ডিজিটাল বিপ্লব: অভিশাপ বনাম আশীর্বাদ
ধ্বংস সৃষ্টির লক্ষ্যে, নাকি সৃষ্টি ধ্বংসের লক্ষ্যে— এ বিতর্ক আদিকালের। এখানে কার্যকারণ নির্ণয় দরূহ ব্যাপার। তবে বিপ্লবের অনুসারীরা মনেপ্রাণেই বিশ্বাস করেন, বিপ্লব নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তথ্য-প্রযুক্তির অবারিত, অকল্পনীয় আর সর্বব্যাপী অপরিহার্যতার দরূণ অর্থনৈতিক, সামাজিক আর রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আসন্ন (অনেকক্ষেত্রে সংগঠিত) ডিজিটাল-বিপ্পব যাকে, অনেকেই ‘চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব’ হিসেবে দেখছেন।
সারা বিশ্বব্যাপী কিছু প্রত্যাশা আর উদ্বেগকে পাশাপাশা দাঁড় করিয়েছে। এটা সব সময়ই হয়ে থাকে— প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আর উদ্ভাবন শ্রম বাজারে কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলে; যেমন- কিছু পেশার বিলুপ্তিতে ওই পেশায় নিয়োজিত লোকদের স্থায়ী কর্মহীনতা। একই সাথে এটি প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন নতুন কর্ম দ্বারা অন্যভাবে প্রতিস্থাপনও করে থাকে।
আমেরিকার কথাই ধরা যাক। উনিশ শতকের শুরুর দিকে আমেরিকার শতকরা ৯০ ভাগ শ্রমশক্তি কৃষিতে নিয়োজিত থাকেলেও প্রযুক্তিগত প্রভাবে বর্তমানে সেখানে মাত্র দুই ভাগ নিয়োজিত আছে। এই নাটকীয় এবং অবিশ্বাস্য পরিবর্তনটা খুব ধীরে ধীরে ও স্বচ্ছন্দভাবে হয়েছে। যাতে কোন প্রকার সামাজিক ভাঙ্গন ধরেনি। হাল আমলের অ্যাপসভিত্তিক অর্থনীতিও ‘নতুন কর্ম-বাস্তুসংস্থান’ তৈরিতে নজির স্থাপন করেছে। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ২০০৮ সালে যখন আইফোনের জন্য বাইরের ডেভেলপারদের তৈরি এপ্লিকেশন অনুমোদন দেন ঠিক তখনই এটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে বৈশ্বিক এই অ্যাপসভিত্তিক এই অর্থনীতি ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক রাজস্ব আদায় করে যা শতবর্ষী চলচ্চিত্র শিল্পের চেয়েও বেশি।
ডিজিটাল বিপ্লবের পরিণাম অতীত থেকে ভিন্নতর কেন হবে মর্মে— প্রযুক্তি-প্রত্যাশীরা প্রশ্ন রাখেন। তারা স্বীকার করেন, প্রযুক্তির এই দ্রুত আর ক্ষিপ্র অগ্রসরে আর্থ-সামাজিক শৃঙ্খল কিছুটা ব্যাহত হলেও বেলা শেষে উৎপাদন বাড়িয়ে সম্পদ পরিবৃদ্ধি করেই ক্ষান্ত হবে। এর দরুন, অধিক পরিমাণ পণ্য ও সেবার চাহিদা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি নতুন ধারার কর্মেরও সৃষ্টি হবে। বাঁচো কিংবা মরো— বিপ্লব মোকাবেলায় এটিই মূলমন্ত্র।
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বিপ্লবের ঢেউ আঁচ করতে পেরে দেশকে বিশ্ব প্রযুক্তি পরিমণ্ডলের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অর্থনীতির কোন খাত-উপখাত আর ডিজিটাল এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবমুক্ত নয়। কতটা টেকসই এটা অমূলক (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অবশ্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে) , তবে নতুন সেবা আর পণ্যের সৃষ্টি হয়েছে সেটা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণের অবকাশ রাখে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব।
লেখক: সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারাগঞ্জ, রংপুর।