ক্যারিয়ার ধ্বংস করে ছাত্ররাজনীতি নয়
আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি `ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় কিংবা দেশের যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য রাজনীতিকে মূখ্য হিসেবে নিয়ে ছাত্র রাজনীতি করা আর নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা সমান।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদক, আর ইউনিট শাখার সভাপতি-সম্পাদক ছাড়া বাকি পদ পেয়ে চাকরী না করে রাজনীতিতে পড়ে থাকা একটা অভিশাপ ছাড়া কিছুইনা!
বিশেষ করে ঢাবির ছেলে মেয়েরা ফুলটাইম ছাত্র রাজনীতি করে যখন সরকারি চাকরীর বয়স হারায় তখন তাদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার! ঢাবির ছাত্র ও ছাত্রনেতার সিল থাকার কারণে না করতে পারে নিম্নমানের কাজ, না পারে এসব পরিচয়ে উপরে উঠতে"!
কারণ ‘এদেশের রাজনীতিতে পরিবার কোটা, অঞ্চল কোটা, স্বজন কোটা, আমলা কোটা, ব্যবসায়ী কোটা,
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কোটা থাকলেও ছাত্রনেতাদের জন্য হাইকমান্ডের কাছে কোন কোটা নাই’ মেধার কোনো কোটা নাই।
তাই জাতীয় রাজনীতির বাজারে ঢাবির সাবেক ছাত্র, ছাত্রনেতা যেমন অশিক্ষিত ৮ম শ্রেণীর পাশ নেতাও তাই!!
দেখা যাবে ৮ম শ্রেণী পাশ ধনকুবের পদ পেলো, সাবেক ছাত্রনেতা চেয়ারই পেলোনা!
‘ঢাবির যে সকল ছাত্র ছাত্রী, হল, বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রে যে কোনো পর্যায়ে একটা পরিচয় নিয়ে সরকারি চাকরীতে যোগদান করেছে তাদের মতো সোনার ছেলে মেয়ে আর হতে পারেনা" তারায় জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন।’
কেননা যে কোনো প্রফেশনে গিয়েও রাজনীতি করা যায়। আমাদের সমসাময়িক যারা চাকরীতে চলে গেছে, ক্যাডার হয়েছে, তারা রাজনীতি এবং সাংবিধানিক সুযোগ সুবিধা সবই ভোগ করছে!
এদেশের কৃষকের পাসপোর্ট সবুজ, আমরা যারা ঢাবির সাবেক ছাত্রনেতা, চাকরি না করে রাজনীতিতে আছি আমাদের পাসপোর্টও সবুজ। আমাদের কোথাও আলাদা কোন মর্যাদা নাই!
আমার জীবনে একটা লক্ষ্য ছিলো আমি কখনও চাকরী করবো না! ছাত্ররাজনীতি শেষ করে জাতীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকবো, তাই কোনদিন চাকরীর জন্য এপ্লাইও করিনি। ২০১১ সালে অনার্স শেষ করেছি, ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসেও আমি বেকার! পরিবারই আমার শেষ আশ্রয়স্থল। এখন মনে হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরী করলেও একটা ফিক্সড চেয়ার থাকতো!
রাজনীতিতে ত্যাগিদের মূল্যায়ন করা হবে, এরচেয়ে ফালতু কথা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয়টি আর নাই! যারা এসব কথা বিশ্বাস করে ত্যাগি সেজে রাজনীতি করে তারা চরম বোকা। সরকারি দলে ত্যাগ বলতে কিছুই নাই! এগুলো সব মিডিয়া কাভারেজ আর ব্রেইনওয়াশ।
তবে এদেশে দেশপ্রেমিক ছাত্রনেতাদের দরকার আছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে কিছু নির্লোভ নেতাকর্মীর দরকার আছে।
কিন্তু সেটা নিজের ক্যারিয়ার ধবংস করে নয়। নিজেকে রাজনীতির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত করাও পরিবার, সমাজ, সর্বোপরি দেশের জন্য কাজ করা। সব হারিয়ে কোনো ছাত্র যেন নিজের জীবন, পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য যেন অভিশাপ না হয়।
সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাবি ছাত্রলীগ।