অফিসার্স ব্লক: শত প্রাণের স্পন্দন যেখানে
‘মনের আড়াল তো চোখের আড়াল’ কথাটি কতটুকু সত্য বা মিথ্যা তা অনেকাংশে নির্ভর করে ভালোবাসার গভীরতার উপর। এর পরিপূরক হিসবেও এ কথা বলা যায়, যদি থাকে মনে থাকুক না ঘরের কোণে। ভালোবাসার কোন রং কিংবা বর্ণ থাকতে পারে না। ভালোবাসা হচ্ছে দুটি মনের এক হওয়া। যেখানে থাকবে না কোন ভেদাভেদ থাকবে না কোন মতভেদ। কথা যত সহজে বলা হলো কিন্তু তত সহজে বাস্তবে হওয়া অনেক কঠিন।
ভালোবাসা থাকলেও যেন আজকাল রাগ-অভিমান না হলে ভালোবাসাই জমে উঠে না। এসবের সব কিছুরই মিশ্রণ ছিলো দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আবাসিক হল শেখ রাসেলে। যার পূর্ব নাম ছিলো শহীদ নুর হোসেন হল এবং তারও পূর্বে যার নাম ছিলো জিহাদ হল। সেই হলের তৃতীয় তলার পশ্চিম ব্লকের নাম অফিসার্স ব্লক।
২০১৩ সালে আমি যখন এসেছি তখনও ব্লকটির এই নামই ছিলো। কে বা কারা অফিসার্স ব্লক নাম দিয়েছে তা সঠিকভাবে এখনও জানা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য ব্লকের নাম পরিবর্তন হলেও এটি অপরিবর্তিত রয়েছে। সাধারণত ব্লক ফেস্টের সময় ব্লকের নাম পরিবর্তন হয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর ২০ বছরে পদার্পণ করেছে। এই দীর্ঘ ২০ বছরে অনেক নতুন মুখের আগমন ঘটেছে পুরাতন মুখের বিদায় হয়েছে। আজকে যারা আছে তাদেরও এক সময় চলে যেতে হবে। নবীনদেরকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এভাবে যুগের পর যুগ ধরে পালা বদল হবে এটাই বাস্তবতা। কবির ভাষায় বলতে হয় এসেছে নবীন ছেড়ে দিতে হবে স্থান।
গত (২২ অক্টোবর ২০১৯) অফিসার্স ব্লকের ব্লক ফেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই সুবাদে সকল জরাজীর্ণটা আর ভেদাভেদকে ভুলে সিনিয়র ও জুনিয়রদের মিলন মেলায় পরিণত হয় অফিসার্স ব্লক। ফেস্ট উপলক্ষে হরেক রকমের বেলুন আর লাল-নীল বাতিতে সুসজ্জিত করা হয় ব্লকটিকে। আর বাংলা-হিন্দি ও ইংলিশ গানে মাতিয়ে রাখা হয় পুরো হলকে।
গানের তালে তালে চলে রান্না-বান্নার কাজ। ব্লকের সবাই ব্যাচেলর, বাপের টাকায় খায় পড়ে আর ঘুমায়। তাই ব্লক ফেস্টের রান্নার কাজ সারতে হয়েছে নিজ হাতেই। ব্লকের সবাই কম-বেশি রান্না পারলেও তত বড় পারদর্শী না। তাই রান্নার ভার পড়ে ব্লকের সিনিয়র ব্যক্তি ১৩তম ব্যাচের ভবেশ চন্দ্র বর্মণ এবং তুহিন ভাইয়ের হাতে। তাদের সহযোগিতা করে ব্লকের বাকী সদস্যরা। রাত ১১টার দিকে গিয়ে রান্না শেষ হয়।
এরপর বসে খাওয়া-দাওয়ার আসর। সবাই সারিবদ্ধভাবে একই ভবনের একই ব্লকে এ যেন শত প্রাণের স্পন্দন। খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাই মিলে বসে আড্ডার আসর। অনুভূতি, অভিজ্ঞতা আর অতীত ইতিহাস নিয়ে চলে আলাপচারিতা। আলাপচারিতার উঠে আসে ব্লকের সিনিয়র অনেক ভাইয়ের সফলতার গল্প।
ব্লকের সাবেক বাসিন্দা স্টেট অফিসার স্বপন কুমার বর্মণ ও প্লানিং অফিসার মুহিউদ্দিন নুর জানায়, অনেকদিন যাবত আমরা এই ব্লকে ছিলাম তাই এই ব্লকের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা কাজ করে। ব্লক থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরেও গত ঈদে ইউটিলিটি ভবনে না গিয়ে হলের দিকে চলে আসছিলাম। আমাদের আগেও এই ব্লকে অনেক ভাই ছিলো তারাও এখন বিভিন্ন ভালো জায়গায় জব করছেন, অনেক বড় বড় অফিসার হয়েছেন। ব্লকের তেমন কেউ বসে নাই। হয়তো সেকারণেই ব্লকের নাম হয়েছে অফিসার্স ব্লক। তোমরা যারা এখন আছো তোমরাও ভালো ভালো জায়গায় যাবে বড় বড় অফিসার হবে, অফিসার্স ব্লকের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ থাকবে সেটাই প্রত্যাশা।
ব্লক ফেস্টের আয়োজক কৃষি অনুষদের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম রাহাত জানায়, অনেক দিন ধরে ব্লকে কোন মিটিং হয় না। এজন্য কয়েকদিন আগে একটা মিটিং ডাকা হয়েছিল। সেখানে কম-বেশি সবাই ব্লক ফেস্ট করার জন্য প্রস্তাব দেয়। তাদের সাথে একমত হয়ে মূলত ব্লক ফেস্টের আয়োজন করা। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় ব্লকের সাবেক সিনিয়র অনেক ভাইকে ডাকা সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
রাহাত আরও বলেন, এত দ্রুত এ রকম আয়োজন সম্পন্ন করতে আমাদেরকেও অনেক বেগ পেতে হয়েছে। ব্লকের জুনিয়ররা হেল্প না করলে সম্ভবই ছিলো না। বিশেষ করে তন্ময় নামের একটি ছেলে অনেক কষ্ট করেছে। বাজার, রান্না-বান্না, টাকা তোলা থেকে শুরু করে সব জায়গায় সে কাজ করেছে। সর্বোপরি যারা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছে তাদেরকে সকলকেই অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আর প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে যেন খুব দ্রুত প্রতিটি হলে ফেস্টের আয়োজন করা হয়।