০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:১৫

বালিশ কাণ্ড ঢেকে দিল পর্দা

লেখক মো. আবু রায়হান

বালিশ, বই কেনা, পর্দা নিয়ে চারিদিকে চলছে তুমুল হৈচৈ। এ নিয়ে আমরা বসে থাকবো কেন?বালিশের সুন্দর বাংলা প্রতিশব্দ গুচ্ছ হলো উপাধান, শিরোধান। এদিকে শিমু গুনগুন করে গেয়ে যাচ্ছে -

এক বালিশে দুইটি মাথা
মিষ্টি করে কওনা কথা,

গুনগুন করে এখানেই থেমে গেল শিমু। এরমধ্যে রুমে স্বামী রাহাতের অাগমন।রাহাত বিনা অজুহাতে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে ওস্তাদ।
রাহাত তার স্ত্রী শিমুকে পেটানোর ইচ্ছা হয়েছে, কিন্তু শিমুর কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছে না। রাহাত অনেক ভেবে চিন্তেও শিমুর কোন দোষ না পেয়ে, বাইরে গিয়ে পায়চারি শুরু করে দিল। এরমধ্যে
রাহাত দেখে বাড়ির উঠানে একটি কুকুর শুয়ে আছে। সে এটা দেখে আর দেরি না করে দ্রুত ঘরে ঢুকে শিমুকে পেটাতে থাকে।

শিমু, আমারে মারতাছ ক্যান? আমি কি করছি?
রাহাত : ওই নবাবজাদি বাহিরে এতক্ষণ ধইরা কুত্তা শুইয়া রইছে, তুই বালিশ দেস নাই ক্যান??
এবার চিৎকার করে শিমু কাঁদতে থাকে। বলে হায়রে বালিশ তোর জন্য আমার আজ মাইর খেতে হলো।
রাহাত শিমুর কাছে এসে তার হাতটা ধরে বলল সরি।
শিমু হাতটা জোর করে ছেড়ে নিয়ে বলল ছাড়ো। আর ভণিতা করতে হবে না।
রাহাত বলল বালিশ নিয়ে খুব ইন্টারেস্টিং কাহিনী আছে। শুনবে?এবার শিমু বলল বলো।

রাহাত :ধন্যবাদ। বালিশ ইংরেজি পিলো শব্দ হতে এসেছে। মধ্যযুগের ইংলিশ পিলইউ থেকে, যার উৎস প্রাচীন ইংরেজি শব্দ পাইল (প্রাচীন জার্মান ফুলউইর সদৃশ্য) থেকে এবং ল্যাটিন পালভিনাস থেকে। দ্বাদশ শতাব্দীর আগে পিলো শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল বলে জানা যায়।
বিছানা, সোফা অথবা চেয়ারে ব্যবহৃত বালিশ কুশন নামে পরিচিত।
শিমু :হইছে এবার রাখো যাও গা কুত্তার মাথায় বালিশ দিয়ে এসো।
রাহাত : দূর! কুত্তা কি আছে তোমার কান্নার শব্দে পলাইছে না।
শিমু: তাইলে নিজের মাথায় বালিশ দিয়ে শুয়ে থাকো।
রাহাত:আমার ঘুম নেই। আরেকটু শোনো।

শিমু আচ্ছা বলো।
রাহাত এবার বালিশের ইতিহাস শুরু করল ৭০০০ অব্দে প্রাচীন মেসোপ্টেমিয়ায় বসবাসকারী লোকেরা প্রথম বালিশ ব্যবহার প্রচলন করেছিল।এই সময়ে কেবল ধনীরাই বালিশ ব্যবহার করতো। বালিশের সংখ্যা মর্যাদার প্রতীক ছিল,সুতরাং একজনের যতবেশি বালিশ থাকতো সে তত বেশি সমৃদ্ধশালী, ধনী বলে ধারণা করা হতো। ঘুমানোর সময় মানুষের চুল,মুখ,নাক এবং কান থেকে পোকামাকড়কে দূরে রাখতেও সেইসময় বালিশ ব্যবহৃত হতো।

শিমু: বেশ হয়েছে এবার রাখো।যাওগে আরো বালিশ আনো।
রাহাত: কেন?
শিমু: যত বালিশ তত সমৃদ্ধ না? আজ থেকে বালিশ খেয়ে থাকবে ভাত না।আজাইরা যতসব
রাহাত: আরে দূর আমরা তো দুজন মাত্র। কয়টা বালিশ লাগে?

শিমু: সাত সকালে আজ বালিশ নিয়ে লাগলে কেন?
রাহাত: আরো কাহিনী আছে তো।
শিমু: চুলায় ভাত বসানো। তোমার কাহিনী শুনলে পেট ভরবে না।
রাহাত: নাছোড়বান্দা, শুনিয়েই ছাড়বে। এবার শক্ত করে শিমুর হাত ধরে বলল। মজার কাহিনি ঘটছে বাংলাদেশে। বলে সকালের পত্রিকাটা নিয়ে পড়তে আরম্ভ করল।আসবাবপত্র ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র কেনা ও ফ্ল্যাটে তুলতে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে।

শিমু : তো? আদার বেপারী হয়ে জাহাজের খোঁজ নিয়ে কি লাভ?
রাহাত এবার খানিকটা উত্তেজিত হয়ে এজন্যই তো বাঙালির উন্নতি হয়না।
শিমু :এবার কিছুটা শান্ত গলায় বলল কি হইছে বলবা তো!
রাহাত: দিলে তো মুডটা নষ্ট করে।

শিমু :আচ্ছা এবার বলো।
রাহাত এবার গম্ভীরভাবে বলল ওখানে ৬হাজার টাকার এক বালিশ ফ্ল্যাটে তুলতে খরচ হয়েছে ৭৬০ টাকা!
শিমু: কি বলছো? সত্যি বলছো?হায়রে আমার দেশ। এদেশে বর্গী এলো কবে?
রাহাত : হুম আলবত সত্য।

শিমু : আচ্ছা এবার যাই।
রাহাত: যাও। বুঝছি তোমার জন্য নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি আনতে হবে। বালিশ মিষ্টি না খেলে তোমার মাথা খুলবে না।

শিমু: আমার মাথা খোলার প্রয়োজন নেই। তোমার মাথা খোলো। বলে বেরিয়ে গেল শিমু।কিছুক্ষণের মধ্যে শিমু হাতে দুটো পত্রিকা নিয়ে হাজির হলো। রাহাতের হাতে শিমু পত্রিকা দুটো ধরিয়ে দিয়ে ফের কিচেনে গেল।

রাহাত পত্রিকার শিরোনাম দেখে তো বিস্মিত একি জবরজং অবস্থা!শিমুও দেশের খবর এতোটাই রাখে? শিরোনামের পড়ে রাহাত এবার খবরের ভেতর ঢুকে পড়ল, স্বাস্থ্য অধিদফতরে (সার্জারির ছাত্র ও শিক্ষানবিশদের টেক্সট বই ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব সার্জারি) এক বইয়ের দাম সাড়ে ৮৫ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে।গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য এই বইয়ের ১০টি কপি কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বইটির বাজারমূল্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিটি বই কিনেছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা করে। সেই হিসাবে ১০ কপি বইয়ের মোট দাম পরেশোধ করা হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, বাজার দামের তুলনায় ৮ লাখ টাকা বেশি খরচ করে এ বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ পর্যন্ত রাহাত সংবাদটা পড়ে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। এভাবেই যে যেমনে পারে জনগণের টাকা লুটে পুটে খাচ্ছে। পত্রিকাটা পাশে রেখে বাম হাতে শিমুর দেওয়া অন্য পত্রিকাটা হাতে নিল রাহাত। ভালো কোন সংবাদের আশায়। এই পত্রিকায় চোখ বুলাতেই রাহাত অস্থির হয়ে গেল, শিরোনাম ছিল,'পর্দার দাম ৩৭ লাখ, অক্সিজেন জেনারেটরের দাম ৫ কোটি ২৭ লাখ '। রাহাতের এসময় তার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা বাবার কথা মনে পড়ে গেল।সে স্বাধীনতার অর্থ সে খুঁজতে লাগলো। এরমধ্যে চিৎকার করে শিমুকে ডাক দিল রাহাত।ওদের পাঁচ বছরের সংসারে রাহাতকে এমন অস্বাভাবিক কখনো মনে হয়নি। চিৎকার শুনে শিমু দ্রুত চলে এলো। রাহাতকে বড্ড অগোছালো এলোমেলো লাগছিল। এমনিতে ফর্সা রাহাতের মুখাবয়ব আজ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।


শিমু: কি হয়েছে তোমার শান্ত গলায় কিছুটা ভীত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
রাহাত তার হাতের পত্রিকা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে বলল, শিমু নো নিউজ ইজ গুড নিউজ। আজ থেকে বাসায় পত্রিকা বন্ধ।

শিমু:সুবোধ নারীর মতো মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলল আচ্ছা...।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক