নোবেল জয়ী আবদুস সালাম ও তাঁর শিক্ষক ভক্তি
আবদুস সালাম একজন পাকিস্তানী পদার্থবিজ্ঞানী। ১৯২৬ সালের ২৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সাহিয়াল ঝেলার সান্তোকদাসে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। আবদুস সালাম ছিলেন প্রথম পাকিস্তানী যিনি নোবেল জিতেছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি হলেন প্রথম মুসলমান নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী।
১৯৯৬ সালে আবদুস সালাম মৃত্যু বরণ করেন।পাকিস্তানের চেনাব নগরে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। তাঁর সমাধি-ফলকে লেখা ছিল Abdus Salam the First Muslim Nobel Laureate। সমাধি-ফলক স্থাপনের পর পুলিশ মুসলিম শব্দটা মুছে দেন। তাতে লাইনটি দাঁড়ালো Abdus Salam the First Nobel Laureate। কেননা আবদুস সালাম বিতর্কিত আহমেদিয়া জামাত বা কাদিয়ানীদের অনুসারী ছিলেন।
আবদুস সালাম ১৯৭৯ সালে স্টিভেন ওয়াইনবার্গ এবং শেল্ডন লি গ্ল্যাশোর সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল, পুরস্কার লাভ করেন। দুর্বল তড়িৎ তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য তারা এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই তত্ত্বের মাধ্যমে তড়িৎ চৌম্বক বল এবং দুর্বল নিউক্লীয় বলকে একীভূত করা সম্ভব হয়েছিল।প্রফেসর আবদুস সালামের সেই অর্জন আজো পদার্থবিদ্যায় ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটাই ২০১২ সালের 'হিগস বোসন' কণার আবিষ্কারের ভিত্তি তৈরি করেছিলো। আবদুস সালাম নোবেল পুরস্কার পাবার পর তাঁর গুরু ভক্তি নিয়ে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে।
নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর আবদুস সালাম ভারতে যান। ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেন তাঁর প্রাক্তন শিক্ষক অনিলেন্দু গাঙ্গুলীর খোঁজ খবর দিতে। অনিলেন্দু গাঙ্গুলী অবিভক্ত ভারতের লাহোরে সনাতন হিন্দু ধর্ম কলেজে গণিতের অধ্যাপক ছিলেন। আবদুস সালাম তাঁর কাছে ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত অংক শিখেছিলেন বলে জানা যায়।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পরে শ্রী গাঙ্গুলী লাহোর ছেড়ে কলকাতা চলে আসেন এবং প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে আবদুস সালামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।অবশেষে আবদুস সালাম ভারত সরকারের সাহায্যে শিক্ষক শ্রী গাঙ্গুলীর ঠিকানা পেয়ে যান। তিনি ১৯ জানুয়ারি ১৯৮১ সালে কলকাতা আসেন এবং শ্রী গাঙ্গুলীর বাড়িতে যান।সেই সময় শ্রীগাঙ্গুলী বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী ছিলেন।
বিছানা ছেড়ে ওঠার মতো ক্ষমতাও তাঁর ছিল না। আবদুস সালাম তাঁর শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে নোবেল পদকটি বের করে তাঁর গুরুর শীর্ণ হাতে দেন আর বলেন, ‘এই পদকের ওপর অধিকার আমার চেয়ে আপনার বেশি। আপনি আমাকে অংক ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন।’
আমরা গুরু ভক্তির অনেক ঘটনা জানি। এ ঘটনা তথা গুরু ভক্তি আবদুস সালামকে আলাদা ভাবে মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত করেছে।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক