‘জেলহত্যা দিবস' এক আনুষ্ঠানিকতা’

তাজউদ্দিন আহমেদ ও ফারুক হাসান
তাজউদ্দিন আহমেদ ও ফারুক হাসান  © টিডিসি ফটো

৩'রা নভেম্বর ‘জেলহত্যা দিবস’। এইদিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চার সংগঠক জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন থেকে দিনটিকে ‘জেলহত্যা দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছে বাংলাদেশের মানুষ।

এখন কথা হচ্ছে, জেলহত্যা দিবসে যে চারজন নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল তাদেরকে আজকের বাংলাদেশ কতটুকু মূল্যায়ন করে এবং কিভাবে করে তা আলোচনা করলেই সহজে বিষয়টি অনুধাবন করা যাবে।

জাতীয় চার নেতার অন্যতম ছিলেন বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহম্মেদ। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত ঘনিষ্ঠ সহচর, যিনি সবসময় বঙ্গবন্ধুকে সকল প্রকার বিপদ-আপদ থেকে আগলে রাখতেন। যিনি সবসময় মনের মধ্যে এটাই লালন করতেন যে "বঙ্গবন্ধুর কোন বিপদ হওয়ার আগে সেই বিপদে যাতে আমি প্রথমে পরি, তবুও বঙ্গবন্ধুর যাতে কিছু না হয়" তিনি'ই হলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পথপ্রদর্শক বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহম্মেদ।।

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেশ পরিচালনায় কিছু বিষয় মিলে নাই বলে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভা থেকে বঙ্গতাজকে বহিষ্কার হতে হয়েছিল।
আজকে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহম্মদের নামগন্ধও নেই আমাদের পাঠ্যপুস্তক গুলোতে, অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে পুরো যুদ্ধে সাহসিকতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহম্মেদ।

বঙ্গতাজের অসামান্য নেতৃত্বে আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীন করতে সক্ষম হই, অথচ আজকের নবীন প্রজন্ম তেমনিভাবে জানেনই না যে তাজউদ্দীন কে ছিলেন। এর দায় বর্তমান সরকার ও আওয়ামীলীগ কখনোই এড়াতে পারবে না।।

পরিকল্পিতভাবে বঙ্গতাজকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে, যাকিছু অবশিষ্ট ছিল তাও আজকে ধীরে ধীরে ক্ষীয়মাণ।

যেই বঙ্গতাজ ছিলেন আওয়ামীলীগের নিভুনিভু প্রদীপের অগ্নিশিখার মতো জ্বলে ওঠা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ছিলেন দলের অভিভাবক অথচ তারই পরিবার আজকে আওয়ামীলীগের কাছে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।।

বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভা থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল তাজউদ্দীন আহম্মেদকে, তারই ছেলে সোহেল তাজকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আওয়ামী শাসন আমলে বঙ্গতাজের নাতীকে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, তাঁর আরেক নাতীকে গুমের শিকার হতে হয়েছে। এই হলো দলের নিবেদিত প্রাণ বঙ্গতাজ ও তার পরিবারের অবস্থা।

বাংলাদেশের উপর যে একটি অশুভ শক্তি স্বাধীনতার পর থেকেই ভর করে আছে, তা এই ঘটনা গুলো দেখলেই সহজে অনুমেয়। আর এই অশুভ শক্তির হাত থেকে এদেশ যতদিন না মুক্ত হবে ততদিন শৃঙ্খলের বেড়াজালে বাঙ্গালীকে বন্দী থাকতে হবে।।

আজকে জাতীয় চার নেতাকে আমরা শুধুমাত্র একটি ‘‘পুষ্পাঞ্জলি'র’’ মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি, আর খুব বেশি হলে তাদের স্বরণে একটি আলোচনা সভা। যদি ভাবেন এতেই আমাদের দায়িত্ব শেষ, তাহলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় একদিন আসামি হয়ে দাঁড়াতে হবে। কেউ পার পাবেন না কথাটা মনে রাখবেন।

ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত করে নিজেদের নষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করে যাবেন আর আগামীর প্রজন্ম আপনাদের ছেড়ে দিবে এটা ভাবলে মস্তবড় ভুল করবেন। আগামীর প্রজন্ম অবশ্যই একদিন না একদিন আসামির কাঠগড়ায় তুলবে, সেদিন কড়ায়গণ্ডায় সবকিছু আদায় করে ছাড়বে।


লেখক: যুগ্ম-আহবায়ক, ছাত্র অধিকার পরিষদ।


সর্বশেষ সংবাদ