আমরা তখন অর্ণবে বুঁদ, আহা! কিআনন্দ!
কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এসে বিদ্যুস্পর্শে নিহত হয়েছেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার। তবে আবরারের আহত হওয়ার পর থেকে তার মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরও অনুষ্ঠান বন্ধ করেনি কিশোর আলোর আয়োজকরা।
গতকাল শুক্রবার বিকালে অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হলে তাকে মহাখালীর বেসরকারি ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুষ্ঠান আয়োজকদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে অনেকে। ঘটনার বিবৃতি দিয়ে এ নিয়ে একটি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন জনপ্রিয় তরুণ কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু।
তিনি স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘কিশোর আলোর ৬ষ্ঠ বার্ষিকী ‘কিআনন্দ’ উদযাপিত হচ্ছিল। মাইকে সম্পাদক আনিসুল হক স্যার সাহেব অসংখ্যাবার বলে যাচ্ছিলেন, কিশোর আলো যারা পড়ে তারা ভালো মানুষ হয়, না পড়লে যে হয় না তা না- তবে পড়লে বেশি ভালো মানুষ হয়, আইনস্টাইনের সময় কিশোর আলো থাকলে আইনস্টাইন আরো বেশি ভালো মানুষ হতেন ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
তারপর মঞ্চে গান গাইতে উঠলেন গায়ক তাহসান। তার গান পরিবেশনকালীন সময়ে বৈদ্যুতিক শকে আহত হইলো রেসিডেন্সিয়াল মডেলের ছাত্র আবরার। কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা উপস্থিত সকলকে জানাতে কিংবা বৈদ্যুতিক তারের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে বিরত থাকলেন।
কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতায় এবং মাঠে বিরাজমান আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ‘এফসিপিএস’ ডাক্তারদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে তাকে নিকটস্থ ‘সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের’ জরুরী বিভাগে না নিয়ে এম্বুলেন্সে করে মহাখালীস্থ ‘আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে’ নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়... কারণ আয়েশা মেমোরিয়াল এই সংক্রান্ত ব্যাপার ‘ফ্রি’ তে করার জন্য চুক্তিবদ্ধ... বলে রাখা ভালো, আবরার তখনো জীবিত... এবং অনুষ্ঠান চলমান।
আবরারের মৃত্যুর খবর যখন আসে তখন গায়ক অর্ণব মঞ্চে। কি অদ্ভুত! কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ এ ভয়ংকর মৃত্যুর সংবাদ উপস্থিত সকলকে জানাতে তখনও বিরত থাকলেন এবং অনুষ্ঠান তখনও চলমান। আমরা তখন অর্ণবে বুঁদ, আহা! কিআনন্দ!
আচ্ছা, দুর্ঘটনার পর পর কর্তৃপক্ষ তা জানার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ থেকে যদি ঘোষণা আসতো “তোমাদের এক বন্ধু বৈদুতিক শক খেয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। সে সুস্থ হয়ে না ফেরা পর্যন্ত আমরা অনুষ্ঠান বন্ধ রাখব এবং নিজেরা নিজেদের এবং বন্ধুদের সাবধানে রাখব। তাহসান, অর্ণব সবাই অপেক্ষা করবে। কারণ, কিশোর আলো ভালো মানুষ বানানোর কারিগর”
তাহলে কি মাঠে বিরাজমান আমরা যারা দর্শক ছিলাম তারা চিৎকার করতাম? যে না আমাদের গান শোনানোই লাগবে, নইলে তোমাদেরকে গালি গালি...নাকি ব্যাপারটা বুঝে আবরারের জন্য মন খারাপ করে অপেক্ষা করতাম?
কিংবা যখন মৃত্যু সংবাদ আসল, তৎক্ষণাৎ অর্ণবের গান থামিয়ে মঞ্চ থেকে ঘোষণা আসত, “তোমাদের এক বন্ধু বৈদুতিক শক খেয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। তাই আমরা এই মুহূর্ত থেকে অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করছি এবং তোমাদের সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি। কারণ, কিশোর আলো ভালো মানুষ বানানোর কারিগর, কিশোর আলো সহমর্মিতা শেখায়, কিশোর আলো বন্ধুদের খেয়াল রাখা শেখায়”
তাহলেও কি মাঠে বিরাজমান আমরা যারা দর্শক ছিলাম তারা চিৎকার পারতাম যে না আমাদেরকে গান শোনানোই লাগবে, নাইলে তোমাদেরকে গালি গালি। নাকি ব্যাপারটা বুঝে আবরারের অকাল মৃত্যুতে কান্না করতাম?
অবাক লাগছে ভেবে যে, এমন একটা সংবাদ কানে আসার পরেও কেমন করে কিশোর আলোর মত একটা বিজ্ঞ কর্তৃপক্ষ সীদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে ভুগতে অনুষ্ঠান চালিয়ে গেল?
কীভাবে জানার পরেও আনিসুল হক স্যার সাহেব মঞ্চে দাঁড়িয়ে অংক বিষয়ক গেসিং গেম চালিয়ে গেলেন! কীভাবে ‘এফসিপিএস’ ডাক্তারগণ সবচেয়ে কাছের হাসপাতালে না নিয়ে দূরের হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?
অথচ আমার বিশ্বাস এমন দুর্ঘটনা ওনার সঙ্গে ঘটলে (আল্লাহ না করুক) কিশোর আলোর সব বাচ্চাগুলাই তৎক্ষণাত অনুষ্ঠান বন্ধ করে কোলে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যেত। এক মূহুর্তের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগত না তারা।
খারাপ লাগতেছে বাচ্চা বাচ্চা ভলান্টিয়ারগুলার জন্য। কর্তৃপক্ষের সীদ্ধান্তহীনতার ভুলে মানুষের গালি খাচ্ছে এবং বুলিড হবে তারা।
জেনে রাখলে ক্ষতি নাই, দেশে গত ১ বছরে এটা ৩য় ‘আবরার’ এর মৃত্যু।’