পুঁজিবাদীদের কাছে কোনঠাসা ছাত্র-শিক্ষক
আজ ৫ অক্টোবর সারা বিশ্ব পালন করছে শিক্ষক দিবস। আমাদের দেশেও পালিত হচ্ছে। আমি একজন ছাত্র হয়ে আমার অতীতে ফেলা আসা নবম-দশম শ্রেনির দোহলপাড়া আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমার প্রিয় আইনুল হক স্যারের স্মৃতি ভেসে আসছে। শিক্ষকের কি মর্ম তা বুঝতে পেয়েছি স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানের দিন।
অঝোর চোখের জল ভেসে যাচ্ছিল বুক। স্যারদের প্রতি তাকালেই কান্নায় রোল পড়ে সবার মাঝে। স্যার সব সময় ন্যায়ের পক্ষে থাকতেন। যার কারণে স্কুলের মধ্যে তিনি প্রিয় শিক্ষক ছিলো আমার।কিন্তু আজকে শাসকগোষ্ঠী শিক্ষাকে নিয়ে গেছে পরিমাপের দাড়ি-পাল্লায়। শিক্ষা হয়েছে গেছে বাণিজ্যিক। বাজারের আলু পটলের মত শিক্ষা বিক্রয় হচ্ছে।
১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে, শিক্ষার নানা মুখি সংকট নিয়ে আজও ছাত্রদের রাজপথে থেকে খেয়ে না খেয়ে আন্দোলন করতে হয়। আর সেই আন্দোলনে পেটুয়া বাহিনীর রাবার ব্লুলেট টিয়ারগ্যাস খেতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষক দিবসে শিক্ষক সমাজের কিছু শিক্ষদের চরিত্র দেখে মনে হয়, তাদের শিক্ষকতা পেশা নয় শাসকগোষ্ঠী চাটুকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কথা শুনে মনে হয় আমরা একটু কূপমণ্ডূক শিক্ষায় আচন্ন। তিনি বলেন, লিঙ্গ নির্ধারনে মেয়েরাই দায়ি। বাহ! বেশ তিনি আমাদের আরও শিক্ষা দিলেন ৩০ ডিসেম্বর মত কিভাবে রাতে অন্ধকারে ভোট ডাকাতি করতে হয়।
সোনাগাজী মাদ্রাসার শিক্ষক অধ্যক্ষ সিরাজদৌল্লাহ কাজের মাধ্যমে প্রমান করিয়ে দিচ্ছে ‘নারী তুমি কত অত্যাচারিত’ পৃথিবীর এর চেয়ে ন্যাক্কার জনক ঘটনা আর কি হতে পারে। পরীক্ষারত অবস্থায় নিরাপদ নয় শিক্ষার্থীরা।
বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, তার আচরণ আমাদের ছাত্রসমাজের কাছে প্রকাশ পেয়েছে। একজন শিক্ষক কত বড় দুর্নীতিবাজ হতে পারে। সে পথে দেখতে পাচ্ছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী ভিসি। আপনাদের চরিত্র যদি লুটপাটকারী হয় শিক্ষার্থীদের চরিত্র কেমন হওয়া উচিত।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কি করলেন দেখছেন তিনিতো মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করলেন। ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান শুনার জন্য বাংলার মানুষ বুকের তাজা উৎসর্গ করেনি।
শাসকগোষ্ঠীর চাটুকারই তরুণ সমাজকে বিপদের মুখের ঠেলে দিচ্ছে। আর গুটি কয়েক শিক্ষক তাদের জ্ঞানের আলো দিচ্ছি সমাজ পাল্টাবার। তাঁরা পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন, গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন, সমাজ রক্ষার আন্দোলন, মৌলিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং শোষন মুক্তির সমাজতন্ত্রের আন্দোলন যাচ্ছে। যেমনি করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাবির শামসুজ্জোহা স্যারদের মত।
শিক্ষকতা বাংলাদেশে একটি অবহেলিত পরিণত হয়ে যাচ্ছে। এ দেশে অনেক শিক্ষক বেতন না পেয়ে বছরের পর বছর শিক্ষকতা করে যাচ্ছে সারা দেশে ৫ হাজার ২৪২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক নন- এমপিও। অর্থ্যাৎ তাঁরা বেতন পায় না। বাংলাদেশে শিক্ষকতা ছাড়া অন্য কোনো বেতনহীন পেশা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু এভাবেই এই শিক্ষকরা ৫ বছর থেকে ২০ বছর ধরে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১হাজার ৮২৭ ডলার, সেখানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক অবৈতনিক। এ ধরনের শ্রদ্ধেয় শিক্ষদের সম্মানিত বেকার শিক্ষক বললেও ভুল হবে না। তাই অতি শিগগিরই অবৈতনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। কয়েক লাখ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
শিক্ষক দিবসে আমার পাঠদানের প্রিয় শিক্ষক, রাজনৈতিক শিক্ষক সবাইকে আমার সংগ্রামী শুভেচ্ছা। আসুন বঞ্চনা বুকে পুষে না রেখে তা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জয়পুরহাট জেলা শাখা।