০৪ অক্টোবর ২০১৯, ২২:১৩

বশেমুরবিপ্রবি ভিসির বিভিন্ন সময়ের কিছু সুবচন

  © টিডিসি ফটো

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) পদত্যাগী ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বিভিন্ন সময় মজাদার আবার কখনো উদ্ধতপূর্ণ কথন আর দুর্নীতির জন্য গত মাসে তিনি ছিলেন ব্যাপক আলোচনায়। জাতীয় পত্র পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউবে কখনো ফোনালাপে ভিসির ধমকের সুরে কথা ও প্রছন্ন হুমকি মিডিয়ায় সুনামির মতো আছড়ে পড়তো। ভিসির বিভিন্ন সময়ে চমকপ্রদ কিছু মন্তব্য নিয়ে আজকের আয়োজন।

গত মাসের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ছয়জন শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্লাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বহিষ্কার করে ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। এরপরে শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবকদের উপাচার্যের কার্যালয়ে ডেকে এনে ভিসি নাসির অকথ্য ভাষায় কথা শোনায় এবং অপমান করে। সেই কথোপকথনের একটি অডিও কিছুদিন আগে ফাঁস হয়।

ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায় ভিসি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘জানোয়ারদের কথা শুনলে মরা মানুষ তাজা হয়ে যায়। তোদের বাপরা আর মায়েরা চালাক এই ইউনিভার্সিটি। আমি ছেড়ে দিয়ে চলে যাই। তোর চৌদ্দ পুরুষ ধরে সার্থক আমি কয়টা ছিট বাড়াইছি দেখে তোরা চান্স পাইছিস। কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে ভালো? কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে ভালো চলে।’

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? পত্রিকায় মন্তব্য প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য এই প্রশ্নটি ফেসবুকে লিখেছিলেন বশেমুরবিপ্রবির আইন বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া। এতে ক্ষেপে যান ভিসি। তিনি ওই ছাত্রীকে শোনান কুরুচিপূর্ণ কথা। ফোনে ওই ছাত্রীকে ভিসি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তা তোর আব্বার কাছে শুনিস! গেছে কোনো দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে? এটা (ল ডিপার্টমেন্ট) আমি খুলছিলাম বলেই তো তোর চান্স হইছে, নইলে তুই রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলে-মেয়ে। তিন দিনের বাছুর তুই আবার জানতে চাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?'

অধিকাংশ সময়ে ছাত্রীদের অপমান করে পদত্যাগী ভিসি নাসির কথা বলতেন। তারও কিছু প্রমাণ অডিওতে পাওয়া যায়। ক্লাসের মেধাবী শিক্ষার্থীকে তিনি বলছেন, ‘তুই মেধাবী, কে কি করলো না করলো তা নিয়ে তোর মাথা ব্যথা কেন? এই জানোয়ার তুই তো কাজের মেয়ে, তুই তো মেয়ে মানুষ, ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেললেই পারতিস। আমার এমনিতেই রাগ বেশি। তোদের দেখে আমার রাগ আরও বাড়তেছে। তোরা জন্ম নিছিস কাদের ঘরে? তোর বাপদের ভিসি বানা।’

বিশ্ববিদ্যালয়কে কিন্ডারগার্টেন বলায় এক শিক্ষার্থীকে ভিসি বলছেন, ‘এ জানোয়ার তোরে তো লাথি দিয়ে বের করে দিতে ইচ্ছা করছে। তোর আব্বার মনে হয় এটা কিন্ডারগার্টেন? তোর আব্বার থেকে ছোট করে দেখালে একটু খুশি হইস তাই না? লাথি দিয়ে তোরে ফেলে দিবো, এ জানোয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয় কিসের কিন্ডারগার্টেন? ভিসি ওর বাপের চেয়ে ছোট এজন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কিন্ডারগার্টেন বলছে।’

এরপর এক শিক্ষার্থীকে তিনি বলছেন, ‘তোর বাপ নাকি কলেজের শিক্ষক তারে বাপ বলে ডাকার ইচ্ছা করে তোর? তোর বাপরে বাপ বলে ডাকিস? পছন্দ হয়? তোর বাপের চেয়ে ভালো বাপ আছে না?

একজন অভিভাবককে ভিসি বলেন, ‘একটা বাজে ছেলের মা, আপনি কোন কথা বলবেন না।’ আমি এখানকার ভিসি কিন্তু আমার মূল সরকারি চাকরি তো ময়মনসিংহে। আমারে এই সরকার আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বানিয়ে দিবে, নয়তো বিদেশে পাঠিয়ে রাষ্ট্রদূত করে দিবে, নয়তো মন্ত্রী করে দিবে। আমারে তো আর সরকার মুদির দোকান দিয়ে বসিয়ে দিবে না। ভদ্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছি তো এজন্য তোরা কিছু ঠিক পাস না।’

প্রাচীন গ্রীসে সক্রেটিসের সময় থেকে আজকের এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনেক পেশা পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। অনেক নতুন পেশার উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকতা টিকে আছে তার সম্মানের জায়গায়। কিন্তু কিছু শিক্ষকরূপী অমানুষ আর দুর্জনের কারণে এই মহৎ পেশাটি বারবার কলুষিত হয়েছে। যার ছিটেফোঁটা লাগে নিরীহ নিষ্কলুষ তামাম শিক্ষক সমাজের ওপর।

শিক্ষক হতে চাইলে নিজেকে গড়তে হবে একজন আদর্শবান, মানবিক মানুষ হিসেবে। যেটির আজ বড্ড অভাব। যেকারণে বাংলাদেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মানুষ গড়ার কারিগরদের এহেন দুরবস্থা।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক