‘সবচেয়ে বড় খুনী ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সেক্রেটারি’
রাজনৈতিক দলগুলোর সবচেয়ে বড় ভন্ডামি হলো, তারা ঘটনা ঘটনার পর বলবে অপরাধীদের সাথে সংগঠনের দায় নেই। কী হাস্যকর!
আচ্ছা আমাকে বলেন তো সাধারণভাবে কবে কোনদিন কোথায় কোন সাধারণ ছেলেরা আরেকজনকে খুন করেছে? যতো খুন বা অপরাধ হয়েছে সব দলের ব্যানারে। আবরারের খুনীরাও তাই।হত্যাকারীরা এখানে সবাই ছাত্রলীগের নেতা। তারা হঠাৎ করে খুনী হয়নি, বরং ছাত্রলীগ পরিচয়ে দিনের পর দিন তারা মাস্তানি করেছে।
আচ্ছা আবরার যদি মারা না যেতেন, আর পুরো দেশ এভাবে প্রতিক্রিয়া না দেখাতো তাহলে কী বুয়েট ছাত্রলীগের কারও কিছু হতো? তাদের বহিস্কার করা হতো? আমি নিশ্চিত হতো না।
খুঁজে দেখেন দেশের প্রতিটা ক্যাম্পাসে প্রতিটা হলে ছাত্রলীগের নেতারা ক্ষমতার কারণে এসব করছে। শুধু ছাত্রলীগ কেন বলছি ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রদলও একই কাজ করেছে।
ভালো করে ভেবে দেখেন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল নিজে আবরারকে পিটুনির নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি যেখানে নিজে থাকে তখন বাকিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলেছে কে কার চেয়ে বেশি মারবে।
কেন এই প্রতিযোগিতা জানেন? কারণ পদ পদবী। ক্যাম্পাস বা হলে ভালো লেখাপড়া করলে, ভালো বিতর্ক বা সংস্কৃতি চর্চা করলে, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করলে, দলে বড় পদ মিলবে না। বরং নেতার কথায় শিবির ট্যাগ দিয়ে আরেকজনকে পেটাতে পারলে, চাঁদাবাজি করতে পারলে, মাস্তানি করতে পারলে দ্রুত পদ মিলবে। ফলে এসব করেই সবাই পদ নিতে চায়। আমি নিশ্চিত আবরার হত্যার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা ও সাংবাদিকতার কারণে গত দেড়যুগ ধরে ঘটনাগুলো দেখছি। মিলিয়ে দেখেন ষাটের দশকে ক্লাসের সেরা ছেলেটাকে, ভালো বিতর্ক বা খেলাধুলা ছেলেটাকে যার জনপ্রিয়তা বেশি তাকে দলগুলো টেনে নিত, আর এখন? যার যতো মাস্তানি, ধান্দা তার ততো বড় পদ। ফলে মেধাবীদের বদলে বখাটেরা রাজনীতিতে এখন উন্নতি করে। বড় বড় পদ পায়।
আমি আবারও বলছি, আবরার হত্যার সবচেয়ে বড় খুনী ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সেক্রেটারি। তার চেয়েও বড় খুনী নোংরা এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
শুধু ছাত্রলীগ বলছি কেন ছাত্রদল, যুবলীগ, যুবদল, আওয়ামী লীগ বিএনপি সবখানেই একই অবস্থা। আপনি কতোটা সৎ, কতোটা মানবিক, পদ পাওয়ার জন্য এগুলো মূখ্য নয় বরং আপনার টাকা আছে কী না, আপনি মাস্তানি করতে পারেন কী না সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এসব কারণেই সম্রাটরা দলে আসে। টাকা কামায়। সব নেতারা তাদের কাছ থেকে টাকা খায়। পরে পদ দেয়। আর পুলিশ ধরলে বহিস্কার করে বলে দল দায় নেবে না।
সমস্যার সমাধান কী? আমি মনে করি সেটাও রাজনীতিবিদদের হাতে। কাল থেকে নিয়ম বদলে ফেলুন খারাপ লোক নয়, সবচেয়ে সৎ, যোগ্য ও ভালো মানুষটাকে পদ দেবেন। অপরাধীদের সামনে টানবন না। তখন দেখবেন মাস্তানরা কোনঠাসা হয়ে যাবে।
আরেকটা কথা, দয়া কর কোন ঘটনা ঘটলেই বলবেন না সংগঠনের দায় নেই। বরং সমস্ত অপরাধের মূলে এই সংগঠন। ছাত্রলীগ বা যুবলীগের আজ যে সবচেয়ে বড় নেতা, কাল তার পদ সরিয়ে নেন, দেখবেন তার কোন দাম নেই। তাহলে তাঁর অপরাধের দায় কার?
আপনারা নেতারা যদি আসলেই পরিবর্তন চান, কাল থেকে একটা কাজ করেন, নানা অভিযোগে অভিযুক্ত আর অসৎ যতো লোক আছে, দল থেকে বের করে দিন। তারপর ভালো ছেলে বা মেয়েটাকে দলে টানেন, পদে বসান। রাজনৈতিক সংষ্কৃতিতে পরিবর্তন আনেন। তাহলেই আর আবরাররাও খুন হবে না। দেশটাও বেঁচে যাবে।
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত