্য তাদের প্রস্তুত করা হয়।

আমি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলবো, তোমাদের ভয়ের কিছু নেই। আমাদের সময় আমরা যে কাজটি দশম শ্রণি পর্যন্ত পড়াশুনা শেষে এসএসসি কিংবা দাখিল পরীক্ষার জন্য বসতাম, তোমরা সে রকমই একটা পরীক্ষা পঞ্চম শ্রেণি শেষে দিচ্ছ। তোমরা আমাদের থেকে অনেক বেশি এডভান্স হচ্ছো। অনেক আগ থেকেই নিজেকে তৈরি করতে শিখছো। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেকে প্রস্তুত করছো, যা তোমাদের চলার পথকে সহজ করে দিতে সহায়তা করছে।

আমাদের সময় হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হতো এবং তাদেরকে প্রস্তুত করা হতো। যার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পরবর্তীতে ঝরে পড়তো। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখন প্রাথমিকে ঝরে পড়া অনেক কমে গেছে এবং কয়েক বছরের মধ্যে শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।

বছর ব্যাপী প্রাথমিকের যে কার্যক্রম তার অনেকগুলোই সমাপনী কেন্দ্রিক। শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে খাতা দেখা এবং পরীক্ষার হলে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করাসহ সকল বিষয়ে অবহিত করা হয়। যাতে করে ভয়হীন পরিবেশে পরীক্ষা নিতে সক্ষম হন এবং খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারেন।

প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার একটি বড় পরিবার। এই পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনেক। শিক্ষকদের একটি বিশাল অংশ সমাপনীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আমি বলবো, আমরা সকলে যদি আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করি তাহলে আমাদেরই ইমেজ রক্ষা পাবে এবং আজকে যে শিশুরা পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের উজ্জল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে।

পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন কিংবা উত্তরপত্র মূল্যায়ণ সকল ক্ষেত্রে নিজের অসাবধানতা বশতঃ যেনো কোনো ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ মূল্যায়ন যেনো হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের ভুলের কারণে কোন শিশুর জীবন যেনো নষ্ট না হয়। উত্তরপত্র মূল্যায়ণের জন্য যে মার্কিং স্কীম দেওয়া হয়, সেটি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।

মনগড়া কোন কিছু, অতি মূল্যায়ন কিংবা অবমূল্যায়ন কোনটিই করা যাবে না। এ ব্যাপারে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে, যা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি, আমাদের সকল শিক্ষক প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তা যথাযথভাবে অনুসরণ করবেন।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই যদি আমরা সাবধানতা অবলম্বন করি তাহলে ভুল কম হয়। দু’একজনের ভুলের কারণে প্রতিবছর কিছু সমস্যা হয়। তাই এ বছর আমরা খেয়াল রাখবো।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী নিয়ে শিশুদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। তারা বছরের শুরু থেকেই সমাপনীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে এবং সমাপনীর আগে ক্লাস পার্টি করা,দোয়ার আয়োজন কিংবা বিদায় অনুষ্ঠান করা এগুলো শিশুদের জীবনে অন্য মাত্রা যোগ করে। তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুনাবলী,বক্তৃতা দেয়ার অভ্যাস, সহপাঠীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ প্রাথমিক থেকেই গড়ে উঠে। যত দিন যাচ্ছে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দিকগুলো কাজে লাগাতে হবে।

পরিশেষে বলবো, প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা শিশুদের জীবনে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছো তোমাদের জন্য নিরন্তর শুভকামনা। তোমরা মনে অভয় নিয়ে সাহসিকতার সাথে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফল হও এই কামনা করি। আর আমরা যারা সমাপনী পরীক্ষার বিভিন্ন দায়িত্বে আছি, আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করি।

লেখক: সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার   
naforhad.du@gmail.com